মৃত্যু
,,,,,,,,
তাসফিয়া শারমিন
,,
ছয় মাস ধরে চেষ্টা করে চলেছি হাল ছেড়ে দেয়নি কুরআন শরীফ শিক্ষা নেওয়ার।এত কঠিন কেন জানিনা কুরআনের ভাষা? কিছুতেই মাথার মধ্যে ঢুকছে না। আমপারা পড়ার সময় কায়দাতে গিয়ে যখন কালমা পেলাম তখন শয়তানি বুদ্ধি চাপে মাথায়। মনের মধ্যে হয় কষ্ট করে আরবি না পড়ে নামাজ শিক্ষা বই দেখে বাংলা পড়ে মুখস্থ করে মক্তবে গিয়ে হুজুরকে পড়া দিবো। যেই ভাবা সেই কাজ। ১০ টাকা দিয়ে নামাজ শিক্ষা বই কিনে চার কালেমা গটগট করে মুখস্থ করে নিলাম।প্রতিদিন সকাল ৭ টায় গ্রামের অনেক ছোট বড় মেয়ে মসজিদের হুজুরের কাছে কুরআন শিখতে যায়।সকাল ৭ টায় চলে গেলাম মক্তবে।আজ খুশিখুশি লাগছে যে আমি আজ পড়া পারবো।হুজুর পড়া ধরতেই একটানা চার কালেমা বলে দিলাম।হুজুরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম হয়তো হুজুর বুঝে ফেলেছে। তখন হুজুর কিছু বললো না কিন্তু মক্তব থেকে বের হওয়ার পর হুজুর আমাকে ডাক দিলো। উনার কাছে যেতেই উনি বললেন “মা বেশি কিছু বলবো না।শুধু এটাই বলবো যে আমাকে ফাঁকি দিলেও আল্লাহকে ফাঁকি দিতে পারবেনা ”
খুব লজ্জা লাগছিলো তখন।সারাদিন মনের মধ্যে হুজুরের কথাটা ঘুরতে লাগলো। রাতে বিছানাতে শুয়ে ভাবলাম কাল আর মক্তবে যাবো না।কখন ঘুমিয়ে গেলাম জানিনা। ঘুমের মধ্যে কারো কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম কে কাঁদছে বুঝতে পারছিনা। চোখ খুলে তাকাতেই বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো।আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম বিছানাতে তাহলে মাঝ উঠানে এলাম কি করে।তাও অপরিচিত একটা বাড়ি। উঠানে অনেক লোকজন। সবার মুখের দিকে তাকালাম কাউকে চিনতে পারছিনা। অবাক হলাম ২ জন লোককে দেখে! উনাদের পোশাক সবার থেকে আলাদা।লম্বা আলখাল্লা আর দেখতে সাদা।উনাদের চেহারা থেকে যেন আলো ঠিকরে পরছে।লোকজনের সামনে তিনটা খাটিয়া রাখা। দুইটাতে কাফনে জড়ানো লাশ আর একটাতে কাফন বিছিয়ে রাখা এখনো লাশ নিয়ে আসেনি।আমি বোকার মত দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।তখনি কানে এলো মাইকিং করার আওয়াজ। এটা পাশেই একটা মসজিদের মাইক দিয়ে বলছে।”মৃত তিন ব্যক্তির জানাজা হবে আসরের নামাজ পর”
সাথে নাম ঘোষণা করছে।প্রথম দুইজনের নাম শুনে চিনতে পারলাম না কিন্তু তৃতীয় ব্যক্তির নাম আর তার বাবার নাম শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।বুকের মধ্যে যেন ঝড় শুরু হয়ে গেলো। এতো দেখছি আমার নাম বলছে আর আমার বাবার নাম।আমি আবার মরলাম কখন। পাশে তাকিয়ে দেখি একটা বারান্দায় আমার আপু, মা,চাচী, ফুফু আরো অচেনা অনেকেই কার যেন লাশ সামনে নিয়ে কাঁদছে। আমি ছুটে গেলাম মায়ের কাছে।আমাকে দেখেই মা আর আপু আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল। কেউ যদি মরে যায় তাহলে তার আত্মাকে তো দেখা যায়না। আমি যদি সত্যি মরে থাকি তাহলে আমার মা আর আপু সহ সবাই আমাকে কেন দেখতে পাচ্ছে? তাহলে বারান্দায় শুয়ানো ওটা কার লাশ?
“মা কি হয়েছে সবাই এমন করে কাঁদছো কেন আর ওটা কার লাশ? ”
“এইভাবে তুই আমাদের ছেড়ে কেন চলে গেলি মা? আমি মা হয়ে কি করে মেয়ের মৃত্যু মেনে নিবো। আল্লাহ কেন আমাকে মরণ করলো না?”
” উফ মা কি আবোল তাবোল বলছো।আমি তো তোমার সামনেই আছি আর মানুষ মরে গেলে কি ফিরে এসে আত্মীয়স্বজনের থেকে বিদায় নিতে আসে নাকি? ”
” তুই কেন বিশ্বাস করছিস না শারমিন যে তুই মারা গিয়েছিস। এখন এটাই নিয়ম হয়েছে যে কবর দেওয়ার আগপর্যন্ত মৃত ব্যক্তির আত্মাকে সবাই দেখতে পাবে। তোর দাফন হবে আসর পর।এখন তোর দেহকে গোসল করানো হবে”
আমি তো আপুর কথা শুনে হাসবো নাকি রাগবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
” আপু চুপ করো।এটা বলা মহা পাপ তুমি কি যাতা বলছো।মানুষের নিয়ম পাল্টাই কাজ পাল্টাই কিন্তু আল্লাহ কখনো তার দেওয়া মৃত্যুর নিয়ম পাল্টাইনি।আচ্ছা আপু উঠানে ওই দুইটা লাশ কার? ”
“আমি মিথ্যা বলছি না বোন।চল তুই দেখবি চল তোর মৃত দেহ”
আপু আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো লাশের কাছে।লাশের পাশে বসে থাকা ছোট চাচী আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেললো। আপু চাচীকে লাশের মুখের উপর থেকে কাপড় সরাতে বললেন। চাচী কাপড় সরাতেই আমি চিৎকার করে উঠি। এটা কি করে সম্ভব? আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি।এটা তো আমি।আমার দেহ পড়ে আছে নিচে।সেখান থেকে চলে আসছিলাম আর তখনি সেই সাদা আলখাল্লা পড়া লোক দুইটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আমার বুকের মধ্যে ধকধক করতে লাগলো। উনারা কি আমাকে নিয়ে যাবে?
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন? যেখানেই যান না কেন ঠিক আসরের সময় এখানে উপস্থিত হবেন।আপনার জানাজা আসর নামায পর হবে।”
আমাকে কথা গুলো বলেই উনারা অন্য দিকে চলে গেলো। আমার মাথা ধরে আসছিল।আমি এই টুকু সময়ের মধ্যে কি করবো?আগে আমার ফেসবুক আইডি গুলো ডিলিট করে দিতে হবে নয়তো আমার মৃত্যুর পর কেউ আমার আইডিতে ঢুকতে পারে। কিন্তু আমার ফোন কোথায়।রাতে তো মাথার পাশেই রেখেছিলাম। এখানে সব কিছু অচেনা লাগছে। আমাদের বাড়িটাও তো চিনতে পারছি না। না থাক আগে কুরআন তেলাওয়াত করি আর নামায পড়ি। তাহলে একটু নেকী পাবো যাতে কবরে শাস্তি কম হয়।কিন্তু কুরআন শরীফ কোথায়? আমার নিজের তো দুইটা কুরআন শরীফ আছে কিন্তু সব কিছু এমন লাগছে কেন? ওই তো সামনে একটা বাড়ি। ওইখানে গিয়ে একটা কুরআন শরীফ নিয়ে একটু পড়ি। এত দিন এত সময় অপচয় করে খুব ভুল করেছি।যদি তিন থেকে চার ঘন্টা ফেসবুকে আড্ডা না দিয়ে টিভি দেখে সময় নষ্ট না করে আল্লাহর ইবাদত করতাম তাহলে আজ এত চিন্তা করতে হতো না।
বাড়ির মধ্যে ঢুকে দেখি কেউ নেই। কিন্তু ঘরের দরজা খোলা। ঘরে ঢুকে আবার চমকে উঠলাম এইটা তো আমার নিজের ঘর।কিন্তু জিনিস গুলো চোখের সামনে কেমন ঝাপসা লাগছে।সারা ঘর তন্নতন্ন করে কুরআন শরীফ খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পাচ্ছিনা। খুব কান্না পাচ্ছে এখন।দৌড়ে বাথরুমে গেলাম গোসল করতে।মনেই ছিলনা ঋতুস্রাবের পর আমি এখনো পবিত্র হয়ে উঠিনি।এমন অবস্থায় কবরে গেলে তো আমাকে কবর মেনে নিবে না।একি কলে পানি নেই কেন? এবার ডুকরে কেঁদেই উঠলাম আবার ভাবলাম অনেক ক্ষুধা লেগেছে আর তো খেতে পারবোনা তার চেয়ে কিছু পেট পুড়ে খেয়ে আসি।সারা ঘর খুঁজে খাবার তো দূরের কথা রান্নার কোনো বাসনপত্র চোখে দেখলাম না।নাহ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না।মাথা যেন ছিঁড়ে পরছে ব্যথায়। চোখ বুজে আসছিলো। তবুও কেঁদেই চলেছি।চোখ খুলে দেখি আমার মাথায় পানি দিচ্ছে মা।কি হয়েছে কিছুই মনে পরছে না।অনেক মানুষ ভীড় করে ঘিরে আছে আমায়।সব মুখ চেনা।আস্তে আস্তে মনে হতে লাগলো আমি তো মরে গেছি।তাহলে কি আমাকে গোসল করানো হচ্ছে।আমার এক হাতে স্যালাইন চলছে আর এক হাত ধরে বসে আছে ডাক্তার। খুব ঘুম পাচ্ছিলো আমার।কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম জানিনা। চোখ খুলে দেখি মা আর দাদী পাশে বসে আছে।আমি উঠে বসলাম।
“মা কি হয়েছিল আমার? ”
মা কাঁদতে লাগলো
“জানিনা তোর কি হয়েছিল মা।সকালে অনেক দরজা ধাক্কানোর পরেও উঠছিস না দেখে লোক ডেকে তোর আব্বু দরজা ভাঙে। ঘরে ঢুকে দেখি তোর নাম দিয়ে অনেক রক্ত ঝরছে।তোকে হাসপাতালে নিতে পারিনি কারণ অবরোধ চলছে রাস্তায়।তাই ডাক্তার এনে বাড়িতে দেখিয়েছি। ডাক্তার বলেছে এটা নাকি ঘুমের মধ্যে ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ । ”
খুব ইচ্ছে করছিল স্বপ্নে ঘটে যাওয়া কথা গুলো মাকে বলতে। কিন্তু কেন জানি বলতে পারছিনা। সকাল বেলা উঠেই পবিত্র হয়ে গোসল করে কুরআন শরীফ পড়তে বসলাম।মনের মধ্যে শুধু বার বার স্বপ্নের কথা মনে হতে লাগলো। একটু বেলা হলে মাইকিং শুনতে পেলাম যে একজন মারা গেছে আর আমার প্রতিবেশী এক দাদীও মারা গেছে।মারা যাবার কথা শুনে যেন আবার মাথা ঘুরে উঠল। মনে হচ্ছে নামায কালাম ইবাদত যদি ধান চাউল হতো তাহলে এখনি বস্তা ভরে নিজের জন্য জমা করে রাখতাম।কে জানে এর পর হয়তো আমার মৃত্যু হতে পারে।বিয়ে হলে দিন আগে থেকেই ঠিক হয়।ঝড় হলে আবহাওয়া অফিস অগ্রিম জানিয়ে দেয়। কিন্তু মৃত্যুর বার্তা কি কেউ কখনো শুনেছে? কেমন আর কি কি হয়? না আর সময় নষ্ট করলে চলবে না যে টুকু সময় বা যে কয়দিন বেঁচে আছি সেই কয়দিন আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।যদি রাতে স্বপ্ন না হয়ে মৃত্যুটা সত্যি হতো তাহলে আজ আমার মৃত্যুর দ্বিতীয় দিন হতো।দুনিয়াতে সব কিছু পড়ে থাকতো আমার সব কিছু।শূন্য হাতে যেতে হতো আমাকে নতুন জীবনে।আর সময় নষ্ট না করে এই সময় কে কাজে লাগাতে হবে।আপনারাও আর সময় নষ্ট করবেন না।মৃত্যু আমাকে বা আপনাকে নিতে হয়তো দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে, পিছে বা আশেপাশে।
..
সমাপ্ত
পূনর্জন্ম
জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...
অনেক ভালো ছিল
অনেক ভালো ছিল
দেয়নি-দেইনি(নিজের বেলায় ই আর অন্যের বেলায় য় হয়)
শুনে-শোনে
ঘরে ঢুকে দেখি তোর নাম দিয়ে অনেক রক্ত ঝড়ছে (এই লাইনটা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, নাম দিয়ে আবার কীভাবে রক্ত ঝড়ে? নাক দিয়ে হলে এককথা মানুষের বলা যায়)
অনেক সুন্দর একটা গল্প পড়লাম আর শিক্ষণীয় বটে। মেয়েটা তার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহ্র পথে চলে এসেছে। যদিও বাস্তবে কেউ এই রকম স্বপ্ন দেখে কিনা সন্দহ। আর যাইহোক আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।
ভুলটা উপলব্ধি করার পর যদি কেউ ভালো হয়ে যায় তথা নিজেকে শোধরে নেয়, তাহলে সেটা খুবই উত্তম। চমৎকার গল্প।
আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রসঙ্গে কিছু কথা :
গল্পের থিমটা সুমদর হলেও তেমন একটা ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। সম্বোধনের ক্ষেত্রেও ভুল রয়েছে যেটা বেমানান। বানানেও বেশ ভুল। বিষয়গুলোর প্রতি আরও খেয়াল রাখা উচিত।
দেয়নি- দেইনি/দিইনি
না আলাদা বসে। যেমন –
জানিনা – জানি না
পারবেনা – পারবে না
পারছিনা – পারছি না
কালমা – কালেমা
পরছে – পড়ছে
আমপারা – আমপাড়া
উনি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে – উনি…. আছেন
ফেলছে – ফেলছেন
দিলো – দিলেন
মাঝ উঠানে এলাম কি করে – মাঝ… কী করে
এরকম আরো অনেক ভুল আছে। আশা করি আগামীতে আরও সচেতন হয়ে লিখবেন। আগামীর জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
এই ধরনের স্বপ্ন সাধারণত কেউ দেখেনা। তবে একটা বাংলাদেশের মুভি দেখেছিলাম, সাকিব খানের। অনেক আগে।
সেখানে এমন একটা স্ক্রিপ্ট ছিলো।
যাইহো, গল্পটা সুন্দর হয়েছে। মৃত্যুরকথা সবসময় স্মরণ রেখে চলা উচিৎ। সময় নষ্ট না করে আল্লাহর ইবাদত করা উচিৎ।
তবে, গল্পের শুরুতে বাংলা বই পড়ে ফাঁকি দেওয়ার সাথে স্বপ্নটার কোন মিল পেলাম না।
চমৎকার লিখেছেন।
বর্ণনাশৈলী দারুণ।
ভুল থেকেইতো মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে।
কেউ যদি ভুল করে আর সে ভুলটা যদি বুঝতে পারে,উপলদ্ধি করতে পারে তবেই জীবনের স্বার্থকতা।
ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর পথে চলে এসেছে।
শুভ কামনা রইলো।
Good
Good