গল্প: জীবনের খেলা
লেখা: নিলয় রসুল
ঠোঁটের কোণে জমে থাকা কালো রক্ত মুছতে গিয়ে ব্যথায় অস্ফুট একটা আর্তনাদ বেরিয়ে আসলো মোতালেব এর মুখ থেকে। মুহূর্তেই মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। চোখ সহসা রক্তিম বর্ণ ধারণ করল। চোখের কোণে নোনা জল শুকিয়ে আঠালো হয়ে গেছিল অনেক আগেই , গালের ওপর যেখানে লোনা জলের ধারা বইয়ে গেছে সেই জায়গা গুলো চটচটে হয়ে গিয়েছে। আবারও চোখের কোণ থেকে পুণরায় নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। তবে মোতালেব এবার আবিষ্কার করলো, নোনা জল গুলো চোখের কোণ থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে চোখ ভীষণ আকারে জ্বালা পোড়া করতে শুরু করে দিয়েছে। যেন মনে হচ্ছিল চোখ থেকে জল নয় আগ্নেয়গিরির লাভা উদগিরণ হচ্ছে।
খোঁড়াতে খোঁড়াতে মোতালেব সামনে এগিয়ে যেতে থাকল। ডান পা অসহ্য যন্ত্রণা করছে, মাথার ওপর মনে হচ্ছিল কেউ যেন উদ্যমহীনভাবে হাতুড়ি পিটিয়ে চলেছে। তবে মোতালেব এর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ সে খুব ভালো করে জানে আর যায় হোক সে মরবেনা। তারমতে, আল্লা গরীব মাইনষেরে সহজ মারতে চাননা। তাদের কষ্টে ধুঁকে ধুঁকে মারেন। আর বড় লোকরা গলায় মাছের কাটা ফুটলেও বিদেশে পাড়ি দেয়।
মোতালেবের মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তার প্রতি ক্ষোভের অন্ত থাকে না। আবার মাঝে মাঝে উনারই সুনামে সে পঞ্চমুখ!
মোতালেব আর হাঁটতে পারছে না। চোখ থেকে জলকণা বেরিয়ে আসতে চাইছে বারবার। নিজেকে সে আর সামলাতে পারছে না। মনে হচ্ছে এই বুঝি সে ঢলে পড়বে নিচের দিকে। হাত পায়ের রগ গুলোতে টান ধরছে খুব। দাঁতে দাঁত চেপে হাঁটছে ও। চোখের সামনে ধীরে ধীরে যেন সব অদৃশ্য হতে শুরু করেছে। মাথাটা মনে হচ্ছে আজকে যেন ওর দেহের থেকেও বহুগুণ ভারী। যখন কাগজ ফেরি করে তখন মাঝে মাঝে আল্লাহর পক্ষ থেকে সৌভাগ্য নেমে আসে তার, অনেক কাগজ,ভাঙা জিনিসপত্র পায়। কোন কোন দিন যেসব বাড়িতে সদ্য মেরামত এর কাজ শেষ হয়েছে সেখানে প্রচুর লোহার ভাঙা অংশ, সিমেন্ট এর বস্তা, মাঝে মাঝে মিস্ত্রিদের ভুলে ফেলে যাওয়া কাজের যন্ত্রপাতিগুলো পায় সে। প্রথমে নিতে ইতস্তত বোধ করলেও পেটের ক্ষুধার কাছে সবকিছু তুচ্ছ। কিন্তু আজকে ওই ভাঙা লোহার থেকেও মাথাটা বেশি ভারী বলে বোধ হচ্ছে ওর। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না মোতালেব। চোখের সামনে সব ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে। ক্যমেরাতে ফোকাস দিলে যেরকম ঘোলা হয়ে যায় চারপাশ, ঠিক তেমনই এখন সবকিছু ঘেলাটে লাগছে ওর। তারপর হঠাৎ নিজেকে খুব পাতলা মনে হলো। মনে হলো চারপাশে গাছপালা উদ্যমহীনভাবে ঘুরছে তো ঘুরছেই। তার সাথে পাল্লা দিয়ে ঘরবাড়ি গুলোও ঘুরছে আর একটা কুকুর বিরামহীন ভাবে “ঘেউ ঘেউ ঘেউউ…” করে ডেকে চলেছে। গাছপালা ঘরবাড়ি যখন ঘুরছিল তখন মোতালেব আবছা ভাবে দেখতে পেলে ওর মা দাড়িয়ে বলছে,”খেয়ে নে বাবা, জেদ করিস না!” ওর বোন বলছে,”ভাইয়া আজ বাড়ি আসার সময় আমার জন্য সফট টয়েজ আনবি!” ওর বাবা বলছে,” ওদের সাথে আর মিশবে না তুমি। আর গাড়ি করে বেশি ঘোরাঘুরি করার দরকার নাই” তারপর হঠাৎ মনে হলো শরীরটা ঝাকি দিয়ে উঠলো ওর। তারপর! তারপরে আর কিছু মনে নেই ওর।
দুই.
“কী অইলো মিয়া, এইহানে শুইয়া পড়ছিলা ক্যান। তোমারে তহন কইলাম চারডে খাইয়া যাইতে তুমি তো হুনলানা। এহন এইহানে রাস্তার মদ্যিখানে শুইয়া পড়লা!” রহমত কথা গুলো বলছে আর দোকানের জিনিস পত্র গুলো গোছাচ্ছে।
“আ! আমি কোথায় ভাই?” ধীর কণ্ঠে মোতালেব প্রশ্ন করল।
“হামারে চিনলানা মিয়া! আরে অই যে সক্কাল বেলা আইছিলা তুমি। আমি দুকান ঘর তুলচিলাম। তহন তোমারে ভাঙড়ি গুলা বেঁইচা দিয়া এইহানে আইলাম। আমি অইলাম গিয়া.”
রহমতকে মাঝ পথে থামিয়ে দিলো মোতালেব। হাতের ইশারায় পানির জগ এর দিকে ইঙ্গিত করে আস্তে করে বলল,” জল দেন একটু। পান করবো!”
রহমত তড়িঘড়ি করে উঠে গিয়ে দেখল জগের ভিতরে খুব একটা বেশি পানি আর সেই সকালে আনা হয়েছে। একবার মোতালেব এর দিকে তাকালো তারপর জগ এর দিকে তাকালো। জগ হাতে নিয়ে বাইরে ছুট দিলো টিউবওয়েল থেকে টাটকা জল নিয়ে আসার জন্য।
মোতালেব চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বসতে গিয়ে অনুভব করলো ডান হাত, দুই পা আর মাথা সাদা কাপড় দিয়ে বেষ্টন করে রয়েছে। বা হাত দিয়ে সেগুলে ধরতেই বুঝতে পারলেন ডাক্তার তার হাত পা মাথা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। যখন ভদ্রলোকের বেশ ধারন করা অমানুষ গুলো মোতালেকে রাস্তার ওপর রেখে সাঁপকে মারার মতো করে আঘাত করছিলে তখন মোতালেব আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ডান হাত মাথার ওপর। তখন মাথার ওপর লাঠির বাড়ি থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তার ডান হাত ভেঙে গেছে। মুহূর্তে মোতালেব এর সামনে সব কুয়াশা কেটে গিয়ে সূর্যের সুক্ষ কিরণের মতো সব ঘটনা মনে হতে লাগল। বড্ড অবাক হলো সে। কারণ অমানুষ গুলো মোতালেব এর ডান হাতের ওপর যেভাবে মেরেছিলো মোতালেব এর স্পষ্ট মনে আছে তখন ডান হাত যন্ত্রণাতে ফেটে যাচ্ছিল। ও টের পেয়েছিল ওর ডান হাত ভেঙে গেছে। ডান হাত ভাঙার কথা মনে হতেই মোতালেব তড়িৎ বেগে ওর ডান হাতের দিকে তাকাত গিয়েই আবারও মাথা আবার ঘুরে উঠলো। মোতালেব আবারও জ্ঞান হারলো। লুটিয়ে পড়লো দোকানের ভিতরে বসার জন্য রহমত মিয়ার চৌকির ওপর।
“কিরে বাবা,তখন ওভাবে তর্ক করতে গেলি ক্যান ওদের সাথে। দেখেছিস তো বাবা মায়ের কথা শুনতে হয়। তোর বাবা তোকে সবসময় বকা দিতেন যেনো মুখে মুখে তর্ক না করিস তুই। অথচ তুই সেটাই করলি আজ। শোন বাবা, আর তর্ক করিস না কারোর সাথে। মনে রাখবি যারা ভদ্রলোক হয় তাদের অধিকাংশ হয় জাত বদমাশ,তাদের চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকে কুকুরের ন্যায় আরেক রূপ! বুঝেছিস তো! ” তারপর ধীরে ধীরে কোথা হতে যেনো ধোঁয়া চলে আসলো। মোতালেব এর মা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে সে ধোঁয়ার ভিতরে। মোতালেব হাঁপাচ্ছে আর চিৎকার করে বলার চেষ্টা করছে “মা” কিন্তু কে যেনো মনে হচ্ছে ওর গলা শক্ত করে চেঁপে ধরেছে ঠিক বিকেলের ওই নরমানব গুলো যেভাবে মোতালেবকে মারছিলো সেভাবে। বিকেলের ওই ঘটনা মনে হতেই মোতালেব এর কানে ভেসে আসতে লাগলো কিছু কথা,” হালার পুতকে মাইরা ফালা হক্কলে মিলা” কেউবা মাজার ওপর লাথি মেরে বলছে,” ফকিন্নির পোলা, ফকিন্নি, বাপের জন্মে ১০০ টাকার নোট দেখেছিস, তোর কাছে অতো ট্যাহা কেমতে আইলো৷ মার হালারপোকে মার সক্কলে। হালারপো চুর একটা৷ কোত থিইক্যা চুরি করচে কেডা জানে,মার হারামজাদারে। দে আর দুটো বাড়ি দে পাছার ওপর!” কেউবা বলছে,” কুত্তার বাচ্চা, কাগজের দাম পনের ট্যাহা আর তুই বারো ট্যাহা কেজি চাস! মার সব! ”
হঠাৎ আবার হৈচৈ। এলোপাথাড়ি সবাই মারছে। কেউ একজন গলা চেঁপে ধরেছে, মোতালেব সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে উঠে দাড়াতে৷ শেষে এক ধাক্কাতে মোতালেব সবাইকে সরিয়ে “মা” বলে চিৎকার করে উঠে বসলো।
সারা শরীর ঘামে ভিজে চপ চপ করছে। রহমত মোতালেব এর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ডলছে আর বলছে,” দুঃস্বপ্ন দেকচো নাকি মিয়া, অমন নড়তে নড়তে ‘মা’ বলে চিল্লায়া উটলা যে!”
মোতালেব কোন কথা বলছে না। বুকের ভিতর এখনও কাঁপছে থর থর করে। শরীর হতে অনবরত ঘাম ঝরে পরছে ওর। নির্বাক চিত্তে মোতালেবকে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উৎকণ্ঠিত ভাবে রহমত আবার বললো,” জল খাইবা নাকি মিয়া!” বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে সোজা জগ এর কাছে চলে গেলো রহমত। একবার এক ফেরিওয়ালার কাছ থেকে একটা প্লাস্টিকের মগ কিনেছিলো ও,পাছে যদি কোন বড় বাবু পানি খেতে চায়,তাহলে আর যায় হোক তাদের স্টিলের গ্লাসে পানি দেওয়া মোটামুটি বেয়াদবীর পর্যায় বলে মনে করে মোতালেব। যদিও তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে, কোন বাবু পানিও খেতে আসেনি ওর দোকানে, আর কোন জিনিসও কিনতে আসেনি। রহমত মাঝে মাঝে ভাবে বড়লোকেরা ফুটপাতের একশ টাকার জিনিস বড় বড় ঠান্ডা ঘর ওয়ালা দোকান থেকে হাজার টাকায় কিনে বেশি তৃপ্তি বোধ করে। তারপরও ভবিষ্যত এর কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বিধায় মোতালেব প্লাস্টিকের মগটা কিনে রেখেছিল অনেক দিন হলো। তাই মগের ভিতর ধুলোবালি জমেছে অনেক। রহমত মগটা পরিষ্কার করতে করতে মোতালেব এর কথা মনে হলো। ওর মুখ দেখলে ভীষণ মায়া হয় রহমতের। মগ পরিষ্কার করে দোকান বন্ধ করার আগে জগ ভর্তি করে জল এনেছিল সেখান থেকে মগে পানি ঢেলে, একটা পাউরুটি প্যাকেট থেকে বের করে নিয়ে মোতালেব এর সামনে এসে বসলো। মোতালেব এর সামনে পাউরুটি আর পানির মগ ধরে বলল,”খাইয়া নাও মিয়া,শরীলডা তুমার ভারী দূর্বল বোধ করি।”
মোতালেব রহমতের দিকে তাকিয়ে বলল,” আমার মা! চারিদিকে আগুন, শুধু ধোঁয়া, দম বন্ধ হয়ে আসছিল, আমার মা!” শেষ বার ” আমার মা” বলতে গিয়ে গলাটা কেঁপে উঠলো মোতালেব এর।
তিন.
মোতালেব খুব কষ্ট করে চোখ খুলে দেখে রহমত দোকানের জিনিস বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে আছে। হঠাৎ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মোতালেব এর জ্ঞান ফিরে এসেছে। রহমত সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁক ছাড়লেন, ” অ ডাক্তার বাবু, যায়েন না, হেতের জ্ঞান ফিইরা আসছে!” কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে মেতালেব এর কপালে হাত দিয়ে কী যেন ভাবল। তারপর কিছু জ্বরের ঔষধ লিখে দিলো। রহমত বারবার ভাবছিলো,ইশ্ ডাক্তার যদি একবার পানি খাইতে চাইতো তাহলে রহমত এর প্লাস্টিকের মগ কেনাটা সার্থক হতো!
ডাক্তার যাওয়ার সময় বললেন, ” ওকে রেস্ট নিতে বলো। কয়েকদিন পর আমার চেম্বারে ওকে একবার নিয়ে এসো।” ডাক্তারের শেষ কথাটাতে রহমত এর মুখ এর ওপর মুহূর্তেই শ্রাবণ মাসের ঘন কালো মেঘের ছাপ পরে গেলো। রহমত জানে ডাক্তারের চেম্বার মানেই অনেক টাকার কারবার। তাই চুপ করে থাকাটাই তার কাছে শ্রেয় মনে হল তখন!
ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে মোতালেব। একজনকে সাহায্য করতে পেরে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান বলে মনে করছে রহমত। কিন্তু আজ হঠাৎ সন্ধ্যাতে মোতালেব এর জীবন এর কিছু ঘটনা শুনে একবারে থেমে গেছে রহমত। স্তব্ধ হয়ে গেছে ওর আশেপাশের সব কিছু।
রহমত এর কল্পনার সেই বাবুর মতোই ছিলো মোতালেব এর জীবন।
মোতালেব ওর নিজের রাখা নাম। আসল নাম ছিলো আদ্র। বাবা মায়ের বড় আদরের অবাধ্য সন্তান ছিলো সে। মাটিতে পাও দিতো না। যেখানে যেত সাথে পার্সোনাল গাড়ি নিয়ে যেত আদ্র। হঠাৎ সর্বনাশা এক অগ্নিকান্ড, ধ্বংস করে দিলো আদ্রের জীবন। সেদিন বাড়ি থেকে সবে মাত্র বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন ওর ছোট বোন প্রতিদিনের মতো ওর ঘরে এসে বায়না জুড়ে দিয়েছিল তার জন্য সফট টয়েজ কিনে আনতে হবে। আদ্র কোন কথা না বলে যখন হাতে হাতঘড়ি পড়তে ব্যস্ত তখন নিচতলা থেকে একটা চিৎকার এর শব্দ ভেসে আসলো আদ্রর কানে। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না আদ্রের যে কণ্ঠটা তার মায়েরই ছিল। ক্ষণকালও বিলম্ব না করে আদ্র সিঁড়ি দিয়ে নিচে আসতেই দেখে রান্নাঘরে আদ্রের মা গগনবিদারী চিৎকার করছে আর দাপাদাপি করছে, গ্যাসের চুলা থেকে আদ্রের মায়ের শাড়িতে আগুন ধরে গিয়েছিল। সেখান থেকে মুহূর্তেই পুরো রান্নাঘর জ্বলে উঠলো। আদ্রের বাবা বালতিতে করে পানি নিয়ে যাওয়ার সময় মেঝেতে পড়ে থাকা শক্ত কিছু একটার সাথে পা আটকে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে আগুনের গোলার ভিতরে পড়ে গেলেন। আদ্র পাথর হয়ে গেছে। কী হচ্ছে, কী হবে ও কিছুই বুঝতে পারছেনা। চোখের সামনে মা আগুনে জ্বলে যাচ্ছে, বাবার বুক পুড়ে,হাত পা পুড়ে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে চারিদিকে। শুধু আগুনের গোলা থেকে একটা করুণ সূর ভেসে আসলো,” আ..আদ্র, তোর বোনাকে নিয়ে পালারে বাবা। নয়তো সবাই মরে…!” বাকী কথা আর শোনা গেলো। শুধু ভিতর থেকে আত্ম চিৎকার ভেসে আসছে। আগুন ডাইনিং রুম ছেয়ে গেছে। আদ্র হঠাৎ খেয়াল করলো ওর বোন ডাইনিং রুমে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। হাত পা ছুড়ে দাপাদাপি করছে আর কী চিৎকার! আদ্রর সাথে ঝগড়া হলেও বা কোন কিছু না পেলেও ওর বোন কখনও এত জোরে চিৎকার করেছে বলে আদ্রর মনে হল না। আদ্রের কানে শুধু আবছা ভাবে ভেসে আসছিলো, “ভা..ভাইয়া গো..! ও ভা ই য়া আমার হাত পা জ্বলছে খুব! ও আল্লাহ্ গো! মরে গেলাম। ও মা গো! ও আল্লাহ্! ভাইয়া আমাকে বাঁচা। ও ভাইয়া.. ও ও ও মা গো..!আল্লাহ্ গোও…! ” তারপর আর কোন স্পষ্ট কথা শুনতে পাচ্ছিল না আদ্র। শুধু আড়ষ্ট কণ্ঠে একবার “ভাইয়া ” ডাক শুনতে পেলো।
এক মুহূর্ত, কয়েক সেকেন্ড এর মাঝে চোখের সামনে মা,বাবা তার আদরের বোন জ্বলছে এখন আগুনে। ঘরে মানুষ পোড়া দূর্গন্ধ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। আদ্র হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে নিরব দর্শকের মতো করে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে একবার রান্না ঘর দেখছে একবার ডাইনিং রুম দেখছে!
আগুন যেন ওদের খেতে পেরে আরো শক্তি পেয়ে তেজী হয়ে উঠেছে। আজ সে লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছে, “আদ্র ভিলা” বাড়ির সব সদস্যকে সে আজ খাবে,তৃপ্তির সাথে খাবে।
যখন আদ্রের জ্ঞান ফিরলো তখন বাড়ি থেকে একটু দূরে ঘাসর ওপর শুইয়ে আছে সে। চোখ খোলার চেষ্টা করলো ও। চোখের পাত চোখ থেকে একটু দূরে সরে যেতেই আদ্র দেখতে পেলো পুরো বাড়ি জ্বলে পুড়ে শেষ। এখন আর আগুনের তেজ নেই। একটা চিকন ধোঁয়ার কুন্ডলী ঘুরতে ঘুরতে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। আদ্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল প্রথমে ওর বাবা ধোঁয়া বেয়ে ওপরে যাচ্ছিল আর আদ্রকে বলছিল, “তারাতারি বাড়ি ফিরবে, বেশি রাত করে বাড়ি ফেরা আমি একদমই পছন্দ করি না। ” তারপর ধোঁয়ার কুন্ডলী বেঁয়ে আদ্রর মা উঠে যেতে যেতে বলছিলেন, ” শোন বাবা,কখনও কারোর সাথে মুখে মুখে তর্ক করবি না। আর সময় মতো সব খাবার খেয়ে নিবি, একটু অনিয়ম হলেই তো তোর আবার মাথা ঘোরে! ” সব শেষে আদ্রের বোন ধোঁয়ার কুন্ডলী দিয়ে উঠে যেতে যেতে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আবদার এর কণ্ঠে বলল,” ভাইয়া আমার জন্য কিন্তু সফট টয়েজ কিনে আনবি আসার সময়! ” তারপর সবাই অদৃশ্য হয়ে গেলো। আদ্রর ঘর থেকে যে ধোঁয়ার কুন্ডলী বের হচ্ছিল এতক্ষণ তা হঠাৎ মিলিয়ে গেল।
পরে যখন আবার জ্ঞান ফিরে আসে আদ্রর তখন সে জানতে পারে সে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে। বাড়ির কাজের লোকেরা ওকে ওই আগুনের গোলা থেকে উদ্ধার করে এনেছে,এতে তারাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আর বাড়ির সবাই আদ্রর সাথে সকল হিসেব চুকিয়ে দিয়ে ওপারে বেড়াতে চলে গেছে, আদ্র কারোর কথা শোনে না তাই হয়তো ওকে ওরা সঙ্গে নেয়নি।
রহমত গলায় ঝুলে থাকা ছেঁড়া গামছা দিয়ে চোখের নোনা জল গুলো মুছতে মুছতে বলল,” তা’পর! তা’পর কী হলো বাবু!”
আদ্র কিছুক্ষণ থেমে থাকলো। কোন উত্তর দিলো না। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আকাশে ঘন কালো মেঘেরা জমাট বেধেছে, আদ্রর চোখের কোনে আবার জল কণা জমতে শুরু করেছে। হয়তো এখনই বৃষ্টি নামবে আকাশ থেকে।
আদ্র রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে, জীবন থেমে থাকে না সে চলে আপন গতিতে, চলতেই থাকে। জীবন আর সময় দুটোই বড় নিষ্ঠুর। কেউই থামতে চায় না। আপন গতিতে চলতে থাকে শুধু। চলার পথে ক্লান্তি চলে আসে, চলার ইচ্ছে না থাকলেও চলতে হবে এটাই যে নিয়ম!
হঠাৎ পিছন থেকে রহমত বলে উঠলো
“এ’কদিন তো ভালোমন্দ তেমন কিচু খাওয়াইতে পারলামনা , একদিন সময় কইরা আইসো মিয়া, দুইডা ভাত খামুনে এক লগে বইস্যা.!” আদ্র ম্লান হাসি হেসে আবারও চলতে শুরু করলো উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের পথে। মাথার ভিতরে শুধু একটা কথাই বারবার নাড়া দিচ্ছে, ” ভদ্রলোক গুলো সামন্য কারণে মুখ খারাপ করে গালাগালি করে,মারধর করে,অথচ রহমত এর মতো লেকেরা যার নিজেরই পেট চলেনা ঠিকমতো সে ওকে দুপুরে খাবার নিমন্ত্রণ দেয়,কী আজবরে বাবা এ দুনিয়াটা!”
সমাপ্ত
আল্লা-আল্লাহ্
মাইনষেরে-মানুষকে (যেহেতু চলিত ভাষা ব্যবহার হয়েছে সেটাই দেওয়া উত্তম)
ঘোরাঘুরি-ঘুরাঘুরি
শুনে-শোনে
বাকী কথা আর শোনা গেল(লাইনটা মনে হয় এইভাবে হবে, বাকি কথা আর শোনা গেল না)
পড়তে-পরতে
দাড়িয়ে-দাঁড়িয়ে
তারাতারি-তাড়াতাড়ি
ঘোরে-ঘুরে
পারলামনা-পারলাম না
সামন্য-সামান্য
লেকেরা-লোকেরা
চলেনা-চলে না
কী-কি
যাইহোক অনেক কষ্টের একটা গল্প পড়লাম অনেক ভালো লেগেছে। বানান ভুল বলে দিলাম দেখে নিবেন, শুভ কামনা রইল।
প্রতিযোগিতার গল্পে এত বানান ভুল থাকলে দৃষ্টিকটু লাগে। রাহিম মিয়া বানানগুলো উল্লেখ করে দিয়েছে তাই আমি আর মার্ক করলাম না। স্যাড ভালো লিখেছেন। লেখায় আরও ধার আনার চেষ্টা করবেন। শুভকামনা।
আসসালামু আলাইকুম। গল্ল প্রসঙ্গে কিছু কথা :
গল্পটা মোটামুটি ভালো লেগেছে। খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারেনি। অনেক ভুল রয়েছে যা গল্পের মান নষ্ট করেছে। সম্বোধনে সমস্যা রয়েছে। একবার ও একবার সে করে এবং কখনো বা আপনি করে সম্বোধন করা হয়েছে যা বেমানান। তাছাড়া বানানেও অনেক ভুল বিদ্যমান। নিচে ভুলগুলো লক্ষণীয় :
গুলো শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বসে। যেমন-
কথা গুলো – কথাগুলো
অমানুষ গুলো – অমানুষগুলো
রগ গুলো – রগগুলো
জায়গা গুলো – জায়গাগুলো
ইত্যাদি
না যুক্ত হয়ে বসে না। যেমন –
চিনলামনা – চিনলাম না
চাননা – চান না
মরবেনা – মরবে না
ইত্যাদি
চিহ্নের ব্যবহারে আরও সচেতন হতে হবে।
অন্যান্য ভুল:
পরে – পড়ে
দূর্গন্ধ – দুর্গন্ধ
পুণরায় – পুনরায়
ঘাসর ওপর – ঘাসের উপর
পাত – পাতা
বেঁইচা – বেইচা
কোন – কোনো
যায় হোক – যাইহোক
ঝাকি – ঝাঁকি
দাড়িয়ে – দাঁড়িয়ে
সূর – সুর
তারমতে – তার মতে
আল্লা – আল্লাহ
চেঁপে – চেপে
মোতালেকে – মোতালেবকে
করছিলে – করছিল
বাকী কথা আর শোনা গেলো – বাকি কথা আর শোনা গেল না
লেখায় আরো মাধুর্যতা আনা প্রয়োজন। আগামীর জন্য শুভ কামনা।
অসাধারণ লিখেছেন।
অন্যরকম একটা গল্প পড়লাম।
মনোমুগ্ধকর লেখা।
প্রতিযোগিতার গল্পে এতো বানান ভুল হলে হয়।
বানানের প্রতি যত্নশীল হবেন।
লেখার হাত ভালো। এগিয়ে যান।
শুভ কামনা রইলো।
সুন্দর লিখেছেন। বর্ণনার ধরনও ভালো। সবমিলিয়ে গল্পে বোঝানো হলো, ভদ্রলোকেরা শুধু দেখতেই ভদ্র। কিন্তু গরিবেরা দেখতে অভদ্র হলেও ভেতরে ভদ্রতা বসবাস করে। একদম বাস্তবতার সাথে মিল আছে।
একটা বড় ভুল, রান্নাঘরে মায়ের কাপড়ে আগুন লাগল, বাবা পিছলে আগুনের গোলার মধ্যে পড়ল।
আগুনের গোলা আসলো কথা থেকে? মুহূর্তেই ডাইনিং রুমে বোন পুড়ছে। কেমন একটা ভৌতিক টাইপের মনে হচ্ছিলো। বাট, ভৌতিক নয়। ভৌতিক হকে মানা যেতো। বাট সাধারন ভাবে এটা হাস্যকর।