লেখকঃ মাহমুদ হাসান (অভদ্র লেখক)
–
ভালো দেখে সাদা পাঞ্জাবি পরে বের হলাম। সাদিফ তাড়াহুড়া দিতেছে বের হওয়ার জন্য। আয়নার সামনে গিয়ে দেখলাম নিজেকে কেমন লাগে? চল্লিশ বছরেরি দেখায় নাকি একটু যুবক যুবক ভাব আছে? নাহ বরং আরো পঞ্চান্ন বছরের লাগতেছে। গাড়িতে চড়ে বসলাম। ত্রিশ মিনিটের মত গাড়ি চলার পর এয়ারপোর্টে গিয়ে পৌঁছলাম। আজ জাহিন দেশে ফিরবে। এই দিনটারি যেন অপেক্ষায় ছিলাম। আজ চোখে মুখে অনেকটা খুশি অনেকটা আশা প্রাপ্তির ছায়া। জাহিন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে আজ দেশে ফিরতেছে। ভাবলেই যেন কেমন ভালো লাগা খেলে যায়।
এয়ারপোর্টে এসে অপেক্ষা করতেছি জাহিন কবে আসবে। কিছুক্ষণ আগেই নাকি ওর বিমান ল্যান্ড করেছে।
তাও কেমন যানি লাগতেছে আবার সাদিফ কে জিজ্ঞেস করলাম, “কিরে সাদিফ? জাহিনের বিমান কি এখনো ল্যান্ড করেনাই?
“ভাইজান হুদাই টেনশন নিয়েন না তো, এই নিয়া ২০ বার জিজ্ঞাস করে ফেলছেন।”
আমি আর কিছু বললাম না, কিছুই পরেই জাহিন কে আসতে দেখলাম। এসেই জড়িয়ে ধরে কান্না। জাহিন বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে আর আমি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতেছি। এই কান্নাটা প্রাপ্তির কান্না,সুখের কান্না। জাহিন কে গাড়িতে করে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। এমন অবস্থায় ছিলাম যে জাহিনের সাথে কোনো কথাই বলা হয়নি। কেমন যেন থতমত হয়ে গেছিলাম। গ্লাসের দিকে বাহিরের দিকে থাকিয়ে আছি আর জাহিন এই সেই অনেক কিছুই গল্প করেই যাচ্ছে। কেমন যানি চোখ যুগল ঝাপসা হয়ে আসতেছে। আর কেমন যানি একটা স্মৃতি ভেতরে ঢেউ তুলার চেষ্টা করতেছে। ঢেউকে কিছুটা থামিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম। আর ততক্ষণে বাড়ি পৌঁছে গেছি।
.
আজ জাহিনের বিয়ে।আমিও সবার সাথে তাল মিলিয়ে এই সেই কাজ করার চেষ্টা করতেছি।জাহিনের শাশুর অর্থাৎ আমার তালই সাহেবকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করতেছি। মাঝেমাঝে সুযোগ পেলে দেওয়ালে লাগানো আয়নার সামনে ডু মারতেছি।ঐ দিন আয়নার সামনে যাওয়ার আগে শেষ কবে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আয়নাকে নিজের দর্শন দিয়েছিলাম মনে নেই। বাহ ভালোই স্মার্ট দেখাচ্ছে আজ। নিজেকে চব্বিশ বছরের সুপার স্টার মনে হচ্ছে। কি এক কাজে কনের হলের দিকে যেতে হলো। অপ্রত্যাশিত ভাবে হঠাৎ চোখের সামনে নিলাকে দেখলাম। কয়েকশো ভোল্টের শক যেন অনুভব হলো। ভাবা দূরে থাক কল্পইনাই করিনি এভাবে এত বছর পর এই বিয়েতে দেখবো। আসলে নিয়তি এটাকেই বলে? যখন যাকে দেখতে চাইবেন তাকে দেখতে পাবেন না? আর যখন যাকে দেখতে চাইবেন না তখনই তাকে দেখতে পাবেন। আজব নিয়ম দুনিয়ার। আজ নিলাকে বেশ সুন্দর লাগতেছে। গালে কৃত্রিম একটা তিল দিয়েছে। গালের পাশে তিল আমার খুব ভালো লাগে। অনেক দিন আগে কাওকে বলছিলাম যেন কৃত্রিম তিল লাগায়। আজো সেটা কেউ করেছে। তবে হয়ত বেখিয়ালে। আর সুন্দরইবা লাগবেনা কেনো অনেক বড় ঘরের বউ হবে হয়ত। কত আহ্লাদ আর বিলাসিতায় হয়ত জীবন চলতেছে।
পরে জানলাম জাহিনের আই.টি কম্পানির এক কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে এসেছে।
-কেমন আছেন?
-ভালোই, আপনি?
– হ্যা, বিয়ে করেছেন?
-হ্যা, এই যে জাহিন সাহেব, যার বিয়ে তার কম্পানিতে আমার স্বামী অনেক উপড়ের লেভেলে কাজ করে। ষাট হাজার টাকা বেতন। তুমি কিভাবে বিয়েতে? বিয়ে করেছো?
– নাহ সময় পাইনি। আর কনের দুঃসম্পর্কে মামা তাই বিয়েতে আসা। শুনে খুশি হলাম। তা এরেঞ্জ মেরেজ নাকি অন্য কিছু?
– ধরে নাও অন্য কিছুই।
-হুম ওকে, সন্তানদের ভালো করে পড়াশুনা করাবেন। না হলে বড় চাকরী পাবেনা, বিজি হয়ে যাবে ছুটো চাকরী নিয়ে।ওকে যাই কাজ আছে। বলেই তাড়াতাড়ি কেটে পরলাম।নিলাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না।
কেমন জানি ভাবনার গভীরে তলিয়ে যাচ্ছি। আমি তলিয়ে যাচ্ছি ভাবনার গভীরে।
.
আজ এস.এস.সি পরিক্ষার রিজাল্ট দিছে, প্লাস পাইছি। খুশিতে বাড়িতে দৌড়ে গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। জিজ্ঞেস করলাম “আম্মা বাপজান কই?” আম্মু কিছুটা মলিন মুখে বললো “তর বাপেতো এহনো কামে। শরীরডাও ভালা না তাও গেছে।”
“আচ্ছা চিন্তা কইরোনা চইলা আইবো। বাপজান আইলে কইও যেনো মিষ্টি আনে।”
তারপর আম্মু আর কিছু বললোনা। আমি আম্মুর নোকিয়া ১১১০ দিয়ে নিলাকে কল দিলাম। ” হেলো, অই আমি তো প্লাস পাইছি তুমি কি পাইছো?” আমি বললাম।
নিলা বললো,”একটুর জন্য প্লাস পাইনি। তা তুমি মিষ্টি খাওয়াইলানা?”
“খাওয়াবো খাওয়াবো, কাল দেখা করবো আসিও।”
রাতে জমানো কিছু টাকা একত্রিত করে রাখলাম। কাল নিলার সাথে দেখা করলে ওকে কিছু ত খাওয়াতে হবে। আব্বু ফিরতে প্রায় রাত হয়ে গেলো। দশ টার সময় কাশির শব্দ শুনে আমি আগেই দরজা খুলে বেড় হলাম দেখলাম আব্বু আসতেছে। জিজ্ঞাস করলাম “বাজান মিষ্টি এনেছো?”
আব্বু বললো, “নারে বাজান মালিক এহনো বেতনডা দেয় নাই, দু দিনের মধ্যেই দিয়ে দিবো তখন আনবো বাজান চিন্থা করিওনা।” আব্বু একটা অভিনয়ের হাসি হেসে নিজেকে আড়াল করতে চাইলো। আমিও একটা অভিনয়ের হাসি দিয়ে বললাম “সমস্যা নাই বাজান না আনলেও চলবো।”
এরপর আর মিষ্টির কথা ঘরে উঠছে বলে মনে হয়না। রাতে আব্বু ডেকে জিজ্ঞাস করলো “তা এহন কি করবা বাজান। ভর্তি টর্তি হওয়া লাগবে?
আমি বললাম “হ্যা বাজান। আমার অনেক ইচ্ছা কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়বো। শহরের একটা কলেজে ভর্তি হবো।”
আব্বু জিজ্ঞেস করলেন “তা কয় টাকা লাগবো?”
অন্ধকার মুখ নিয়ে বললাম “না মানে দশ-পনেরো হাজার সব মিলিয়ে খরচ হবে।”
মুহুর্তেই আব্বুর মুখে কেমন যেনো মেঘের ছায়া দেখতে পেলাম। শত চেষ্টা করে লুকাতে চাচ্ছেন।
“এত টাকা?”
আমি হাসি দিয়ে বললাম “আচ্ছা বাজান সমস্যা নাই পরে দেখা যাবে এইডা নিয়া ভাবিওনা।”
আব্বুর রুম থেকে বেড় হয়ে আসলাম। পেছনে দেখলাম জাহিন তাকিয়ে আছে। হাসি দিয়ে বললাম “কিরে পড়া শেষ, খেয়ে ধেয়ে ঘুমাস নাই কেন? যা ঘুমা।”
পরদিন শুনলাম বাবাকে জাহিন বলতেছে ওর সাইকেলের জন্য জমানো টাকা দিয়ে ভর্তি হতে। কি অদ্ভুত! মাত্র এইটে পড়ুয়া ছেলেটাও বাস্তবতা বুঝে গেছে। যেই ছেলে মাত্র দু দিন আগে সাইকেলের জন্য মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিলো। আমি না করলাম। জাহিন বললো “ভাইয়া পরে ত তুমি আমাকে অনেক সাইকেল কিনে দিতে পারবা এখন তুমি ভর্তি হও।” সেদিন ওর দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। ভর্তি হলাম নিলাও বড় আরেকটা কলেজে ভর্তি হইছে। কথা হত, মাঝেমাঝে দেখা হত। সংসারো ভালো চলতেছিলো মোটামুটি কিন্তু তার মধ্যেই এক ঝড় এসে গেলো। হঠাৎ বাবার মৃত্যু যেন আমাদের কে কেমন স্তব্ধ করে দিলো। যদিও আমি দু’একটা টিউশনি করতাম। তাতে কি আর চলে? সংসারের হাল ধরতে আম্মু বাসায় কাজ নিলো। না পারছিলাম মানতে না কিছু করতে। আম্মুর শরিরে অনেকদিন অনেক আঘাতের চিহ্ন দেখতাম জিজ্ঞাস করলে মা এই সেই নানা কথা বলে বুঝিয়ে দিতো আমিও বুঝে নিতাম। দরজা বন্ধ করে কান্না করতাম।
.
আজ তিন দিন থেকে আম্মুর জ্বর। হাল্কা পাতলা ঔষধ খাচ্ছেন তাতে হচ্ছেনা। এই দিকে তিন মাসের বেতন পাইনি কিছু বলতেও পারিনা। কারো কাছে কোনো টাকা চাইতেও পারিনা সবার কাছেই হাজার পাঁচেক করে ঋণ। দশ দিন পর বেতন পেয়ে দৌড়ে বাড়িতে গেলাম। ভাবলাম আজই আম্মুকে নিয়ে শহরে ডাক্তার দেখাতে যাবো। বাড়িতে গিয়ে দেখি কেউ নেই । জানতে পারলাম আম্মুর অবস্থা খারাপ তাই স্থানীয় হাস্পাতালে নেওয়া হইছে। শুনে দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি জাহিন চিৎকার করে কান্না করতেছে। আর বুঝতে বাকি নেই আমার দুনিয়া চিরদিনের জন্য অন্ধকার হয়ে গেছে।ঝাপসা চোখে জাহিনকে জড়িয়ে ধরলাম। ভেতরের চিৎকার আর বাহিরে আসলোনা। আর ইন্টার দিলাম না। একটা ফার্মেসিতে চাকরি পেয়েছি।৮ হাজারের মত মিলে।বেশ বিজি হয়ে গেলাম নিলাকেও ঠিক মত সময় দিতে পারিনা সেও কিছু বলেনা।
.
হঠাৎ নিলার ফোন। জরুরী দেখা করতে।
-হাসান একটা কথা বলবো, তুমি না আমাকে ঠিক মত সময় দেও? না আমাকে বুঝো? আমার মতে এই সম্পর্ক আর রাখা সম্ভাবনা। তুমি তোমার মত ভালো থাকো আমি আমার মত। মুখ দিয়ে কিছু বেড় হয়নি শুধু জিজ্ঞাস করছিলাম
-ভালো থাকবে?
-হ্যা
কিছু না বলে চলে আসলাম বুঝতে পারছিলাম চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে কিন্তু না আমার অনেক কাজ আছে অনেক কাজ। জাহিন কলেজে এডমিশন নিলো আর এই দিকে আমার জমানো টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করলাম। সফলতার হাতছানি পেয়েছি। ইন্টার শেষ স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশে পড়ার চান্স পায় জাহিন। আমি যেন আজ কিছুটা পরিশ্রান্ত।
.
বিয়ের সব কাজ শেষ। কনে নিয়ে বাসায় ফিরে রাত একটার দিকে ঘুমাতে গেলাম। কেমন জানি প্রশান্তির ঘুম পাচ্ছে আজ। অনেক চেষ্টা করে চোখ খুলে রাখতে পারছিনা। আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি যে ঘুম হয়ত আর ভাঙবেনা।
পূনর্জন্ম
জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...
সুন্দর লিখেছেন। প্রিয়তমার দিক থেকে ভালোবাসাটা অপূর্ণ রয়ে গেলেও ভ্রাতৃত্বের দিক থেকে ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। জীবনের সমীকরণ এমনই। যার সমাধান করতে গেলে কিছু পেতে হয়, কিছু হারাতে হয়। আর এই সমাধান যখনই মিলে, তখন মনে আসে শান্তি। তৃপ্তির ঘুম আসে।
ভালো লিখেছেন। তবে বানানে প্রচুর ভুল। বানানের প্রতি যত্নশীল হবেন। আর গল্পে আসতেছে,করতেছি এই শব্দগুলো আসছে, করছি দিলেই বেশি শোভনীয় হয়।
বছরেরি-বছরেরই।
যানি- জানি।
ডু- ঢুঁ।
শাশুর- শ্বশুর।
কল্পইনাই- কল্পনাই।
কম্পানিতে- কোম্পানিতে।
উপড়ের- উপরের।
রিজাল্ট- রেজাল্ট।
বেড়- বের।
খেয়ে-ধেয়ে- খেয়ে-দেয়ে।
সম্ভাবনা- সম্ভব না।