সোনাবৌ
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,651 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05
গল্প লেখকঃ
ফরহাদ আকরাম
 (এপ্রিল – ২০১৮)
……………………
সেদিন রাতে ঝুমুরের ফোনের আবছা আলোয় ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রর। ঘড়িতে তিনটা বেজে বিশ। এতরাতে কার সাথে কথা বলছিল ঝুমুর? নাকি অনলাইনে চ্যাট বা কারও প্রেমময় মেসেজ! এসব ভাবতে ভাবতে বুকের হাহাকার আর শূন্যতা দিয়ে বিভৎস ভাবে চিৎকার করেছিল।
শুভ্র: এত রাতে কার লগে কথা বলছিলি তুই?
ঝুমুর তখন গভীর ঘুমে আচ্ছাদিত। শুভ্রর চিৎকার শুনে হতচকিতভাবে উঠে শুভ্রর কপালে হাত দিয়ে বলল.. : বাজে স্বপ্ন দেখেছো? পানি খাবে? চিন্তা করো না তো.. স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না।
শুভ্র রাগে ঝুমুরের গালে সেদিন তিন আঙুল বসিয়ে দিয়েছিলো সজোরে। কারণটা ঝুমুরের অজানায় ছিল। তাই প্রশ্ন না করেই সেদিন অঝোরে কেঁদে সকাল গড়িয়েছিল বেচারী। 
অনলাইনে প্রথম পরিচয় ঝুমুর আর শুভ্রর। আস্তে আস্তে কথা বলা। আপনি থেকে তুমিতে আসা। ভাললাগার বিস্ময়কর অনুভুতি তারপর ভালবাসা। দুই পরিবারের অমতেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ সেই ভালবাসার এক জোড়া কপোত-কপোতী। সেদিন হাতে হাতে পরশের আবীর ছুঁয়েছিল নীল আকাশটায়। কবিতার চোখের নীলকন্ঠি ছিল ঝুমুর আর শুভ্রফোটা বৃষ্টির ক্যানভাসেও ছিল শুভ্রশিশিরবিন্দু। গোলাপের পাপড়িগুচ্ছকে মাড়িয়ে ঝুমুর শুভ্রর ছোট্রকুটিরে এসেছিল সেদিন। ছোটছোট স্বপ্নগুলোকে একইসূত্রে বাঁধবে বলে। শুভ্র ঝুমুরকে বুকে টেনে সেদিন বলেছিল, সোনাবৌ!! তোমাকে দেওয়ার মত আমার তো কিছুই নাই। তবুও কি ভালবাসবে আমায়?
ঝুমুর একরাশ হাসি হেসে বলেছিলো, তুমি আছো তো আর কি লাগবে আমার। তবে হ্যা, আমাকে একজোড়া সোনার নুপুর গড়িয়ে দিতে হবে কিন্তু। আমার যে বড্ড শখ।
শুভ্রর ভালবাসার বিশ্বাস থেকে বলেছিলো, না ‘ দিবো না। তোমার পায়ে এনে পড়িয়ে দেবো সোনাবৌ। খুশিতে সেদিন রামধনুতে মেঘ ছেয়েছিল পুরো পৃথিবীটা জুড়ে। 
এভাবেই কেটে গেল তিনমাস। শুভ্রর অল্প বেতনে আর টিউশনিতে মাস পার করা কঠিন হয়ে গেছে। নাইট ডিউটি করলে ঝুমুর বাসায় একা থাকবে তাই সেটাও সম্ভব না। আবার সোনাবৌর আবদার ছিল সোনার নুপুরের। এতকিছু এতটাকা এসব দুশ্চিন্তায় জর্জরিত দিশেহারা প্রতিদিনই কুকড়ে যাচ্ছে সে। তার প্রতিদিনের নিকোটিনের ধোয়াটাও ঝুমুরকে জানান দিয়ে যায় সে ব্যর্থ। সেদিন ঝুমুর শুভ্রর কাধে হাত রেখে বলেছিলো : আমার ভালবাসার চারটি বিট সাহ্মী তুমি পারবে। আমার জন্য তোমাকে পারতেই হবে। ঝুমুরের অনুপ্রেরণায় রাতেও পুরোদমে কাজ করতে লাগলো শুভ্র।
এদিকে ঝুমুর একা একা বিষন্ন আর ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে অনলাইনের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়ে পড়ল। আকৃষ্টটাই এতটাই বেশী ভয়াবহ ছিল যে সে নিজেকেই ভুলে যেত। শুভ্রর চোখেও সেটা বিধতে লাগলো। প্রায়ই ঝগড়া আর চিৎকারে পরিবেশটা বেশ থমথমে থাকত। তবুও ঝুমুর তার নেশাটা কাটিয়ে উঠতে পারলো না। এদিকে শুভ্রর ভালবাসাটাও সন্দেহে রুপ নিতে লাগলো।  শুভ্রর বেতনটা বেশ বেড়েছিল। মাস শেষে কিছু টাকা নুপুর বানানোর জন্য রেখে দিত শুভ্র। নাইট ডিউটি আর করা লাগবে না। সারাক্ষণ দুষ্টুমিষ্টি আবদার করা যাবে।  ভেবেই যেন ভাল লাগতো শুভ্রর।
কিন্তু,ঝুমুর অনলাইন আসক্ত। এটা আস্তে আস্তে খুবই বিরক্তকর আর অসহনীয় হয়ে গেল শুভ্রর। মানসিক রোগীর মতো মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে লাগলো। শুভ্রর ভয়ংকর রুপে কখনও অভ্যস্ত ছিল না ঝুমুর। তবুও তার ভাললাগাকে আস্তে আস্তে বির্সজন দিতে লাগলো। একাকীত্ব অনুভব করতে লাগলো। তবুও শুভ্রর চাওয়াটাই তার ভাললাগা। কেননা,কথা দিয়েছিলো যে। কিন্তু,শুভ্রর রাগগুলোকে শুভ্র কখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। এখন রাতে জিপিসিমের মেসেজ আসলেও সন্দেহটা দ্বিগুণই বেড়ে যায় আর তার সাথে দাগ বসানো কিছু ফুফানো ব্যথা আর চাপা কষ্ট। সেদিনের গালের দাগটা খুব জোরে হয়তো বসেনি কিন্তু হৃদয়ের হার্টবিটের প্রতিটা শব্দটা সেদিন ভেঙে গিয়েছিলো করুন আর্তনাদে। ভালবাসার বেড়াজাল থমকে গিয়েছিল। জিতেছিলো মান আর অভিমানের সন্দেহের রেখাটি। শুভ্র সেদিন বুঝেও না বোঝার মত করে চলে গিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু একগুচ্ছ নীল গোলাপ আর মিষ্টি কিনে এনেছিলো কারণ তার পাগলীটা খুশি হবে ভেবে। সন্দেহটা দুরে রেখে সরি বলে আবারও শুরু করবে নতুন করে পথচলা। ভালবাসবে ঠিক আগের মত করে। বাসায় ঠুকতেই কিছুটা অবাক হল শুভ্র। বাসার দরজাটা খোলা ছিল। ভাবলো সোনাবৌটা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি ফিরে আসবো। ঘরে ঠুকতেই ফুলের পাপড়িগুলো ঝরে পড়লো শুভ্রর অজান্তেই। সামনের টেবিলে কাগজের নৌকা দিয়ে সাজানো আর সুন্দর একটা চকলেট কেক রাখা। মোমবাতিগুলো নিবুনিবু জ্বলছে। পাশে লেখা “মোমবাতি শেষ হওয়ার আগেই তুমি আসবে”এটাই আমার ভালবাসার পরীক্ষা। 
চোখের জলটা ধরে রাখতে পারিনি। কিন্তু,কাঁদিও নি শুভ্র। পাছে যদি পাগলীটা পিছন থেকে এসে হেসে বলে, ইস! বাবুসোনা! কাদঁছো!!  কিন্তু,কোথায় সে পাগলীটা। কোথায় মুখ লুকিয়ে বসে আছে আমার সোনাবৌটা। আজ ভালবাসার রং এ রাঙাবো আমার মিষ্টি বৌটাকে। পাশের রুমে যেতেই বুকটার ভেতর থেকে কে যেন প্রানটাকে কেড়ে নিয়ে গেল শুভ্রর।  দেখি!! সোনাবৌটা ফানের সাথে ঝুলে আছে আষ্টেপিষ্টে..!! কাজল টানা চোখগুলো কাজলসুদ্ধ বের হয়ে গেছে অনেকটা, জিহ্বাটা বুক পর্যন্ত স্পর্শ করেছে। গলার হাড়গুলো ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থায় ঝুলে আছে। খোলাচুলের সাথে দোল খেয়ে ঝুলে আছে ঝুমুরের দেহের প্রত্যেকটা অংশ!! সোনাবৌ! বিভৎস আর ভয়ংকার মূর্তটি দেখা কল্পনার বাইরে ছিল শুভ্রর। আনমনেই বলে উঠল,  এ যে আমার সোনাবৌ নয়!! আমার ঝুমুর আমাকে কথা দিয়েছিলো!! এটা ঝুমুর হতেই পারে না!! বলতে বলতে পকেট থেকে একপায়ের সোনার নুপুরটা বের করে বলে উঠলো, সোনাবৌ!! এই দেখো, তোমার সোনার নুপুর এনেছি যে..!! তোমার পায়ের নুপুরের শব্দে যে আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই সোনাবৌ!! তোমার চাওয়াটা পূরণ হল সোনাবৌ কিন্তু আমার চাওয়াটা পুরণ করবে কে? সোনাবৌ!! বলো, একবার বলো!! আমি তোমার মুখের কথার শুনতে চাই সোনাবৌ! ধীরে ধীরে চোখ বুজে ঝুমুরের পায়ে সোনার নুপুরটা পরিয়ে দিল শুভ্র। অবচেতন হল সবকিছু। নির্বাক অবরুদ্ধ ভালবাসা!!!!

সম্পর্কিত পোস্ট

শয়তানকে পরাজিত করুন –

শয়তানকে পরাজিত করুন –

কোন এক দাওয়াতে এক ভাবী গল্প করছিলেন যে, এক মহিলা যখন তার Husband রাগ হয় তখন তিনি আয়াতুল কুরসি পড়েন আর তার স্বামী বিড়াল হয়ে যান । তখন আর এক ভাবী বললেন," ভাবী - আয়াতুল কুরসি পড়লে উনার স্বামী বিড়াল হন না বরং ঐ মহিলার সাথের শয়তানটা পালিয়ে যায়” । ভাবীদের এই...

একজন মানুষের গল্প

একজন মানুষের গল্প

দুই টাকার আইসক্রিম, বই সামনে নিয়ে চিৎকার করে পড়া, কলম দিয়ে এক অক্ষর বারবার লিখে হাত ব্যাথা সহ্য করতে করতেই ছোটবেলা কাটিয়ে দেওয়া। একটু বড় হওয়ার পর ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া কোনো এক বট তলা। যেখানে বসে আড্ডা দিত কয়েকজন স্কুল পালানো...

অস্ফুট কান্না

অস্ফুট কান্না

লেখা: মোহসিনা বেগম , প্রচণ্ড শীত পড়েছে আজ। চারদিক কুয়াশা যেন চাদর বিছিয়ে রেখেছে। সকাল এগারোটা বেজে গেছে এখনও সূর্যের দেখা নেই। ছুটিতে কয়েকটা দিন গ্রামে থেকে আনন্দ করব কিন্তু প্রচণ্ড শীতে জমে যাচ্ছি। লেপের নীচ থেকে বের হতেই ইচ্ছে করছে না। ওদিকে মা কতক্ষণ ধরে ডেকেই...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *