Sadia Islam
গ্রামের নাম ফুলপুর। যেহেতু গ্রামের নাম ফুলপুর সেহেতু বোঝাই যাচ্ছে গ্রামের সাথে ফুলের অবশ্যই যোগাযোগ আছে। হ্যা,তাই। এ গ্রামের মানুষের অর্থ উপার্জনের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে ফুলচাষ করা। এ গ্রামের চাষিরা ফুল চাষের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এ গ্রামেরই এক কৃষক মতিন মিঞা। তিনি গোলাপ ফুলের চাষ করেন। ঠিক গোলাপ ফুলের মতোই তার একটা পরিবার আছে। হতে পারে সন্তান সংখ্যা বেশি কিন্তু তারা কেউই মতিন মিঞার অবাধ্য নয়। এর মধ্যেই মতিন মিঞার বড় দুই মেয়ের এবং বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।ছোটো ছেলে লেখা পড়া করছে। বাদ রইল ছোটো মেয়ে। গল্পটা তাকে নিয়েই। সেই গল্পের মূখ্য চরিত্র।
মতিন মিঞা লেখাপড়া জানে না। তিনি ছেলেদের লেখাপড়ায় খুব উৎসাহ দেন। কিন্তু তিনি মেয়েদের লেখাপড়া একদম পছন্দ করেন না। তিনি তার বড় দুই মেয়েকে ক্লাস এইট পেরোতে না পেরোতেই বিয়ে দিয়েছেন। এটাই তিনি বরাবর করে আসছেন। এভাবেই একদিন মতিন মিঞার ছোটো মেয়ে সুভাষিনী, ডাক নাম সুভা ক্লাস ফাইভ পেরিয়ে সিক্সে উঠল। দুচোখ ভরা তার স্বপ্ন।বড় হবার স্বপ্ন। নিজের পায়ে দাড়াবার স্বপ্ন। বাবার সাথে পরিবারের হাল ধরবার স্বপ্ন। সুভা খুব লাজুক মেয়ে। একটু হেসে কেউ কথা বললেই ও লজ্জা পেয়ে যায়। দেখতে ফর্সা, লম্বা, গঠনও খুব ভাল। লেখাপড়ায় মোটামুটি এবং মেজাজ শান্ত প্রকৃতির। ক্লাস সিক্সে ওঠার পর নতুন স্কুল নতুন পরিবেশ সুভার খুব ভাল লাগতে শুরু করে।অবশ্য সুভা খুব কম কথা বলে। যার কারণে ও সবার সাথে মিশতে পারে না। তবে শিক্ষকরা ও কে খুব ভালবাসে। ক্লাসের অনেকে ওর নাম বললেই মনে করে ও একটা স্বার্থপর কিন্ত ও এইসব জানার পরেও কিছু মনে করে না। এভাবেই ক্লাস সিক্স পেরিয়ে সুভা ক্লাস সেভেনে ওঠে।
এরই কিছুদিন পরেই এল সুভার স্বপ্ন ভাঙ্গার দিন। দেখতে শুনতে ভাল হওয়ায় ক্লাস সেভেনে ওঠার পর সুভার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। এক সময় এক ভাল মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসে। সুভার বাবা মতিন মিঞা এই প্রস্তাব আসার পর চিন্তা করেন, “ছেলে তো ভাল,বিদেশ থাকে,আয় ভাল,মধ্যবিত্ত পরিবার। এছাড়া আমিও তো গরিব মানুষ, মেয়ের লেখাপড়া ঠিকমত চালাতে কষ্ট হচ্ছে আর মেয়েদের লেখাপড়ার কি দরকার? রান্না আর নামাজ কালাম জানলেই তো হল।” এইসব ভেবে সুভার বাবা রাজি হয়ে গেলেন। তারপর একদিন দিন তারিখ ঠিক হল। ঠিক যেদিন দিন তারিখ ঠিক হল সেইদিন ই সুভা জানতে পারল যে তার বাবা তার জন্য বিবাহ ঠিক করে ফেলেছেন এবং দিন তারিখও ঠিক হয়ে গেছে।এসব জানার পর থেকে সুভা কান্নাকাটি শুরু করে। সুভার মা তাকে শান্তনা দিতে শুরু করেন কিন্তু তিনি তার স্বামীর অবাধ্য হয়ে মেয়ের বিবাহ ঠেকানোর সাহস দেখান না। যদিও তিনি সুভার অমতের কথা একবার সুভার বাবাকে বলেছিলেন কিন্তু বললে কি হবে তার যে কথা সেই কাজ।
দেখতে দেখতে সুভার বিয়ের দিন চলে এল। বিয়ে উপলক্ষে সুভার চাচাতো ভাইয়েরা চেয়েছিল যে ছোট বোনের বিয়ে একটু সাউন্ড বক্স বাজানো হবে,মজা করবে। কিন্তু মতিন মিঞা এসব পছন্দ করেন না যার কারনে সাউন্ড বক্সের অর্ডার দিয়েও শেষে বাদ দেওয়া হল। যাইহোক, বিয়ের দিন বরযাত্রী দুপুর ৩:৫০টার দিকে পৌছে গেল ওদের বাড়ি। বর দেখতে মোটামুটি ভাল। নাম মো:সাবের কাজী। বরযাত্রী আসার পর আগে কাবিন কালেমা হল তারপর খাওয়া দাওয়া। কাবিনের সময় আগে কন্যার স্বাক্ষর অর্থাৎ সুভার স্বাক্ষর নেওয়া হল। সুভা তার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের স্বপ্নকে চোখের জলে মুছে ফেলে অবশেষে স্বাক্ষর করেই ফেলল। এরপর বরের স্বাক্ষর নেওয়া হল। এবার সবার দোয়া নিয়ে বিয়ে হবার পর খাওয়া দাওয়া শুরু হল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সুভাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগল। সুভা তার সব স্বপ্নকে অঙ্কুরেই পা দিয়ে মাড়িয়ে রেখে বাবার বাড়ি ত্যাগ করল।
স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার পর প্রথম প্রথম সুভাকে ওদের বাড়ির সবাই খুব ভালবাসতো। আসলে সুভার মতো মেয়ে কেউ ভাল না বেসেই পারে না। কিন্তু এত ভালবাসা সুভার কপালে সইল না। বিয়ের দুই বছর পর সুভার কোল আলো করে এক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু দূর্ভাগের বিষয় হল সুভা ও সাবেরের সন্তান হাসি জন্মানোর দুইদিন পর বিদেশে সাবেরের চাকরি চলে গেল এবং বিভিন্ন সমস্যার কারনে সাবের বিদেশ থেকে একেবারে চলে এল। আর তারপর থেকেই সুভার শ্বশুরবাড়ি কন্টক শয্যা হয়ে উঠল। সুভার শ্বাশুড়ি বিভিন্ন কুসংষ্কার এ বিশ্বাস করত। সুভার কন্যা হাসি জন্মানোর পরে যখন তার স্বামীর চাকরি চলে গেল তখন তিনি সুভাকে বিভিন্ন খোটা দিতে লাগলেন। এদিকে সুভার স্বামী বিদেশ থেকে ফিরে চিন্তা ভাবনা করতে করতে আর অন্যদিকে মায়ের নানা কটুক্তি শুনতে শুনতে মাদকের নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সাবের নেশাগ্রস্ত হয়ে প্রায় প্রতিরাতে তাকে মারধোর করতে শুরু করে। এত অশান্তির মাঝে আবার সুভার কাছে সংবাদ আসে তার বাবা মতিন মিঞা আজ সকালে স্ট্রোক করে মারা গেছে। এ সংবাদ সুভার কাছে “বিনা মেঘে বজ্রপাত”এর মতো মনে হল। শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন, স্বামীর নেশাগ্রস্ততা তার উপর বাবা মারা যাওয়ার সংবাদ শুনে সুভা পাথরের মতো দাড়িয়ে রইল। এই সংবাদ শোনার পর সুভার শ্বাশুড়ি তার ছেলে সাবেরকে ডেকে বলল,”ওই অলক্ষীটার বাপ মরছে,যাও সাথে করে নিয়ে গিয়ে মাটি দিয়ে আসো। এই কথা শুনে সাবের বলল,”মরছে ওর বাপ, আমি গিয়ে কি করব।” এই বলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
তারপর মেয়েকে নিয়ে সুভা একাই বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সে তার বাবার বাড়ি পৌছে উঠানে খাটিয়ায় লাশ দেখতে পায়। লাশ দেখতে পাওয়া মাত্রই সুভা বেহুশ হয়ে যায়। পরে হুশ ফিরে এলে দেখতে পায় যে তার বাবার লাশ দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এবার সুভা নিজের দুঃখ উজাড় করে কাঁদতে শুরু করে। মতিন মিঞার লাশ দাফন হওয়ার পরে রাতের বেলায় ঠিক হয় যে সুভার মা তার বড় ছেলের পরিবারের সাথে চট্টগ্রাম চলে যাবেন। আর সুভার ছোট ভাই তো ঢাকায় মেসে থাকে এই কারনে মাকে আর তার সাথে রাখতে পারল না বাবা মারা যাওয়ার তিন দিন পরে সুভা তার শ্বশুরবাড়ীতে ফিরে আসে। সুভার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ওর উপর নির্যাতন বাড়তে থাকে। বাড়ির সব কাজ ওকেই করতে হয়। রাতে স্বামীর হাতে মার খাওয়ার পর সকালে শ্বাশুড়ির খোটা শুনতে হয়। এছাড়া তার শ্বশুরও প্রায়ই সময় আজে বাজে ভাষায় গালাগাল করে।
এক পর্যায়ে একদিন সুভা কাজী অফিসে গিয়ে সাবেরকে ডিভোর্স দিয়ে মেয়েকে নিয়ে ওর বাবার ভিটায় যে ঘর ছিল সেখানে চলে আসে। এসব যখন তার বড় ভাই জানল তখন তিনি বোন ভাগ্নীর দায় নিতে অস্বীকার করল। এবার সুভার চোখে আমাবশ্যার আধার নেমে এল। এসময় সে ভাবল আমার কাছে তো কিছু টাকা আছে। সাহস করে কিছু না করতে পারলে আমি ও আমার মেয়ে দুজনেই না খেতে মারা যাব। তার চেয়ে বরং আমি ঢাকায় চলে যাব। সেখানে গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করব। অন্তত মা মেয়ে দুজনের এক ব্যবস্থা হবে। এসব ভেবে সুভা মেয়েকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ঢাকায় যাওয়ার পর সে বস্তিতে একটা ঘর ভাড়া করল এবং পাশেই এক গার্মেন্টসে সেলাইয়ের চাকরি নিল। সুভা ওই খানে নিয়মিত কাজ করতে শুরু করে। তার হাতের কাজ সেলাই খুব সুক্ষ্ম ও সুন্দর হওয়ায় ওদের ফ্লোরের সবাই ওকে খুব ভালবাসতে শুরু করে। এদিকে ওদের ফ্লোরের ফ্লোর ইনচার্জ ছিল এক মহিলা। সুভার ব্যবহার আর কাজ ভাল হওয়ায় উনিও এক পর্যায়ে ওকে ভালবাসতে শুরু করে। সুভা একদিন ওই মহিলাকে নিজের জীবনের অতীত কাহিনী খুলে বলে। ওই মহিলার নাম রেকসোনা। সুভার জীবনের অতীতের সম্পর্কে যখন রেকসোনা আপা জানতে পারে তখন তার সুভার জন্য খুব কষ্ট লাগে।
এক রাতে রেকসোনা আপা ঘরে বসে সুভার কথা চিন্তা করছিল এমন সময় দরজার কড়া নাড়ার শব্দ শুনল। দরজা খুলে আপা দেখে তার বড় ভাই আফসার আলী। আফসার আলী একটি প্রকাশনা কোম্পানিতে চাকরি করে।খুব দয়ালু লোক। উনি আপার বাসায় কিছু দিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন। এমনই এক রাতে খাবার পর দুই ভাইবোন বসে গল্প করছিল। হঠাৎ করে রেকসোনা আপার সুভার কথা মনে পড়ল। তিনি সুভার অতীত সম্পর্কে যা কিছু জানেন সব ওনার ভাইকে খুলে বলেন। আফসার আলী সবকিছু শুনে সুভাকে দেখার তীব্র ইচ্ছা পোষন করেন। পরদিন রেকসোনা আপা তার ভাইকে সাথে নিয়ে গার্মেন্টসে গেলেন এবং সুভার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুভাকে দেখে আফসার আলীর খুব মায়া হল। তিনি সুভাকে অনেক সাহস দিলেন। তিনি সুভাকে একটা খাতা কলম দিয়ে বললেন,”তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতি মেয়ে। তোমার অতীত সম্পর্কে আমি সব কিছুই শুনেছি। আজ বাড়ি গিয়ে তোমার অতীত থেকে বর্তমানের সবকিছু লিখবে। লিখে কাল এইখানে আমি তোমার রেকসোনা আপার সাথে আসব।কাল তখন তুমি খাতাটা নিয়ে আসবে। যদি তুমি তোমার অতীতের সবকিছু লিখে খাতাটা আমাকে দাও আমি হয়তো তোমার কোনো সহায়তা করতে পারব।” বলে উনি চলে গেলেন। সুভা তখন মনে মনে ভাবল, “আল্লাহ হয়তো এবার তার সহায় হল।” সেইদিন সুভা ঘরে ফিরে রাতে হাসিকে খাবার খাওয়ানোর পরে ওকে ঘুম পাড়িয়ে লিখতে বসে। “কি লিখব, কোথা থেকে শুরু করব, জীবনের এইপ্রান্তে এসে আমার কি ই বা লেখার আছে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,…………………………………………।” সুভা এইভাবে নিজের জীবনের করুন কাহিনী লিখল। সম্পুর্ন লিখে খাতা বন্ধ করল ঠিক তখনই ফজরের আযান দিল। সারা রাত বসে সে তার অতীতের কথা মনে করে কেঁদেছিল আর লিখেছিল। সুভা তার কর্মস্থলে গিয়ে দেখতে পেল সেখানে আফসার আলী তার জন্য অপেক্ষা করছে। সুভা খাতাটা আফসার আলীকে দিল। খাতাটা নেওয়ার সময় আফসার ভাই বলেন, “তুমি কখনও একা নও। যখনই নিজেকে একা ভাববে মনে করবে তোমার এই আফসার ভাই তো আছে। আজ থেকে তুমি আমার বোন।” সুভা কথাগুলো শুনে ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে দিল। “হ্যা,আমি তোমার বড় ভাই আর রেকসোনা তোমার বড় বোন। আজ থেকে আমরাই তোমার পরিবার,বোন।” বলে আফসার ভাই খাতাটা নিয়ে চলে গেলেন। তারপর সুভা কাজে যোগদান করল। কিন্তু কাজের মাঝেও তার সারাদিন একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল “আমার কপাল দোষে আজ আমি কোথা থেকে কোথায়, কি কাজ করছি আর যে আমার আপন ভাই আমার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করল কিন্তু আজ অন্য অপরিচিত লোক এসে আমার সাহায্য করতে চাইছে। সে আমার ভাই হতে চাইছে,,,,,,,,,,,,,,,,,।” এসব কথা সুভা ভাবছিল আর মনে মনে আল্লাহর প্রশংসা করছিল।
প্রায় এক সপ্তাহ পর, এক দুপুরে খাবার খাওয়া পর সুভা আবার কাজে যাবে ঠিক সেই মূহুর্তে গার্মেন্টসের ওয়েটিং রুমে কে যেন তার জন্য অপেক্ষা করছে। শুনে গিয়ে দেখে আফসার ভাই তার জন্য অপেক্ষা করছেন। হাতে গিফট পেপারে মোড়ানো বইয়ের মতো কি একটা জিনিস। সে আফসার ভাইকে বলে,”ভাইয়া আপনি? কোথা থেকে হঠাৎ করে? আর হাতে এইটা কি?” জবাবে তিনি বলেন,”বসো বোন বলছি,আমি আমার বাসা থেকে সোজা এখানে এসেছি। আর হাতের এইটা হল তোমার লেখা বই। জানো বইটার নাম কি?” সুভা তো অবাক প্রায়। প্রশ্ন করল, “কি?” “বইটার নাম হল ‘জীবনে মোড়’ যেটা তোমার জীবনের মোড়কে ঘুরিয়ে দেবে।” বলে তিনি গিফট পেপার খুলে বইটা সুভার হাতে দিলেন। সুভা ভাবতেই পারেনি আফাসার ভাই তার লেখাগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে একটি বই প্রকাশিত করে ফেলবেন। আফসার ভাই বইটা সম্পর্কে আরও বললেন “এইটা হল তোমার কপি আর বাকি কপিগুলো ইতিমধ্যেই বাজারে চলে এসেছে।” এরই মধ্যে রেকসোনা আপা চলে এলেন। তিনি এসে শেষের কথা গুলো শুনতে পেলেন এবং বললেন, “হ্যা,আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। কারন আমি গার্মেন্টসের সবাইকে বইটার সম্পর্কে বলব যার কারনে সবাই বইটা কিনতে আগ্রহী হবে।” সুভা তখন ঝরঝর করে কেঁদে দিল। ভাবতেই পারনি এত উপকার ওনারা করবেন।সুভা তখন কৃতজ্ঞতার চোখে বলল,”আপনাদের এই উপকার আমি কখনো ভুলব না।”
সুভার লেখা “জীবনের মোড়” বইটি তার জীবনের মোড়কে ঘুরিয়ে দেয়।বইটি বাজারে আসার পর অনুমানের থেকে বেশি বিক্রি হয়। বইটি পাঠকদের মনে সুন্দরভাবে জায়গা করে নেয়। সে যে গার্মেন্টসে চাকরি করে সেখানের সবাই উৎসুক হয়ে একটা করে বই কেনে। তাতে তারা পড়তে পারুক আর নাই পারুক। তারা সবাই সুভাকে আর্থিকভাবে সাপোর্ট করার জন্য বইটা কিনেছে। এই বইটা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বই লেখার প্রতি সুভার আগ্রহ অনেকটা বেড়ে যায়। সে অবসরে যখনি সময় পায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর নিজের মনের ছবি ফুটিয়ে তাকে গল্পের রুপ দেয়। এইভাবেই কেটে গেল প্রায় পাঁচটি বছর। হাসি এবার থেকে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। আসলে ও এবার ছয় বছরে পা দিয়েছে তো। সুভা এখন সেই গার্মেন্টসের সুপারভাইজারের কাজ করছে আর পাশাপাশি বই লেখে। “জীবনের মোড়” থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সে অনেক গুলো বই লিখেছে। সুভা তো ঠিকই করে নিয়েছে যে সে আর কখনো বিয়ে করবে না। বাকি জীবনটা সে হাসিকে নিয়েই পার করে দেবে। জীবনটা এরকমই হয়। কখনো রং বদলায়। কখনো বা মোড়টাই ঘুরে যায়।
০ Comments