মেকানিজমের কারাগর”
–
লেখক- তাসফিন আহমেদ তাসু
–
…
ইতিহাস বই ঘেটে দেখেছি আমাদের পূর্বযুগে সত্যিকারের প্রেম-ভালবাসা ছিলো,
তখন মানুষের একের প্রতি অপরের মায়া-মমতা ছিলো। মায়া-মমতা শব্দটির অর্থ
এবং সংজ্ঞা বইয়ের পাতায় পড়েছি কিন্তু কখনো উপলব্দি করতে পারেনি। বইয়ের
সংজ্ঞাতে আছে “রক্তের সম্পর্কের কিংবা রক্ত সম্পর্কের বাহিরে দু’টো
মানুষের একের প্রতি অপরের অদৃশ্য আকর্ষনকে মায়া বলে”। বেশ অদ্ভুত একটি
সংজ্ঞা, আমি ঠিক বুঝতে পারি না একজন মানুষের অন্য একজন মানুষের সাথে
ডি,এন,এ সম্পর্ক ব্যতিত আর কি সম্পর্ক থাকতে পারে?
.
প্রাচীণ যুগে মানুষ আর পশুর ভিতর পার্থক্য হিসেবে তারা মনুষত্ব্য নামক
কিছু একটাকে আবিষ্কার করেছিলো, আমি সেই মনুষত্ব্য যন্ত্রটি দেখিনি। দাদুর
কাছে শুনেছি মনুষত্ব্যকে দেখা যেতো না; অদৃশ্য কিছু। পৃথিবীর মানুষ এতটাও
অজ্ঞ ছিলো; তারা অদৃশ্য জিনিসকে বিশ্বাস করতো যুগের পর যুগ, সেই অদৃশ্য
অলৈকিকতা নিয়ে কবি-সাহিত্যিক নাম কিছু অদ্ভুত মানুষেরা লেখালেখিও করতো,
ভাবা যায়? সেদিন পত্রিকাতে, প্রেমিক/প্রেমিকা সম্বন্ধনীয় একটি লেখা
পড়েছিলাম, সেখানে লেখা ছিলো- প্রেম নামক শারিরিক সম্পর্কটাকে প্রাচীণ
যুগে আত্মার সম্পর্ক নামে সঙ্গায়িত ছিলো , প্রেমের ভিতর শারিরিক
সম্পর্কটাকে অপবিত্রতা মনে করতো। তাদের প্রেমে ছিলো সারাজীবন একসাথে
থাকার প্রতিজ্ঞা।
.
এসব ভাবনার মাঝেই টেনি এসে আমাকে হ্যাচকা টেনে প্রশ্ন করলোঃ ‘কেমন আছো মায়াঙ্ক?’
বেশ অদ্ভুত একটা প্রশ্ন? মানুষের কি যন্ত্রের মত নষ্ট থাকার কন্ডিশন
থাকতে পারে? মানুষ তো সর্বদাই ভালো থাকে, হাসি-খুশি থাকে। টেনি যখন
প্রথমবার এই প্রশ্নটা করেছিলো তখন আমি খানিকটা ভাবনার ভিতর আটকে
গিয়েছিলাম। তারপর টেনি আমাকে বলেছিল- “মানুষের মনের ভিতরে দুটো আলাদা
আলাদা অনুভূতি থাকে, একটার নাম সুখ এবং অপরটির নাম দুঃখ, যখন সুখে থাকে
তখন বলতে হয়- ‘ভালো আছি’ আবার যখন দুঃখে থাকে তখন বলতে হয় ‘কষ্টে আছি’”
.
আমি বেশ পুলকিত হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম টেনি বোধ হয় নতুন কোন যন্ত্র
আবিষ্কার করতে যাচ্ছে যেটা ব্যবহারের কারণে ‘কেমন আছো?’বাক্যটি ব্যবহার
করতে হবে। আমার ধারণা হলো এটা সময় অপচয় করার একটি যন্ত্র, বিজ্ঞানের
অপব্যবহার করা হবে এতে। কিন্তু টেনি উত্তর দিলো সে কোন যন্ত্র আবিষ্কার
করছেনা, সুখ/দুঃখ মানুষের মনের আলাদা আলাদা অনুভুতি। সবথেকে মজার ব্যাপার
হলো- টেনি এখানে হৃদপিন্ডকে ‘মন’ নামে ডেকেছে। আমার কাছে এটা ভালো লাগলো,
যদি কোন শব্দকে ছোট করে সময়ের অপচয় হ্রাস করা যায় তাহলে তো উপকারই হবে।
.
যেদিন টেনি মন নিয়ে কথা বলেছিলো সেইদিন আমার জীবনের সবথেকে বাজে ঘটনার
সম্মুখীন হতে হয়েছিল। টেনির মতে- আমার ডান হাতের মধ্যমা আঙ্গুলে থাকা
আংটির কারণেই আমি এবং এই প্রজন্মের লোকেরা সুখ-দুঃখের অনুভূতিটা উপলব্দি
করতে পারেনা।
আজবগুবি যত কথা!
এই আংটি তো প্রত্যেক শিশুকেই জন্মের পরপরই দেয়া হয়, কান্না নামক শব্দদূষন এড়াতে।
.
আমার কথা শুনে টেনি ঠোট হালকা বাঁকা করলো, এটাকে ওর ভাষায় মুচকি হাসি বলে
কিন্তু হাসি বলতে তো দাত বের করে উচ্চস্বরে হা হা শব্দ করাকে বুঝায় যাই
হোক ওর ওই মুচকি হাসিটা একদম মন্দ নয়, কিসের যেন একটা আসক্তি ওর ওই
হাসিটা বারবার দেখতে চায়, আমি অনেকবার মুচকি হাসতে চেষ্টা করেছিলাম
কিন্তু পারিনি।
.
টেনি ওইদিন আমাকে বললো –
: তুমি সুখ/দুঃখ আছে বলে বিশ্বাস করো না, তাই তো?
.
: অবশ্যই! যার কোন অস্তিত্ব নেই সেটাকে বিশ্বাস করবো কেন?
(বলে রাখা উত্তম- টেনির কাছে বিশ্বাসের সংঙ্গা অন্যরকম, আমার মত যেটা
দেখা যায়, যার স্বপক্ষে প্রমাণ আছে তাকে বিশ্বাস বলে কিন্তু ওর মতে-
বিশ্বাস অদৃশ্য কোন দৃঢ়তার নাম)
.
: আচ্ছা তুমি কি কখনো হাতের আংটি টি খুলে দেখেছো? যে কান্নার শব্দ বন্ধ
করতে তোমাকে এই আংটি দেয়া হয়েছিলো, সেই কান্নাটা কেমন? কোন অনুভূতির
কারণে কান্না নামক শব্দের সৃষ্টি হয়, সেটাকে কি তুমি কখনো উপলব্দি করার
চেষ্টা করেছো? তুমি তো উৎসুক আর প্রমাণে বিশ্বাসী মানুষ তাহলে তুমি
বিনা-প্রমাণে কি করে বিশ্বাস করলে জন্মগ্রহনের সময় তুমি কান্না করেছো। কি
প্রমাণ আছে তোমার কাছে?
.
টেনির এই কথা শোনার পর আমার মনে চিন্তা জাগলো – সত্যিই তো এর সত্যতার কি
প্রমাণ আছে আমার কাছে? কিসের ভিত্তিতে আমি এটা বিশ্বাস করছি? মমের বলা
কথাতেই!
টেনি আবারো মুচকি হেসে বললো
.
: তুমি নিশ্চয়ই তোমার মমের থেকে শুনে এটা বিশ্বাস করেছো।
.
আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ালাম।
.
: তাহলে এই যে তুমি অন্ধভাবে মেনে নিলে জন্মের সময় তুমি কান্না করেছিলে,
এটার নামই বিশ্বাস। এবার নিশ্চয়ই তুমি জানতে চাও কান্না কিসের কারণে
সৃষ্টি হয়? তোমাদের কস সাইন্সের মত প্রত্যেক ঘটনার একটি কারণ থাকা
আবশ্যক, তেমনি কান্নারও একটি কারণ আছে আর সেটা হলো কষ্ট নাম অনুভূতি।
.
: কিন্তু এই কষ্ট নাম অনুভূতিটা কি? এর অস্তিত্ব কোথায়?
.
:কষ্ট পরখ করে দেখতে চাও?
.
: হ্যাঁ, কষ্টকে আমি একবার পরখ করে দেখতে চাই।
.
: আচ্ছা, তোমার আংটি এক মিনিটের জন্য খুলতে পারবে?
.
: আংটি খুলতে হবে কেন?
.
: এই আংটি নামক প্রযুক্তিই তো তোমার মনকে স্থির করে রেখেছে। দুঃখ নামক
অনুভূতিকে আটকে রেখেছে।
.
ওর কথানুযায়ী আংটিটি আঙ্গুল থেকে খুলতেই, হৃদপিন্ডে বেশ জোরে একটা আঘাত
পেলাম, হাত বুকে চেঁপে ধরে বসে পরলাম, হৃদপিন্ডটা ছিড়ে যাবার উপক্রম,
ভয়ানক পরিস্থিতিতে চিৎকার করতে শুরু করলাম। চোখ বেয়ে জল পরতে শুরু করেছে।
আংটিটা পরে আছে বেশ দূরে , টেনি সেটাকে তুলে তড়িগড়ি আমার আঙ্গুলে পড়িয়ে
দিলো। এক নিমিষেই হৃদপিন্ডের যন্ত্রনাটা বন্ধ হয়ে গেলো চোখের জল পড়া
বন্ধ।
.
আমি কর্কশ স্বরে বললাম-
: বাজে, খুব বাজে একটা উপলব্দি এই কষ্ট টা।
.
টেনি আমার কাধে হাত রেখে বলেছিলো-
: অতটাও বাজে নয় যেটা তুমি উপলব্দি করেছো, এতো বছরের আটকে থাকা কষ্টগুলো
একসাথে আঘাত হানাতে তুমি সামলাতে পারোনি।
.
: হতে পারে, কিন্তু আমার চোখ থেকে জল পরেছিলো কেন? নিশ্চয়ই কোন রোগ
আক্রমন করছে, আমাকে এক্ষুণি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
.
: ওটা কোন রোগ না, ওটাকেই বলে কান্না আর তুমি যে চিৎকার করেছিলে ওটাকে
বলে কান্নার শব্দ।
.
: তুমি এত কিছু জানো কি করে? বিজ্ঞাণীরা যা অস্বীকার করছে তা তুমি প্রমাণ
করছো কি করে?
.
: অতিরিক্ত কৌতুহলের কারণে আমি একদিন আমার হাতের আংটিটা খুলে ফেলেছিলাম
কতক্ষন ছটফট করার পর আমি অনুভব করলাম আমার ভিতরে নতুন এক প্রাণের সৃষ্টি
হয়েছে, ছোট এই কাপড় যা পরিধান করার কারণে আমার বক্ষ, নিতম্ব স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছে এগুলো পরিধান করতে আমার লজ্জা নামক একটা অনুভূতি হচ্ছে যেটা আমি
ইতিহাস বইতে পড়েছিলাম। আমার মম আমার প্রতি কর্কশ কথা বলাতে আমার খারাপ
একটা অনুভূতি হচ্ছে। মমের পাশে বসতে আমার অন্যরকম ভালো লাগছে। সব মিলিয়ে
একটা অন্যরকম পৃথিবী, অন্য একটি প্রাণ।
.
আমি সেদিন টেনির কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, আসলেই কি
মন/সুখ/দুঃখ/লজ্জা এগুলো আবারও প্রাচীণ যুগের মত ফিরে এসেছে এই যুগে!
~
(২)
আজ প্রায় এক সপ্তাহ পরে টেনির সাথে দেখা। আজ দেখা হবার পরে সেই পুরানো
প্রশ্ন করলো ‘কেমন আছো?’ আমিও ওর থেকে শেখা উত্তর দিলাম ‘ভালো আছি’ আরো
কিছু কথা বলার পরে টেনি আমাকে সেক্সের প্রস্তাব দিলো, আমিও রাজি হয়ে
গেলাম কিন্তু বিপত্তি বাধলো ও নির্জন কোন কক্ষে সকলের আড়ালে সেক্স করতে
চাচ্ছে।
.
: অদ্ভুত তো! আমরা তো এখানেই করতে পারি,আড়ালে যেতে হবে কেন?
.
: সেটা পরে বুঝতে পারবে, তুমি যাবে কিনা বলো?
.
অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওর প্রস্তাবে রাজি হলাম কারণ টেনির সাথে সেক্স করার
ইচ্ছাটি বহুদিনের কিন্তু কি একটা অদ্ভুত কারণে টেনি কখনো সাড়া দেয়নি। আমি
ভেবেছি, টেনির সাথে আমার তখন-ই দেখা হয় যখন ও অন্য কারো সাথে সেক্স করে
আসে।
.
(২)
.
আমি টেনির বেডরুমে বসে আছি। টেনির মম আমাদের জন্য জুস দিয়েছেন তা পান
করছি। টেনি দরজা আটকে দিতেই আমি জুস রেখে নগ্ন হলাম সাথে টেনিও, টেনি যখন
আমার মধ্যমা আঙ্গুলটি ওর মুখে নিলো তখন আমি অবাক হলাম, সেক্সের মধ্যে সে
এসব কি করছে? কতক্ষন ধরে আমার আংটিটি কামড়ে ধরে আঙ্গুল থেকে খুলে ফেললো,
আমার হৃদপিন্ডে আবারো আঘাত লাগলো। মূহুর্তের ভিতরে সারা শরীরে বাজে রকম
অস্বস্তি শুরু হলো, বাজে অনুভূতিটার আঘাতে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
.
(৩)
আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি টেনির বেডের উপর নগ্নাবস্থায় শুয়ে আছি।
টেনি অদ্ভুত এক ধরণের পোষাক পরে আছে, ইন্টারনেটে আমি দেখেছিলাম এই
পোষাকটি অতি প্রাচীণ, এর নাম শাড়ী। টেনিকে শাড়িতে অসাধারণ কোন রোবটের
চেয়েও অসাধারণ লাগছে, আমি নগ্ন থাকার কারণে অন্য রকম একটা অস্বস্তি
লাগছে, আচ্ছা এটাই কি টেনির বলা সেই ‘লজ্জা’? আমি হাত দিয়ে আমার যৌনাঙ্গ
ঢেকে ফেললাম, টেনি তা দেখে মুচকি হাসলো। সামনের আয়নাতে দেখতে পেলাম আমার
মুখেও একটা কোমল হাসি। চোখ দুটো টিপটিপ করছে। টেনি এসে আমার পাশে বসলো,
শাড়ী নামক পোশাকের একটা অংশ দিয়ে আমার যৌনাঙ্গ ঢেকে দিয়েছে। টেনি শরীর
থেকে আমি একটা ঘ্রাণ পাচ্ছি, এটাকে নাকি মেয়েলি ঘ্রাণ বলতো প্রাচীন যুগের
মানুষেরা। টেনির প্রতিটি স্পর্শে আমি কেঁপে উঠছি।
আচ্ছা এই কেঁপে উঠাকেই কি ভালবাসা বলে? প্রাচীণ যুগের সেই প্রেম বলে?
যদি উত্তরটি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে আমি প্রথম প্রেমে পরেছি। মেকানিজমের
কারাগর থেকে বের হয়ে নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছি।
.
আমি টেনিকে জিজ্ঞেস করলাম-
.
: টেনি, তোমার কাছে এভাবে সারাজীবন থাকতে ইচ্ছা করছে কেন?
.
: এটাই তো প্রেম।
.
: তোমার সামনে নগ্ন থাকতে আমার অস্বস্থি লাগছে কেন?
.
: এটা লজ্জা।
.
: এমন কেন মনে হচ্ছে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
.
: এটা ভালবাসা।
.
: আজ আমার এতো হালকা লাগছে কেন?
.
: এটা সুখ।
.
: তোমাকে যদি হারিয়ে ফেলি তাহলে আমার প্রাণের ধ্বংশ ঘটবে এটা কেন মনে হচ্ছে?
.
: ওটা কষ্ট।
.
আমি টেনিকে জড়িয়ে ধরলাম। ফিসফিস করে বললাম আমিও আদিমানুষদের মত প্রেমিক হতে চাই।
পূনর্জন্ম
জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...
অসাধারণ একটি গল্প। লেখার ধাঁচ মনকাড়া। থিম আনকমন, উপস্থাপন ও বর্ণনাভঙ্গি চমকপ্রদ।
লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি গল্প উপহার দেয়ার জন্য।
অনেক শুভ কামনা।
তবে বিরামচিহ্নের অপপ্রয়োগ হয়েছে। কথোপকথন গুলোতে “_” চিহ্ন ব্যবহার করবেন।
অসাধারণ!
খুব আনকমন একটা টপিক নিয়ে লিখেছেন ।
শুরু থেকেই টুইস্টে ভরা ছিলো গল্পটা।
সত্যি, এমন একটা সময় আসবে যখন মায়া, আদর,এফেকশন জিনিসগুলো হারিয়ে যাবে।
ফ্রেমবন্দি অতীত, বা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় থাকবে আদিম সেসব বর্ণনা।
যাইহোক,লেখকের লেখার হাত যথেষ্ট পাকা,বুঝাই যাচ্ছে।
সামনে আরো ভালো করবেন,শুভকামনা রইল।