গল্প লেখকঃ
জান্নাতুল বিপা
(এপ্রিল – ২০১৮)
……………
পিশাচগুলোর ফেলে রাখা অ্যালকোহলের খালি বোতলগুলোর দিকে চোখ রেখে আবিরাম চিংকার করে যাচ্ছি।
‘আমার পবিত্রতা নষ্ট করোনা। আমাকে বাঁচতে দাও। আমার পরিবার আমার জন্য বাঁচে।’
চোর কি আর ধর্মের কথা শোনে! না। এদের চোরের সাথে তুলনা ভুলই নয়; বরং অপরাধ! চোরের মাঝেও পবিত্রতা আছে।নিজেকে রক্ষা করার জন্য সবটুকু শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি। দু’জন ছিল বলেই তখনো লড়ে যেতে পারছিলাম পবিত্রতা রক্ষার যুদ্ধে। বাকি তিনজন গাড়িতে রয়ে গেছে। তারা গতকাল অন্য একটি বিন্তিকে উপভোগ করেছে। আজ এই দুইজনের পালা।
আর পেরে উঠছিলাম না এদের সাথে। ক্রমশই নেতিয়ে যাচ্ছিল পুরো শরীর। তখন চিংকার থামিয়ে দিয়েছি। দৃষ্টি শুধু ঐ অ্যালকোহলের খালি বোতলগুলোর দিকে আটকে আছে। আর একটু শক্তি ভিক্ষা চাইছি তখন পরমকরুণাময়ের কাছে। প্রায় নেতিয়ে যাওয়া শরীরটা নিয়েই সজোরে ধাক্কা দিলাম জামা ধরে টানতে থাকা নরপিশাচটাকে।
ব্যস! অ্যালকোহলের বোতলগুলো তখন আমার হাতে। কিছু ভাবার সময় নাতো পিশাচগুলোকে দিয়েছি আর না নিজেকে। বাকি শক্তিটুকু দিয়ে দু’হাতে দু’জনের মাথায় বোতল দু’টো ভেঙে, তার কিছু কাঁচ একজনের পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে পেছনে ছুটতে শুরু করি। এরপর আর কিছু মনে নেই।
পুলিশ অফিসার রানা বিন্তির পবিত্রতার স্বীকারোক্তি লেখা শেষ করে মোটা খাতাটি তার স্বস্থানে রাখতেই ভাজ করা একটি কাগজ দেখতে পেল। তার মনে হচ্ছে বিন্তি তার কাছ থেকে এই কাগজটি চেয়ে নিয়েছিল। হয়তো নিতে ভুলে গিয়েছে। নয়তো তাকেই লিখেছে।
রানা কাগজের ভাঁজ খুলে আবার চেয়ারে বসলো। আর বিন্তির লেখা পড়তে আরম্ভ করলঃ
চোখ খুলে নিজেকে একটি ঘরে আবিষ্কার করলাম। পাশের চেয়ারে বড়দার বয়সী একজন বসে আছে। ভয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠলাম। মীনু! গত এক বছরে এই দ্বিতীয়বার ভয়ে কেঁদেছি। তখন তিনি অভয় দিয়ে বললেন – এখন শরীর ঠিক আছে?
তিনি বাড়ি ফেরার পথে ভীড় ঠেলে ডাস্টবিনের পাশ থেকে আমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় তুলে আনেন। দেশটা এখনো পুরো বখে যায়নিরে মীনু। আনাচে কানাচে পিশাচগুলোর আড়ালে তাঁরা আছেন।
গত সন্ধাটা আমাকে তোর সেদিনের অনুভূতি বুঝিয়ে দিয়েছে। আমি তোর কষ্টটা এতদিন তোর মত অনুভব করতে পারিনি। আজ পারছি। তোদের তখনকার অনুভূতিটা আজ স্পষ্ট আমার কাছে।
এর আগে এভাবে কখনো পিশাচগুলোর আক্রমণাত্মক দৃষ্টি আমাকে কাবু করেনি। পশুগুলো মনে হয় জেনে গিয়েছিল আমার পরিচয়। তাই বাকিদের সরানোর ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছিল। যা আমরা ক্ষুণাক্ষরেও টের পাইনি। যখন পেয়েছি তখন কিছু করার ছিলনা। কুৎসিৎ প্রশংসার দাবীদার বটে!
মীনু!আমি এতদিন ভুল করিনি বোন। যে দেশের আইন নরপিশাচগুলোকে থামাতে পারেনা; বরং মীনুদের পাওয়া জলের মত সহজলভ্য যেখানে, সেখানে আইন নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়রে বোন। এখন থেকে শুধু তোকে হারানোর কষ্ট না বোন; তোর যে কষ্টটা সেদিন হয়েছিল সেই কষ্টটা নিয়েও আমি আবার শুরু করব নরপিশাচ ধ্বংসের অভিযান।
তুই খুশিতো বোন? এখনো কি তোর যন্ত্রণা হয়?
অফিসার রানার আজ আর বলতে ইচ্ছে করছেনা আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে, আমাদের উচিত অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দেয়া। আজ রানার বলতে ইচ্ছে করছে এমন আরো অনেক বিন্তি প্রয়োজন এই দেশে।
রানা তার ব্যক্তিগত ডায়েরীটি খুলে লিখতে শুরু করল – ” উহ্! সে কি গগন বিদারক চিৎকার! চিৎকারে তখন বোধ হয় প্রাণবন্ত অনড় গাছগুলো স্থিরতাকে অভিশাপ ভেবে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছিল। তাঁরা বোধ হয় খুব করে চাইছিল অন্তত আজ এই স্থিরতা ছুটি পাক।ছুটটে গিয়ে তাঁর পবিত্রতা বাঁচিয়ে নিজেকে গৌরবান্বিত করুক নিজের কাছে।
নরপিশাচগুলোরই কেবল কর্ণ অবধি পৌঁছায়নি সে চিৎকার। ”
তুমি পৌঁছে দিও বিন্তি। সে চিৎকার তাদের কানে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আজ আমার নয়। তোমার। তোমাদের।
০ Comments