পুরুষতান্ত্রিক সমাজ
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 1,434 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

Writer: নূরজাহান ইসলাম জুলিয়া

বাসস্টপে অনেক ক্ষন দাড়িয়ে আছে লাবন্য উদ্দেশ্য ঢাকা, ৯ঃ৩০ এ বাস আসে সবাই বাসে উঠে লাবন্যর পাশের সিটে একটা ১৮-১৯ বছর বয়সি মেয়ে এতে লাবন্য অবশ্য খুশি হয় গল্প করে সময় পার করতে পারবে তাই, ৪-৫ ঘন্টা লাগবে পৌছতে এতক্ষন চুপ করে থাকা যায় নাকি।লাবন্য নিজে থেকেই মেয়েটাকে অনেক প্রশ্ন করে, মেয়েটা চুপ করে থাকে লাবন্য ভাবে হয়তো মন খারাপ তাই আর কিছু বলে না কিছুক্ষন পর লাবন্য জিজ্ঞেস করে আপু তোমার কি মন খারাপ, তাহোলে আমার সাথে গল্প কর দেখবে ভালো লাগবে কারন মন খুলে কথা বললে মন ভালো হয়(লাবন্য একটু মিশুক) ।এবার মেয়েটা বলা শুরু করলো, গল্প বলে একটা মলিন হাসি দেয় আমার জীবনটাই এখন একটা গল্প হয়ে গেছে।আমি কি তোমার জীবনের গল্পটা শুনতে পারি।মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করলো আমার নাম নাফিসা ২০১৭ সালে এইচ এস সি পরিক্ষা দেই রেজাল্ট দিতে দেড় মাস বাকি হঠাৎ বাবা অসুস্ত হয়ে পরে ঢাকা একটা হাসপাতালে ভর্তি করার পর জানতে পারি বাবার ক্যান্সার হইছে কথাটা শুনে পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল কি করবো ভেবে পাই নাই মায়ের গহনা, বাবার যত জমি জমা ছিলো সব বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা করলাম কিছু হলো না এক মাসের মাথায় বাবা মারা গেলো কান্নার জন্য চোখের জল ছিলনা…..পাশে দাড়ানোর মতো কেউ ছিল না। আমার ছোট দুই ভাই আমি আর মা আমাদের আশ্রয় স্থল ছিলো বাবার রেখে যাওয়া ঘর। চাচারা কেউ আমাদের দায়িত্ব নিতে চায় না। উলটা আমাকে বিয়ে দিতে চায় এতে করে নাকি আমাদের দেখা শোনা করার একজন মানুষ থাকবো। দেখতে সুন্দর ছিলাম তাই আর বেশি কষ্ট করতে হয় নাই ছেলে খোজার জন্য।
আমাদের পাশের গ্রামেই নাকি বাড়ি মাতবরের বাড়িতে কাজ করে।সবার জোরাজুরি আর পরিবারের কথা ভেবে রাজি হই।ছেলের বাড়ি থেকে ছেলে সহ নয় জন মানুষ আসে বিয়ের দিন কাজি যখন কাবিননামা পড়ে তখন ছেলের নাম শুনলাম সিরাজ। সব নিয়ম কানুন মেনে বিয়ে হয়ে গেলো কারন বাবা মা মারা গেলে নাকি ১৮ দিনের ভেতর বিয়ে দিতে পারবে তা নাহলে ১৮ মাসের ভেতর বিয়ে দিতে পারবে না।রাতে যখন সিরাজ আসে তাকে বলেছিলাম আমাকে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য কিছু দিন সময় দেন অনেক কাকুতি মিনতি করছি সে শুনে নাই।সেদিন সে আমাকে বৈধ ভাবে ধর্ষণ করেছিলো সেদিনই বুঝেছিলাম আমার কপালে সুখ নাই।সারা দিন কষ্টে কাটানোর পর একটা মেয়ে রাতে স্বামির বুকে মাথা রেখে ঘুমায় আর আমার রাতটাকে বিষাক্ত মনে হইতো।রোজ রোজ নেশা করে এসে আমাকে মারধর করতো খারাপ সবচেয়ে বেশি তখন লাগতো যখন সে আমার চুলের মুঠি ধরতো…….বাবা বলতো মেয়েদের নাকি লম্বা চুলে বেশি ভাল লাগে তাই চুল কোমর পর্যন্ত করছিলাম কিন্তু এই পিচাশের জন্য সেগুলো কেটে ফেলি। ওই দিকে মা আর ভাই ঠিক মতো খাইতে পায় না এই লোক তো সেইদিকে তাকায় নাই টাকা দেওয়া লাগবো তাই। আমারা একটু ভালো থাকবো এই আশায় বিয়ে করছি কিন্তু তা আর হইলো না ইদানীং নাকি ছোট ভাইটা চুরি করে তাই তারে গ্রাম ছারা করছে মায়ের বেচে থাকার ইচ্ছাটা মরে গেছে।আর এইদিকে সিরাজের অত্যাচার দিন দিন বাড়ছে..একদিন আছরের সময় সে আমারে টানতে টানতে মাতবরের কাছে নিয়া যায় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না অনেক মানুষ বসে আছে।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ সিরাজ বলতে শুরু করে কালকে অরে আমার বন্ধুর লগে এক বিছানে দেখছি বিশ্বাস না হইলে আমার আমার বন্ধুরে জিগায়া দেহেন। আমি কি বিলতে চাইলে সে আমারে বলে দুশ্চরিত্র মাইয়া লজ্জা সরম নাই আবার কথা কস। আমার গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হয় না কি বলে এই লোকার সবাই তার কথাই বিশ্বাস করলো আমারে কোন কথা বলার সুযোগ দেয় নায় তখন মনে হইছে মরে গেলেই বাঁচতাম।সে আমারে সবার সামনে তালাক দিয়া দেয়।
মাতবর আমাকে এক হাজার টাকা দিয়া কইলো কালকেই গ্রাম ছারবি । মনে মনে ভাবি এই সমাজ শুধু একজন পুরুষের কথাই বিশ্বাস করে।লোক জন আমারে দুশ্চরিত্র বলতে লাগলো আমার মা এই কথা শুনেই গলায় দড়ি দিছে আর কাগজে লিখে রাখছিলো আমারে যেন তার মুখ না দেখায় শেষ পর্যন্ত মায়ের মরা মুখটাও দেখতে পারলাম না।আজ যদি আমার বাবা থাকতো তাইলে আমার জীবনটাই অন্য রকম থাকতো।
সে আমার একটু কষ্ট সয্য করতে পারতো না অথচ আমি আজ দুঃখের সাগরে ভাসতাছি……. সমাজের চোখে আমি দুশ্চরিত্রা। মাত্র দেড় মাস সংসার করে বুঝতে পারলাম মেয়েদের কোন মুল্য নাই …..লাবন্যের চোখ দিয়ে পানি পরছে কি বলবে ভেবে পায় না। আপনি কোথায় যাচ্ছেন তাহলে,মেয়েটা একটা ঠুনকো হাসি দিয়ে বলল গন্তব্যহীন রাস্তার পথিক আমি।বাসটা মাওয়া বাসস্টপে থামলো মেয়েটা এক প্রকার দৌড়ে নেমে গেল, হয়তো অন্য বাস ধরতে হবে তাই। লাবন্যর বাবা এসেছে তাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাবাকে দেখেই লাবন্য জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর বলে বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা ।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *