রোকেয়া রিক্তা
লোকে বলে ব্যবসায়ীদের বউ থাকে না, বয়ফ্রেণ্ড জুটিয়ে ভেগে যায়। আমিও থাকব না এই “তিনকোনা বেতাল আলীর” সাথে কিছুতেই সংসার করবোনা আমি । চলেই যাবো।কিন্তু বয়ফ্রেণ্ড বস্তুটা আমার নেই, তাই আছি এখনও।
যাহোক বিয়ের তিন মাস পরে হানিমনে যাওয়ার সময় হলো আমার “স্বনামধন্য ব্যবসায়ী বরের” ।ভালোকথা তাই হোক।কক্সবাজার যাচ্ছি আমরা। বাসাথেকে বেরোলাম ভালো এখন সাতক্ষীরা এসে বাপনের কি ব্যবসায়ী কাজ পড়ে গেল দশ মিনিট টাইম নিয়ে চলে গেছে পঁচিশ মিনিট হলো। অসহ্য লাগছে ,স্ট্যান্ডের খুব কাছেই বাপনের এক বন্ধুর দোকানে বসে আছি আমি। বাসের হেল্পার চিৎকার করে যাত্রীদের ডাকছে “এই কলারোয়া, কলারোয়া, আসুন তাড়িতাড়ি, কলারোয়া এই গাড়িতে আসুন আসুন। কাওকে বলছে ” এই আপা কোথায় যাবেন? কলারোয়া? এটাতে উঠুন”
ওরা যত কলারোয়া কলারোয়া করে হাঁক ছাড়ে ততোই আমার কলিজাটা আছড়ে মরে।তিন মাস আগেও কলেজ শেষে টারমিনাল এসে দৌড়ে এই বাস গুলাই ধরতাম। সস্তির নিঃস্বাশ ছাড়তাম,যাক বাবা এবার বাড়ি যাচ্ছি, ভাবতেই ভালোলাগত।
সেই সাতক্ষীরা, সেই মার্কেট,সেই কলেজ সবই আছে শুধু আমার বাড়িতে আমি আজ মেহমান!! আজ সাজ বদলে আমি অন্যকেও হয়েছি। বাসগুলো চলেযাচ্ছে আর আমি দেখছি,ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে বাস ধরি, একবার বাড়ি যায়।আমার আম্মু, আমাদের উঠান,আমার গোলাপের চারটা, সব আমার শুধুই আমি সেখানে অতিথি।আজকে বাড়ি গেলে মা হয়তো খাবার বেলা বলবেনা “যা রান্না করি তোমার মুখে রুচেনা, রোজ রোজ ঘী পোলাও কোথায় পাবো তোমার জন্য ” হয়তো আমার পছন্দের খাবারটাই রান্না করবে।কিন্তু আমি যেতে পারছি কই …? জাদুমন্ত্রেে বেঁধে দিয়ে যে “সোনার কর্মকার ” চলেগেল সে কই…?
আনমনে বাসস্ট্যান্ডের দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ কে যেন আমার সামনে এসে বলল “ছায়া”?
চমকে উঠলাম,রেখা আপু তুমি…?
আপু :তোর এই সাজ! বিয়ে করেছিস কবে…? এখানে কি করছিস…?
তারপরে আপুকে সব খুলে বললাম বিয়েে থেকে এখন পযর্ন্ত। (রেখা আপু আমার স্কুলের বন্ধু আমার দুই ক্লাস উপরে পড়তেন।আমি যে অনেক সুন্দরী, আমার চোখে জাদু আছে,আমার হাসিটা অসাধারণ – এসব কথা কোনো রমিওপুরুষের বলার আগে রেখা আপু আমাকে লক্ষ বার বলেছে। মাঝে মাঝে স্কুলে দু’হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলত “আচ্ছা ছায়া, আমাদের স্কুলটা গার্লস না হতো আর আমি যদি একটা ছেলে হতাম তবে এভাবে তোর গলায় ঝুলতে দিতিস…? “আমি খিল খিল করে হেসে দিয়ে বলতাম ,আপু আমার কথা বাদদাও,তাকিয়ে দেখ ইসরাত ম্যাম কেমন করে আমাদের দেখছেন,যদি তুমি ছেলেই হতে তবে এতক্ষণে ম্যাম আর বেত দুইয়ে মিলে আমাদের কি হাল করতো সেটা একবার ভাবো……!)
আপুর অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে, চার বছরের বাচ্চাও আছে একটা। বললাম আপু তোমার কথা বল।আপু বলল,আরে শাহেদ অনেক বদলে গেছে, ওর সাথে আমার থাকা হবে না। আমাকে মার বাড়িতেও যেতে দেয়না,অবিশ্বাস করে আমাকে।যদি কারো সাথে ভেগে যায় তাই!
অবাক হলাম আপুর কথাশুনে,আমার সাথেও যদি এমন হয়,কি হবে তখন…? ওরা সুখি দম্পতি ছিল জানি,মাঝখানে পাঁচটা বছর পেরোতেই সম্পর্কের মধ্যে এত ফাটল…!
আপু বলল, হ্যারে বাপন কি করে?
বললাম ,ওর জুয়েলার্স আছে নিউ মার্কেটে।
আপু বলল,ওহহো তাইতো বলি মহারাণীর গা ভর্তি গহনার ঝামট কেন…! তা স্বর্ণকারেরা লোকে ঠকায় বড় তোকেও ভেজাল মেশানো গহনা দেইনাই তো…! দুজনেই হেসে উঠলাম আমরা।
আচ্ছা আপু, তোমার মেয়েটা কার কাছে রেখে এলে, আনলেনা কেনো?জানতে চাইলাম
আপু হঠাৎ গম্ভীর হয়ে ব বলল ,আমি যে এসেছি তা কেও জানেনা,একরকম চুরি করেই এসেছি রে…। আমাকে বাড়িথেকে বেরোতে দেয়না শাহেদর বাবা-মা।মেয়ে ওদের কাছেই থাকে বেশিরভাগ
বিস্ময়ের সিমা রইল না আমার,এমন জীবনও হয়?
আপু বলল বাপনকে ফোন করে দেখ অনেক দেরি থাকলে আমরা দুবোন মিলে পার্কে গিয়ে বসি,অনেক কথা তোকে বলবো রে… ।
বাপনকে ফোন দিয়ে বললাম আপুর কথা আর আমরা যে রাজ্জাক পার্কে বসছি সেটাও বললাম।বাপন না করলো না,তবে বারবার বলল,ছায়া মাইন্ড করোনা একটু ঝামেলায় পড়েগেছি,তাই দেরি হচ্ছে। আমি যত দ্রুত পারি চলে আসবো। গাড়ি আসতে এখনও বিশ মিনিট বাকি ততক্ষণেে তুমি তোমার ফ্রেন্ডের সাথে থাকো আমি ওখানেই তোমাদের সাথে মিট করবো। আচ্ছা, বলে ফোনটা রাখলাম।
‘রাজ্জাক পার্ক’ অনেক পুরোনো পার্ক।দেখার মত কিছুই নেই এখানে।কেও আসেনা ভুলেও।চারদিকটা ফাঁকা,দু,একজন পথ কমানোর জন্য আড়াআড়ি ভাঙা দেয়াল পারহয়ে মেন রোডে উঠতে পার্কের ভিতর দিয়ে যাওয়া আসা করছে এই যা, এক কাণিতর দুটো ছেলেমেয়ে বসে আছে…। আমরা ঝাউগাছটার কাছে ঘেসে বসলাম।রাস্তা থেকে এখানে দেখা যাবেনা বেশ আড়াল,আপু বললেন এখানে বস তাই।
আগের কথার জের ধরেই বললাম, আপু তাহলে তুমি এলে কেনো সাতক্ষীরায় ,ওনারা যদি অশান্তি করেন?
আপু বললেন বাদদে ওসব ,দেখি তোর বালাদুটো বাপন তোকে ঠকাল নাকি। হাসি মুখে খুলে দিলাম,আপু নিজের হাতে পরে নিল বালাদুটো।
হঠাৎ বলল,জানিস শাহেদ আমাকে অনেক গহনা দিয়েছিল তবে এখন আর ধরতে দেয়না,যদি গহনা নিয়ে পালিয়ে যায় আর কারো সাথে!
আপুর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না,কত লজ্জা আর কষ্টনিয়ে ঘরের কথা আমাকে বলতে বসেছে মেয়েটা। খুব কষ্ট হচ্ছে আপুর জন্যে। আহা,এত অবিশ্বাসেের পরেও মানুষ বেঁচে থাকে?
আপু বলল, দেখি তোর গলারটা।আরে বাবা খোল না … আমি নিয়ে পালাচ্ছি না তো …! একগাল হেসে খুলে দিলাম।আপু নিজের গলায় পরল সেটা।ভাবলাম পরুক,একটা মেয়ের জীবনে গহনা তার স্বামি- সন্তানের মতই প্রিয়।এই মেয়েটা তা পেয়ে হরালো,আঘাতটা কম নয়।একটুখানির জন্যে হলেও মনটা জুড়াক ওর।আমাকে খুব ভালোবাসে মেয়েটা ওর জন্য এটুকু তো করি।
কানের দুটোও খুলে আপুর হাতে দিলাম।
আপু খুশি হয়ে বলল,ছায়া আমার পিক নে তো দেখি কেমন লাগছে এত গহনা পরে।কয়েকটা পিক নিলাম। হাতের চারটে আন্টিও আপুর আঙুলে। বেশ টাইট হলো আপুর হাতে তাও পরলো। আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি।চোখ দুটো চিকচিক করছে আপুর।গলার চিকন চেইন টাও আপুকে দিলাম।
আপু আবারও বললেন এই বাপন তোকে খাটি সোনাই দিলো তো?
হেসে বললাম,আপু আমার কোনো দাবিনেই যার কাছে সে যা দিল তা আসল না ভেজাল তা নিয়ে মাথা ঘামায়না।তবে তিন মাসে ওকে যা চিনেছি তাতে জীবন খেয়ার হাল ওর হাতে দিয়ে নির্ভাবনায় থাকতে পারবো এটাই বিশ্বাস।ঠকতে হবে না।
আপু হেসে বলল,ছায়া তোর মত যদি হতাম! শাহেদর কাছে আমার অনেক চাওয়া ।আমার সব দিক পুরো না হলে আমি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠি।চারটা বছর ওর কাছে ধরনা দিচ্ছি দেশে ফিরতে তা পাত্তাই দিচ্ছে না।উল্টে আমাকে অবিশ্বাস করে টাকা পয়সা,গহনা যা ছিল সব ওর মাকে রাখতে দিয়েছে।
কি বলে সান্ত্বনা দিবো একে।মাথা নিচু করে আছি। আপু বলল,ছায়া একমিনিট কথা বলা যাবে তোর ফোন থেকে? হ্যাঁ, বলো।জানতে চাওয়ার কি আছে…।
আপু কাকে ফোন দিয়ে বলল,হ্যালো… আরে আমি, আমি রাজ্জাক পার্কে আছি,ওকে তাড়িতাড়ি কিন্তু।
বললাম কে আপু? আরে আমার চাচাতো ননদ,ওর সাথেই বাড়ি ফিরবো।বোরখাটা ওর কাছে রেখেই তবে বাড়ি ঢুকতে হবে।
বসেই আছি খালি মুখে আপুকে যে ফুসকা বা চটপটি কিছু অফার করবো তা কাছে তো টাকাই নেই কি করি! হঠাৎ আপুই বলল,ছায়া তুই বস আমি ফুচকা অর্ডার করে আসি।আমি মাথানেড়ে রাজি হলাম,আমার কাছে যে কোনো টাকানেই হাসতে হাসতে তাও বললাম। আপু দুপা গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল,ছায়া ফোনটা দে ওই সানের উপরে একটা পিক নেবো।আর কবে দেখা হবে… তুই দেখিস মাঝে মাঝে ভুলে যাস যখন তখন…। এবারে চিৎকার দিয়ে উঠলাম “আমি ভুলে যাই না তুমি… ”
হাসতে হাসতে আপু চলে গেলে…।
একা বসে ভাবছি,আহা,মেয়েটা আগের মতোই হাসি-খুশি,চঞ্চল ,মিশুক রেয়ে গেছে।সংসারের এত অশান্তির মধ্যেও বেশ হাসি-খুশি।আজো আমাকে আগের মতোই মনে রেখেছে।
পাঁচ মিনিট পার হলো আপু এখনও আসছে না।দুই মিনিট লাগার কথা যেখানে,সেখানে এতক্ষণ কি করছে আপু! ভাবলাম পিক তুলতে তুলতে দেরি হচ্ছে বোধহয়। আরো তিন মিনিট, নাহ আর অপেক্ষা করতে পারছিনা। কেন আসছেনা রেখা আপু…!
কি যেন ভয়ে আর লজ্জায় বুক কাঁপছে । উঠে দু’পা সামনে এগোলাম। নাহ নেই… কোথাাও নেই আপু…। গেল কোথায়? ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে। তবে কি………।
না না কখ্খোনো হতে পারে না।রেখা আপু আমার সাথে এরকম করতেই পারেনা। চরিত্র যতোই নিচে নামুক আমার ক্ষতি করবে না সে এ বিশ্বাস আমার আছে…। তবে কেনো আসছে না?
বাপনও কেনো আসে না? হন্যহয়ে গেটের দিকে ছুটছি।একটা টোকাই মেয়ে এসে বলল ‘আপা,এক আপা আফনারে এই ফোনডা দিতে কইছে’
কোথায় সে……? মেয়েটা বলল,কার মটর সাইকেলে উঠে চলে গেছে !!!!!
মাটিতে বসে পড়লাম,ছি… ছি… ছি… রেখা আপু এত জঘন্য এত নিচ!! আমার সাথে এমন করতে পারলো? ছি…
এখন… বাপন এলে কি বলবো ……!! কেমন করে বলবো,রেখা আপু আমার সাথে এমন করল…!কি বলব বাপন কে…! ওর বাবা-মাকেই বা কি জবাব দেবো…! ভয়ে,লজ্জায়,ঘৃণায় চোখের জলও পালিয়েছেে।
খোদাকে ডেকে বললাম,দয়াময় এ লজ্জার হাত থেকে রেহাই দাও…। বাপন আসার আগেই পৃথিবী থেমে যাক……থেমে যাক……থেমে যাক……।
গল্পের মেসেজ টা ভালো হয়েছে। কিন্তু গল্পের শব্দে প্রচুর ভুল। এতো ভুল রেখে কখনো গল্প পড়ে মজা পাওয়া যায়না। পরবর্তীতে ভুল শুধরে গল্প চাই।
গল্পের শুরুটা সুন্দর হলেও শেষটা ভয়াবহ ছিল। বিশ্বাসঘাতকতা খুবই খারাপ একটি জিনিষ। অন্য সব অপরাধ ক্ষমা করা গেলেও বিশ্বাসঘাতকতার মতো জঘন্য অপরাধ কখনোই ক্ষমা করা যায় না। রেখার এই কাজের জন্য ছায়ার যেই সর্বনাশ হয়েছে তা বলার মতো না। বিশ্বাসের মর্যাদা সে নষ্ট করেছে।
বানানে প্রচুর ভুল। বানানের প্রতি যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ করছি।
বয়ফ্রেন্ড হবে।
হানিমন- হানিমুন।
নিঃস্বাশ- নিশ্বাস।
গোলাপের চারটা- চারাটা।
রমিও- রোমিও।
দেইনাইতো- দেয় নাইতো।
সিমা- সীমা।
দুবোন- দু’বোন।
কাণিতর বলে কওওন শব্দ আছে কিনা আমার জানা নেই।
আন্টিও- আংটিও।
বিরামচিহ্নের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। কিছু বাক্যে বিরামচিহ্ন ব্যবহৃত হলে আরো বেশি শোভনীয় হত।
কাহিনীটা দারুণ, বাস্তবসম্মত।
সত্যিই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত একটা কিছুর সম্মুখীন হলে মুহুর্তেই মরে যেতে ইচ্ছে করে।
লেখিকা খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
তবে, বেশ কিছু ত্রুটি চোখে পড়েছে, বানান এবং বিরামচিহ্নের দিকে আরো সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
শুভকামনা রইল।