আনজুমান নিশি
বেসরকারি একটা চ্যানেলের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি আমি। বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন স্থানে গিয়ে রিপোর্ট লিখি।
একদিন বিকেলে হাটতে বের হলাম, চোখে পড়ল আগারগাঁও প্রবীণ নিবাস। কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম ভেতরে যাওয়ার। অতঃপর গেটম্যানের কাছে রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকে এত্ত লোক দেখে অবাকই হলাম। জানতে ইচ্ছে করল তাদের কেউ কি নেই নাকি সত্যিই অসহায়, এই সুন্দর খোলামেলা ভুবন ছেড়ে এখানে কেন তাদের আসতে হল। অপেক্ষা না করে প্রথমে এক বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলাম:
চাচী! অাপনার বাসা কোথায়? (যদিও তাকে চাচীর মত মনে হচ্ছিল না৷ কারন তাকে অনেক বৃদ্ধাই দেখাচ্ছিল)।
_বাসা যেখানেই হোক এখন এটাই আমার বাসা।
দুঃখিত, আমি আপনার স্বামী/পিতার আবাসস্থলের কথা বলছি। এ কথা বলার সাথে সাথে তাঁর চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে শুরু করল।
_দুঃখের সাথে বলতে লাগল, দুটো ছেলে আমার। ওদের বাবা আট ও পাঁচ বছর রেখে মারা যায়। বড্ড কষ্ট আমাদের জীবনে নেমে আসে। আমি তখনকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করছি, এতটুকু সার্টিফিকেট নিয়ে একটা কোম্পানিতে চাকরি করা শুরু করি। ছেলে দুটোকে মোটামুটি পড়াশোনা করিয়ে মানুষ বানাই৷ বড় ছেলের ব্যাবসার জন্য ভিটে মাটি বিক্রি করে দিই। ছোট ছেলেও ভালো চাকরি করে। অতঃপর আমি কাজ করা ছেড়ে দেই। বড় ছেলে বিয়ে করে। কিন্তু ওর বউ আমাকে সহ্য করতে পারত না। রাসেলের কাছে আমার নামে অনেক মিথ্যা বানিয়ে বলত। একপর্যায়ে ওর বউ দু জনের একজনকে বেছে নিতে বলল, ছেলে আমার ওর বউকেই বেছে নিল। অসহায় হয়ে ছোট ছেলের কাছে যাই কিন্তু ছোট ছেলে বলে দিল, তোমার বড় ছেলেকে ভিটে বিক্রি করে দিয়েছো যদি ও তোমাকে না খাওয়ায় আমিও খাওয়াবো না। একথা শোনার পর আর কথা বাড়ালাম না, বুকফাটা কষ্ট নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। বুড়ো মানুষ তাই কেউ কাজও দেয় না। শেষে তিন বছর ধরে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। কি করলাম ছেলেদের জন্য আর ওরা আমার জন্য কি করল। এখানে ও ভালোই আছি।
তবে তোমার কাছে আমার একটা শেষ ইচ্ছে আছে পূরণ করতে পারবে?
আমার সাধ্যমতো মতো চেষ্টা করব, বলুন?
_আমাকে শিশুপার্কে একটু নিয়ে যাবে। আসলে এখানে সবসময় দুঃখ কষ্টের মানুষ দেখতে দেখতে আর ভাল্লাগে না। বৃদ্ধাপার্কে তো আর আনন্দ নাই! হাসিখুশি আনন্দ মুখর জীবন আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
ওহ্ এই ইচ্ছা অবশ্যই আমি পূরণ করব, কিন্তু আজ আর পারব না। আমি সময় করে এসে অবশ্যই আমি আপনার ইচ্ছে পূরণ করব।
এই বলে আমি বাসায় চলে এলাম। অফিস থেকে তাঁর চারদিন পর ছুটি পেলাম। ওইদিন কোনো সময় নষ্ট করে ভোরেই বের হলাম, সাথে তার একটা নতুন কাপড় নিলাম। গেইটের ভেতরে ঢুকে বৃদ্ধাশ্রম কেমন যেন শান্ত শান্ত লাগছিল। কিছু না ভেবেই পরিচিত বৃদ্ধার রুমের দিক গেলাম। রুমের অন্যান্যরা আমাকে দেখে মুখ কালো করে ফেলল। আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, ওই চাচিটা কোথায়?_একজন উত্তর দিল, গতকাল দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।
এ কথা শোনার পর আমার মাথাটা চক্কর দিল, কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কান্নার শব্দ করতে পারছিলাম না কিন্তু বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। একজন বৃদ্ধা মানুষের শেষ ইচ্ছেটাও পূরণ করতে পারলাম না। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিল। অতঃপর নতুন কাপড়টা অন্য একজনকে দিয়ে দিলাম।
শেষের টুকু পড়ে খুব কষ্ট লাগল। ????
শেষের টুকু পড়ে খুব কষ্ট লাগল। ????
বেশ লিখেছেন
বেশ লিখেছেন
আপু! আপনি বরাবরের মতোই ভালো লিখেছেন।
আপু! বরাবরের মতোই ভালো লিখেছেন।
chokhe jol chole asce. onk valo laglo
আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের ভালোলাগা আমার লেখার উৎসাহ। ধন্যবাদ।
দারুণ লেখনী????
গল্পটা সত্যি ভাল লাগার মত।
গল্পটা পড়ে ভালো লাগলো, মনে হয় যেন বাস্তব
গল্প নাকি বাস্তব ????
গল্প নাকি বাস্তব!! অসাধারণ লিখেছেন ????
এটা গল্প নাকি বাস্তব! এতো সুন্দর আপনার গল্প লেখনী, সত্যিই অসাধারণ ????????
আপু গল্পটা পড়ে চোখের পানি চলে, মনে হলো যেন বাস্তবটাই তুলে ধরেছেন।
গল্পের শেষটুকু পড়ে নিজের অজান্তেই শিউরে উঠলাম, চোখে পানি চলে এল। আসলেই আমাদের বাবা মা আমাদের গায়ের রক্ত পানি করে মানুষ করে, তার বিনিময়ে আমরা তাঁদের কি দেই? গল্পের “আমি” তাঁর শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ করতে পারলেন না।
অনেক ভালো লিখেছেন। শুভ কামনা রইল।
হাটতে- হাঁটতে হবে।
আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের ভালোলাগা আমার লেখার উৎসাহ।
ধন্যবাদ।
আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের ভালো লাগাই আমার লেখার উৎসাহ। ধন্যবাদ,
দারুন একটা বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছেন। খুবই সুন্দর লাগলো…
ধন্যবাদ।
বাস্তব নাকি গল্প?
বুঝতেই পারিনি।
গল্পে বিভোর হয়েছিলাম।
শুভ কামনা রইল।
আলহামদুলিল্লাহ,, ধন্যবাদ। আপনাদের ভালো লাগাই আমার লেখার উৎসাহ।
ভালো লাগার মতো গল্প ????
ধন্যবাদ
অনেক সুন্দর একটা গল্প, দারুণ উপস্থাপন। একটা সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। লেখার ধাঁচ অনেক ভালো লেগেছে!
শুভকামনা রইল আপনার জন্য ????
আন্তরিকধন্যবাদ। আপনাদের ভালো লাগাই আমার লেখার উৎসাহ।