আসিফ নেওয়াজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
…………..
দুপুর গড়িয়ে তখনো বিকেল হয়নি। চারতলার ছাদ পেরিয়ে যে কৃষ্ণচূড়ার ডাল আকাশ ছোয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছে, তার ডালে বেশ কিছু ফুল এসেছে। হলুদ ফুল। একে নাকি রাধাচূড়া বলে। চণ্ডীদাশের রাধার রঙ নাকি ছিল দুধেআলতা; হলুদ ফুলকে কেন রাধাচূড়া বলা হয়, রহমত আলীর ক্ষুদ্র মস্তিস্কের সাধ্য হলনা এর উত্তর খোজার। নতুন এসেছে সে এই শহরে। সেবার নদীভাঙনে আবাদি জমি সব গেল। শুক্কুর মাতবরের কথায় এই অদ্ভুত শহরে রিক্সা চালাতে এসেছে সে। বউ বাচ্চাদের মুখে দুটো খাবার তো দিতে হবে নাকি?
শহরের মানুষগুলোকে বড্ড অদ্ভুত লাগে রহমত আলীর। এরা কেমন যেন বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচালে থাকে। এইতো সেদিন একজন বৃদ্ধকে মাত্র ৩০ টাকায় ধানমন্ডি থেকে মিরপুরে নিয়ে এসেছিল সে!! বড্ড বিশ্বাস করেছিল ষাটোর্ধ মানুষটিকে। তার বিশ্বাস ভেঙে সহস্র টুকরো হয়েছিল পাশের রিক্সাওয়ালাদের বিদ্রুপের হাসিতে। এই হাসিগুলোই হয়ত একটু একটু করে অবিশ্বাসী হতে শেখায় এই মিথ্যা কথার শহরের মানুষগুলোকে।
আবার সেদিন প্রথম বেতন পাওয়ার আনন্দে এক বখাটে চেহারার যুবক তাকে ৫০ টাকা বখশিশ দিয়েছিল। কুশ্রী চেহারার মাঝেও যে এতটা নির্মল হাসি লুকিয়ে থাকতে পারে, ছেলেটিকে না দেখলে বুঝতে পারত না রহমত আলী। খাসদিলে দোয়া করেছিল সেদিন সে ছেলেটার জন্য।
শহরটা কেমন যেন অদ্ভুত, তারচেয়ে অদ্ভুত মানুষগুলো। খুব চেনা চেনা লাগে, ঠিক পরমুহুরতে কেমন অচেনা হয়ে যায়! আর ভাবতে পারেনা রহমত আলি, মাথায় তালগোল পেকে যায় তার।
রাত বারটা বেজে গেছে। মনটা ফুরফুরে রহমতের, কাল সে বাড়ি যাবে। বউয়ের জন্য সবুজ শাড়ি, মেয়ের লাল ফিতা,চুড়ি আর ছেলের লাল জামা কিনতে হবে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কয়েকটা ছায়ামূর্তি ঘিরে ধরে তাকে।
কিছুক্ষণ পর নর্দমায় নিথর পড়ে থাকে রহমত আলি। বিস্ময়ে চোখ মুদতে যেন ভুলে গেছে সে। শুধু হাতের শক্ত মুঠোয় রক্তে ভিজে থাকে তিনটা পাঁচশ টাকার নোট! এই নোটগুলোই যে তার পরিবারের মুখের একচিলতে হাসি। আর সে হাসির জন্য শেষ মুহুরতেও নোটগুলো আগলে রাখতে চায় রহমত আলিরা!!
০ Comments