গল্প
#শিল্পপতি অধ্যাপক বৃদ্ধাশ্রমের যাত্রী
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
রহিম মিয়া গামছাটি কাঁধ থেকে হাতে নিয়ে মুখ মুছতেছেন,মুখে মৃদু হাসি, যদিও বাড়ি থেকে ফেরার সময় দু’মুটো ভাত খেয়ে আসতে পারেননি।রাতের খাবার যা সামান্য আলুর বর্তা রয়েছিল তা খেয়ে ছেলে রমজান রিকশা নিয়ে চলে গেছে।হ্যাঁ রমজান রহিম মিয়ার একমাত্র ছেলে।মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে রিকশা চালাচ্ছে।রিকশার মালিকের পাওনা দিয়ে যা বাঁচে তাতেই কোন রকম দিনকাল চলে আর এতেই রহিম মিয়া সন্তুষ্ট।রহিম মিয়া পিরগঞ্জ বাজারের সেই কোণে দাড়িয়ে আছেন, যেখান থেকে দৈনিক আশপাশের গ্রামের লোকেরা কাজের লোক নিতে আসে।রহিম মিয়ার বয়স অনেক হলেও কাজে এখনো তিন যুবক হার মানবে।আজ বেলা অনেক হয়ে গেছে এখনো কেউ আসেনি,তাই একটু হতাশাবোধ করছেন যে, আজ যদি কেহ কাজে নিতে না আসে তাহলে আজকের দিনটি না খেয়ে কাটাতে হবে।বেলা যথই বাড়ছে রহিম মিয়ার দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে।এতক্ষণে কাজের লোক নেওয়ার নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে গিয়েছে।চিন্তিত মনে রহিম মিয়া বাজারের শেষের গলির একটি বটগাছের নিচে মাথায় হাত দিয়ে বসে একভিক্ষুকের দিকে থাকিয়ে আছেন।যে ভিক্ষুক এক ভদ্রলোকের নিকট গিয়ে দু’দিনের মধ্যে কিছুই খাইনি দুটা টাকা দিন বাবা বলতেই লোকটি টকা না দিয়ে গালমন্দ করতে লাগলো,অথচ এই লোকটি কিছুক্ষণ পূর্বে রেস্টুরেন্টের কাজের ছেলেকে একশত টাকা বখশিস দিতে দেখেছেন রহিম মিয়া।মন চাইতেছে রহিম মিয়ার এই ভিক্ষুককে কিছু খাবার দেওয়ার,কিন্তু নিজেই না খেয়ে আছেন, সাড়াটা দিন না খেয়ে থাকতেই হবে হয়তো।
ভাবতে থাকলেন রহিম মিয়া!হায়রে দুনিয়া তুমি কতইনা রহস্যময়, তোমাতে কত রকমের মানবের বিচরণ, কি বিচিত্রময় তুমি?সহসা রহিম মিয়ার ভাবনা কাটলো কাঁধে কারো হাতে চাপে,মুখ ফিরতেই দেখলেন অধ্যাপক রাহুল সিনহা।রহিম মিয়া চোখের জল মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলেন স্যার আপনি এখানে, ক্ষমা করবেন সাহেব অনেক দিন হলো আপনাকে দেখতে যেতে পারিনি।অধ্যাপক রাহুল সাহেব রহিম মিয়ার দু’কাঁধে দু’হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো সুরে বলতে লাগলেন,কিরে রহিম তুই আমাকে সাহেব বলছিস কেন?তুই ত আমার বাল্যকালের বন্ধু।রহিম মিয়া কাঁধের উপর থেকে হাত নামিয়ে বলতে লাগলেন,বাল্যকালের বন্ধু আর কি এখন আছে আর সেই বন্ধুত কি মানায় সাহেব ? আপনি একটি কলেজের অধ্যাপক,তিন সন্তানের মধ্যে মেয়ে আমেরিকাপ্রবাসী,বড় ছেলে কামান্ডার,ছোট ছেলেও অ৳স্ট্রেলিয়া প্রবাসী, আপনি একজন শিল্পপতি এবং উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদও।এই আমি একজন দিন মজুর,আপনাদের মতো শিল্পপতিদের গোলাম,শুধু আমি না আমার মতই যত দিন মজুর আর অসহায় আছে আমরা মানুষনা,সমাজে মানুষ রূপে বাসকারি এক প্রকার আবর্জনা,আপনাদের মতো শিল্পপতি বড় লোকদের চোখে।গায়ে ছেড়া কাপড়,ময়লার দূর্গন্ধ,আমাদেরকে পরিচিত বলতে লজ্জাবোধ হয় এ সমাজের। আর বন্ধুত্ব এটা কেমন কথা বলেন সাহেব।আমি ত আপনার চাকরিও করেছি । তখন অধ্যাপক রাহুল সাহেব বলতে লাগলেন, রহিম তুই কি বলিতেছিস? তুই আমায় ক্ষমা কর দোস্ত!সে দিন আমি অন্ধ ছিলাম আমি টাকা আর বড়ত্বের মোহে নিজের মনুষ্যত্ব বলি দিয়েছিলাম,বুঝে ছিলাম এই টাকা,বাড়ি,গাড়ি,বিলাসবহুল জীবনে আমার কি নেই।
জানিস দোস্ত আজ বুঝতেছি আমার কিছুই ছিলনা,এই শিল্প বানিজ্য কি আছে আমার? আমি সেদিন তোকে আর তোর ছেলেকে আমার অফিস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি,তুই বার বার বলেছিলে রাহুল আমি তোর দোস্ত রহিম,তুই আমাকে চিনতে পারছিসনা,আমি তখন যে সত্যিই অন্ধ ছিলাম,আমায় ক্ষমা কর দোস্ত।রহিম মিয়া চোখের জল মুছে কাঁদো সুরে বললেন, কেন কি হয়েছে কিছুই থাকবে না কেন,ছেলে মেয়েরা কোথায় আপনার? অধ্যাপক রহিম তখন মাটিতে বসে উচ্চ স্বরে কেঁদে বলতে লাগলেন,রহিম! সব আছে,শুধু এই আমি নেই,বড় মেয়ে আমেরিকায় এখন ব্যবসা নিয়ে খুবই ব্যস্ত।৭-৮মাস পূর্বে ফোনে কথা হয়েছিল, শেষ কবে ছোট ছেলের সাথে কথা হয়েছে ঠিক মনে নেই।
বড় ছেলের বাসায় ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকে তাদের সাথেই ছিলাম এতোদিন, কিন্তু এরজন্য গত একটি বছর থেকে ছেলেটিকে আমার জন্য তার বউয়ের অনেক গাল মন্দ শুনতে হয়েছে,কতদিন যে ছেলের বউ আমার উপর হাত তুলেছে।তাদের ছোট একটা মেয়ে আছে তানিয়া। খুব খুব ভালো আমার নাতনিটি, অনেক ভালোবাসে আমায়।রহিম ওরা আমায় আরো অবহেলা করুক আরো গায়ে হাত তুলুক তবুও আমার দুঃখ ছিলনা,কিন্তু আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর, আমার এই তানিয়া সোনা বোনকে ছেড়ে চলে যেতে হবে দূরে,বহুদূরে। সেটা যে সহ্য হচ্ছে না,জানিনে আমি ছাড়া ওর কেমন যাবে কিন্তু থাকে ছাড়া আমি যে বন্দী সালায় এক মিনিট শান্তিতে থাকতে পারবোনা। রহিম অনেক বললাম কী হবে এসব বলে,তুই সুখি অনেক সুখি।দোস্ত তোকে অনেক অপমান করেছি ক্ষমা করিস,জানিনা মরণের পূর্বে আর তোর সাথে দেখা হবে কী? রহিম হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল,বলল তুই বন্ধ করবি! কেন দেখা হবে না রোজ এসে তোর বাসায় আমি খুঁজ নিবো দুস্ত, তুইও আমায় ক্ষমা কর,কতদিন তোকে দেখতে যেথে পারিনি, কীভাবে যাই তুইও বল,একদিন যদি কাজে না যাই উপোস থাকতে হয়রে আমার পরিবারকে,তুই সেদিন কাজ না দেওয়ায় পরদিন থেকে ছেলেটি রিকশা চালিয়ে যাচ্ছে,তাতে কি আর চলে?যাই হোক দুস্ত আজ থেকে প্রতি রাতে না হয় একবার বাসায় গিয়ে তোকে দেখে আসবো,তোর সাথে গল্প করবো।দোস্ত চিন্তা করিসনে সব ঠিক হয়ে যাবে।ওরা একসময় ওদের ভুল বুঝতে পারবে।অধ্যাপক রাহুল রহিম মিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে বলতে লাগলেন, নারে দোস্ত তুই কোথায় যাবে কার জন্যই যাবে। গত রাতে যে বড় ছেলে জানিয়ে দিয়েছে আমার জন্য তার বউ বাচ্চারা বাসায় শান্তিতে ঘুমাতে পারেনা,ঠিক ভাবে থাকতেই পারছে না, আমার রুমের দূর্গন্ধে নাকি সমস্ত বাসা দূর্গন্ধময় হয়ে পরে,আমার বোঝা আর সে বহন করতে পারবে না।রহিম! আমি আমার সন্তানের বোঝা হয়ে গেলাম, বলে আরো উচ্চ আওয়াজে কেঁদে বলতে লাগেন,জানিস!রাতে ছেলেটা বলে দিয়েছে আজ বিকেলেই নাকি কোন এক বিদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে আমায়।রহিম দোস্ত যাইরে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে নয়নের দুফোঁটা নোনাজল দোস্ত রহিমের কাঁধে ফেলে চলে গেলেন অধ্যাপক রাহুল, আর রহিম মিয়া ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পথের দিকে চেয়ে আছেন, অন্তর গহীনে একটি কথা ভেসে উঠলো,শিল্পপতি অধ্যাপক বৃদ্ধাশ্রমের যাত্রী ।
বর্তা-ভর্তা
রিকশা-রিক্সা
দাড়িয়ে-দাঁড়িয়ে
যথই-যতই
থাকিয়ে-তাকিয়ে
টকা-টাকা
সাড়াটা- সারাটা
ত- তো
অস্ট্রেলিয়া এইভাবে হবে
মতো-মত
মানুষনা-মানুষ না
ছিলনা-ছিল না
থাকে-তাকে
কী-কি
দুস্ত-দোস্ত
যেথে-যেতে
না শব্দটা আসলে সব সময় অলেদা বসে, কিন্তু লেখক বেশিরভাগ শব্দের সাথে না যোগ করে ফেলেছে। আর যাইহোক গল্পটা অনেক ভালো ছিল, পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। আজকাল মানুষ টাকার পাহাড়ের জন্য আর মানুষ চিনে না, টাকাই যেন তাঁর কাছে সব। গল্পটা শিক্ষণীয়। তবে আরেকটু লিখলে ভালো হত। আর উনার নাতনীর কি হয়েছিল সেটা উল্লেখ করে দেওয়ার দরকার ছিল। শুভ কামনা রইল।
বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে এ যাবৎ অনেক লেখা পড়েছি। সবাই এ বিষয়টা ভালো করে ফুঁটিয়ে তুলতে পারে না। আপনি ভালোভাবেই শুরু করেছিলেন কিন্তু বড্ড তাড়াহুরায় শেষ করলেন মনে হলো। শুভকামনা আপনার জন্য।
অনেক ভালো লিখেছেন।
থিমটাও ভালো ছিলো।তবে আরেকটু গুছিয়ে সুন্দরভাবে বর্ণনা করতে পারতেন।
টাকার জন্য আজকাল মানুষ সব করতে পারে।
সকল খারাপ কাজকে তুচ্ছ মনে করে।
বানানে ভুল আছে।শুধরে নিবেন।
শুভ কামনা রইলো।
আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রসঙ্গে কিছু কথা :
গল্পটা তড়িঘড়ি করে শেষ না করলেও চলতো। লেখনী আরও ভালো হওয়া প্রয়োজন। চলিত ও আঞ্চলিক ভাষার কিছুটা মিশ্রণ ঘটেছে যা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। এক লাইন শেষ হলে আর এক লাইনে যাওয়ার আগে (।) এর পর স্পেস ব্যবহার করতে হয় যা করা হয়নি।
কি / কী এর ব্যবহার ঠিক নেই। যেমন –
রহিম তুই কি বলতেছিস? – রহিম তুই কী বলছিস?
কি বিচিত্রময় তুমি? – কী বিচিত্রময় তুমি!
না যুক্ত হয়ে বসে না। যেমন –
মানুষনা – মানুষ না
কতইনা – কতই না
অন্যান্য ভুল :
দু’মুটো – দু’মুঠো
বর্তা – ভর্তা
রিকশা – রিক্সা
বাঁচে – বাচে
কোন – কোনো
দাড়িয়ে – দাঁড়িয়ে
হতাশাবোধ – হতাশবোধ
যদি কেহ – যদি কেউ
যথই – যতোই
একভুক্ষুকের – এক ভুক্ষুকের
থাকিয়ে – তাকিয়ে
টকা – টাকা
সাড়াটা দিন – সারাটা দিন
কারো হাত চাপে – কারো হাতের চাপে
কন্ঠে – কণ্ঠে
তুই ত – তুই তো
আমেরিকাপ্রবাসী – আমেরিকা প্রবাসী
কামান্ডার – কমাণ্ডার
এরজন্য – এই জন্য
থাকে ছাড়া – তাকে ছাড়া
তুই কোথায় যাবে – তুই কোথায় যাবি
মুছতেছেন – মুছছেন
দূর্গন্ধ – দুর্গন্ধ
সে দিন – সেদিন
চাইতেছে – চাইছে
বিদ্ধাশ্রম – বৃদ্ধাশ্রম
বলেছিলে – বলেছিলি
খুঁজ – খোঁজ
দুস্ত – দোস্ত
যেথে – যেতে
যাই হোক – যাইহোক
বন্দী সালায় – বন্দীশালায়
চিহ্নের ব্যবহারে আরও সচেতন হতে হবে। গল্পে মাধুর্যতার অভাব। আগামীতে আশা করি বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রেখে লিখবেন। শুভ কামনা আপনার জন্য।