লেখা: শাহাদাত আবিন
মসজিদের মাইকে মোয়াজ্জেমের সুমধুর কণ্ঠের আজান ভেসে আসছে । আজান শুনেই ঘুম থেকে উঠে পড়ল সোহাগী । মায়ের সাথে একসাথে ফজরের নামাজ পড়ে নিলো। পূর্বাকাশে সূর্য উদিত হলো , অন্ধকার পেরিয়ে ধীরে ধীরে দিনের আলোর দেখা মিলল । সারিবদ্ধভাবে ছোট ছেলে মেয়েরা মক্তবে যাচ্ছে, সোহাগীও তাদের দলের একজন । বাবা মা খুব আদর করেই নাম রেখেছিল সোহাগী, অভাবের সংসার হলেও সুখের কমতি ছিল না । অভাবের সংসারে অভাব এসে হানা দেয় একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার যক্ষা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কারণে । মক্তব শেষ করে যখন অন্য ছেলে মেয়েরা চুল পরিপাটি করে কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, সোহাগী তখন অগুছালো চুল নিয়েই কাঁধে ছেঁড়া ব্যাগ ঝুলিয়ে হাতে বাটি নিয়ে মায়ের সাথেই রওনা দিলো
দু’ মুঠো আহারের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করতে । সারাদিন ঘুরে ঘুরে এই বাড়ি ওই বাড়ি থেকে চাল কুড়াতে কুড়াতে বিকেল হয়ে গেল । তাই বাড়ির দিকে রওনা দিলো সোহাগীও তার মা জোলেখা বেগম । স্কুলের পাশ দিয়ে হেঁটে আসছিলো তারা, স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় ছেলে মেয়েরা ছুটাছুটি করে বাড়িতে যাচ্ছে । তাদের দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সোহাগী, যেনো কতো ইচ্ছে সেই চাহনির ধুলোয় মিশে গেছে। হঠাৎ তার মায়ের কোলে থাকা ছোট্ট ভাই সোবহানকে দেখিয়ে বললো;
_মা, আমার ভাইয়েরেও স্কুলে পড়ামু!
কথাটা শুনার পর জোলেখা বেগম কয়েক সেকেন্ডের জন্য নীরব হয়ে গেলে, খানিক পরে চোখের কোণে জমা জল লুকিয়ে বললেন;
_ ভর্তি করামু নে, এখন বাইত্তে(বাড়িতে) চল। হাইন্ঝা(সন্ধ্যা) অইয়া যাইতেছে।
বাড়িতে গিয়ে ভাত রান্না করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তারা। এভাবেই দিন কাটে তাদের ।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হয়ে যায়, রাত পেরিয়ে দিন, দিন পেরিয়ে মাস, মাস পেরিয়ে বছর কেটে যায়।
দিন, মাস , বছরের মতোই ধীরে ধীরে সোহাগীর ছোট্ট ভাইটিও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেড়িয়ে এখন উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হবে । সোহাগীও যৌবনের সোনাঝরা সময় পেরিয়েছে। মেয়ে বড় হয়েছে তাই এখন আর ভিক্ষা করে না জোলেখা বেগম, মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পান তা দিয়েই সংসার চালাতে থাকেন।
সোহাগীর জন্য বিয়ের সম্বোধন এনেছে মোকাদ্দেস মেম্বার, ছেলে পাশের গ্রামের রিক্সাচালক চান মিয়া । সানাই বাজে নাই, হয়নি কোনো সাজ সজ্জা, তবুও বিয়ে সম্পন্ন হয় সোহাগীর । চোখভরা জল বিসর্জনের কান্না করে বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পা রাখে সোহাগী । বিয়ের কয়েক মাস পর সোহাগীর স্বামী চান মিয়া অধিক টাকা উপার্জনের জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ।
এদিকে মেয়েকে ছাড়া একা একা দিন কাটছে সোহাগীর মা জোলেখা বেগমের । ছেলে সোবহান পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করার জন্য ঢাকায় গেছে । যাওয়ার সময় বলে গেছে,
_মা, ঢাকায় গিয়ে আমি ছোটখাটো চাকরি খুঁজে নিবো । তুমি চিন্তা করো না, যদি পারি লেখাপড়া করবো , আর না পারলে কী করার আছে? তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না মা।
ছেলের টাকা পেয়ে এখন আর অন্যের বাড়িতে ভিক্ষা কিংবা কাজ করতে হয় না জোলেখা বেগমের । সোহাগী ও বেশ সুখে শান্তিতে আছে শ্বশুর বাড়িতে। বছর দেড়েক পর সোহাগীর কোলজুড়ে জন্ম নেয় ফুটফুটে কন্যা সন্তান। খবর শুনে মেয়ে আর নাতনিকে এক নজর দেখে আসে জোলেখা বেগম।
সোবহান বাড়িতে এসেছিলো কয়েক মাস আগে , মায়ের জন্য কেনা শাড়ি আর কিছু টাকা দিয়ে গেছে । কিন্তু এই কয়েক মাস কোনো খোঁজ খবর নেয়নি সোবহান, মায়ের জন্য টাকাও পাঠায়নি । তাই অনেকটা অনাহারে কাটছে জোলেখা বেগমের দিনকাল । সোহাগীর মেয়েও এক বছর বয়সী হয়ে গেছে । কিন্তু এখন আর সোহাগীর স্বামী আগের মতো বাড়ি আসে না , টাকাও তেমন পাঠায় না । বেশ কিছুদিন পর, সোহাগী শুনতে পায় তার স্বামী ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছে । কথাটা শোনার পর সোহাগী হতবাক হয়ে যায় । কী করবে কিছুই ভেবে পায়না? কারণ কোনো মেয়েই চায় না তার সতীন কিংবা তার স্বামীর অংশীদারিত্বের দাবিদার কেউ হোক, সে যতোই অভাবে থাকুক না কেন। শেষমেষ উপায় না পেয়ে , কোলের মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসে সোহাগী ।
কিন্তু বাড়ি এসে দেখে তার মা নেই । পুরনো ছনের ছাউনি দেওয়া তাদের ঘরটা অযত্নে হেলে পড়েছে। বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞেস করে খোঁজ নিয়ে দেখেন, বাজারের পাশেই পরিত্যক্ত একটা দোকানের নিচে জীর্ণশীর্ণ দেহ নিয়ে শুয়ে আছে তার মা । জানা যায়, তার ভাই সোবহান ঢাকায় পড়াশোনা করতে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে সেখানকার মেয়েকে । প্রথমে মায়ের খরচ দিলেও আস্তে আস্তে তা দেওয়া বন্ধ করে দেয় । কয়েকমাস আগে এসে তার মায়ের একমাত্র সম্বল বাপের ভিটা বিক্রি করে দেয় পাশের বাড়ির মাতব্বরের কাছে । তারা কিছুদিন আগে এসে তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন । ঘরে তেমন কিছুই ছিল না, তার উপর খরচ না দেওয়ায় এই বাড়ি ওই বাড়ি দু’ মুঠো করে বেলার ভাত অবেলায় খেয়েছেন । কিন্তু এভাবে আর কতদিন? লজ্জা করে আর কারো কাছে চাইতে যায় নাই । এরপর এই পরিত্যক্ত দোকানের নিচে আশ্রয় নেয় , কেউ দু’ মুঠো দিলে খায় আর না দিলে না খেয়েই কাটত জোলেখা বেগমের । মায়ের এই অবস্থা দেখার পর সোহাগীর দু’চোখ দিয়ে অনর্গল জল গড়িয়ে পড়তে লাগল । নাহ এটা কোনো চিৎকার মিশ্রিত কান্না নয় । এই কান্না মায়ের ব্যথার কান্না, যে মা ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করেছেন, নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে ভিক্ষা করে সন্তানদের বড় করেছেন, তার অনাহারে থাকার কান্না । বুকের ভেতর কেউ যেন ছুড়ি মেরে কলিজাটা টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে। সোহাগী ভাবতে পারে নাই তার আর মায়ের অসহায়ত্বের এই দিনের সম্মুখীন হতে হবে তাকে । পঞ্চাশোর্ধ বয়সী মা’কে ডাক দিল সোহাগী, ডাক শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো জোলেখা বেগম। যেন শুকনো পাতার মত শরীর, যেকোন সময় ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। মাকে গোসল করিয়ে, খাবার খেতে দেয় তারপর মাকে নিয়ে ভাগ্য বদলানোর আশায় ঢাকার পথে রওনা দেয় সোহাগী । আর যাওয়ার সময় বলে;
_আল্লাহ, আমার আর আমার মায়ের মতন আমার মাইয়্যাডারে তুমি অভাগী বানাইয়ো না ।
অসাধারণ! আমাদের দরিদ্র সমাজের করুণ জীবনের বাস্তবতারই একাংশ তুলে ধরলেন যেন। আমাদের চারপাশে তাকালেই প্রত্যহ এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সোহাগীর মতো হাজারো মেয়ে এভাবে জীবনযাপন করছে। মা’কে সইতে হচ্ছে নির্মম কষ্ট, ভাই যেন থেকেও পর, স্বামী দ্বিতীয় নারীর মাঝে ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায়। কে জানে হয়ত তার সন্তানের ভাগ্যও হয়ে যাবে তারই মত। এভাবে সমাজে জন্ম নিচ্ছে একের পর এক অভাগী।
চমৎকার ছিল। তবে লেখনশৈলী আমার কাছে কিছুটা সাধারণ বলে মনে হলো প্রিয়!
কিছু বানান ভুল ছিল।
যক্ষা- যক্ষ্মা।
অগুছালো- অগোছালো।
শুভ কামনা অজস্র।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। আসলে কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকার কারণে শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করে গল্পটা লেখা । যার কারনেই এতো সব ভুল । পরবর্তী প্রতিযোগিতায় সময় নিয়ে ভালো করে লেখা দিতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।
ভালোই লিখেছেন।
সমাজের কিছু গরীব পরিবারের কথা তুলে ধরেছেন।
কার কপালে কি আছে কেউ বলতে পারে না।
সোহাগীর মতো কতো শত মেয়ে আছে বাস্তবে এভাবেই দুঃখ কষ্ট সইতে হচ্ছে।
শুভ কামনা রইলো।
শুনেই-শোনেই(যেহেতু চলিত শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার হয়েছে ঘটনা উল্লেখ করতে)
বাবা মা-বাবা-মা
সোহগীও-সোহাগী ও
শুনার-শোনার
ছোট্ট-ছোট
শুনে-শোনে
পায়না-পায় না(না আলাদা বসে যেহেতু শব্দ)
যতোই-যতই
চাইতে-চায়তে(যেহেতু অন্যজনের কথা বলা হয়েছে)
শুনে-শোনে
বাহ্ বেশ ভালো লিখেছেন গল্প বলা যায়। সমাজের অনেক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পের মাঝে। তবে গল্পটা তেমন মুগ্ধ করতে পারেনি। সমাপ্তিটা অন্যভাবে করলে ভালো হতো। এই যেমন সোহাগী ঢাকাতে না গিয়ে নিজের এইখানে যেকোনো কাজ করে ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলল। কারণ ঢাকা এমন এক শহর যেখানে অশিক্ষিত নারীদের কাজ পাওয়া অনেক কঠিন। আর দেহ লোভনীয় পুরুষে চোখেও পড়ে সব হারিয়ে ফেলতে পারে। যাইহোক পড়ে ভালোই লেগেছে। বানানের দিকে আগামীতে খেয়াল রাখবেন আশা করি যেগুলো আগেরজন উল্লেখ করেছেন আর আমারগুলোও। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল
ভাই কিছু মনে করবেন না । আসলে যেই ভুলগুলো ধরিয়ে দিলেন, সেই ভুলগুলো গ্রুপে শুধরে নিয়ে এইরকম হয়েছে । এখন আসলে আমি দ্বিধায় আছি, আসলে কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল? কারণ পড়ালেখায় খারাপ ছাত্র ছিলাম।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য