লেখা:মাহামুদা মিনি
.
যুদ্ধ শেষে পতাকা হাতে
দুর্দিন আর শংকট পেরিয়ে অবশেষে,
ফিরেছে মুক্তিসেনা বিবর্ণ মুখে ঘরে।
অভ্যস্ত চোখ তার খুঁজছে দীপ্তিকে,
যুদ্ধে জ্বলে ওঠা চোখ আজ বড্ড ক্লান্ত।
দিনের আলো ফুরাবে বুঝি এখন
নৈঃশব্দ যেনো গ্রাস করছে তাকে।
স্মৃতির পাতায় ভাসে
সেই বিদায় বেলার দীপ্তির মুখখানি,
তারই পাশে ভাসে অগণিত বীভৎস লাশের মুখ।
শোনা যায় হাজারো দীপ্তির সুতীক্ষ্ম চিৎকার।
শূণ্য ঘরে পা রেখে চমকে ওঠে সে,
মেঝেতে পড়ে থাকা বাচ্চার ছবিটা
ইঁদুরে কেটেছে বুঝি!
উৎকর্ণ কানের কাছে যেনো দীপ্তি বলে ওঠে,
ওগো? তুমি বাবা হবে।
নিদ্রাভঙ্গ হয় আচমকা ক্লান্ত মনের,
মনে পড়ে দীপ্তিও যে এতদিনে মা হতো!
দগ্ধ হৃদয়ে বেদনার ভাণ্ডার হয় পূর্ণ,
হাহাকার জাগে মনে
দীপ্তি যে আর নেই বেঁচে!
গণকবরে ঠাঁই মিলেছে তার।
পাকসেনার হিংস্র থাবায় নিভে যাওয়া
রক্তাক্ত দীপ্তির ছবি ভাসে মনে।
না! আর ভাবতে পারে না সে
নীরব অন্ধকার ঢেকে দেয় তীব্র চাহনি,
শোকে কাঁপে মুক্তিসেনার অন্তর।
উঠানের কোণে ওই তো রক্তজবার গাছটা,
নিত্য সকালে যত্ন নিতো দীপ্তি।
আর এই যে গোলাপ গাছে কুঁড়ি এসেছে,
দীপ্তির খোঁপায় ফুলগুলো বড্ড শোভা পেতো।
দুয়ারের দিকে তাকাতেই হঠাৎ কানে বাজে,
ওগো? হাট থেকে কাঁচের চুড়ি এনো,
আর লাল ফিতেও যেনো পাই!
আবার ঘোর ভাঙে মুক্তিসেনার,
মনে পড়ে দীপ্তি যে তার মিশেছে পতাকায়!
বহু যুগ পরেও হঠাৎ কোনো ক্ষণে,
উড়ে চলা পতাকার শব্দে ভেসে আসবে
দীপ্তির নূপুর পায়ে হেঁটে চলার শব্দ।
একেকটা রক্তজবা আঁকবে দীপ্তির মুখ,
গোলাপের সুবাসে ভাসবে
দীপ্তির শরীরের পরিচিত সুগন্ধ।
এই শূণ্য উঠান, শূণ্য ঘর
হয়তো কখনো হবে পূর্ণ,
তবে মুক্তিসেনার দীর্ঘশ্বাসে বারবার
জেগে উঠবে দীপ্তির শূণ্যতা।
কালের বিবর্তনেও হারাবে না দীপ্তি,
লাল সবুজের পতাকা আর
মুক্তিসেনার ব্যথিত উদার বক্ষে পেয়েছে সে ঠাঁই।
নির্বাক_পাখি
হে কবি, শক্ত করে ধরো, তোমার অস্ত্র। আবারো, তোমার অস্ত্রের মধ্য দিয়ে, রক্তে রঞ্জিত করে দাও, এই শুভ্র ময়দান। হে কবি, শক্ত করে ধরো, তোমার অস্ত্র। যেভাবে, কবি নজরুল ধরেছিল, ইংরেজদের বিরুদ্ধে। যেভাবে, কবি সুকান্ত চেয়েছিল, ...
দীপ্তির মত অসংখ্য বীরাঙ্গনার ত্যাগের মূল্য আমরা হয়তো দিতে পারবো না কিন্তু তাঁরা বেঁচে থাকবেন এই স্বাধীন দেশের প্রতিটা স্থানে। অনেক ভালো ছিলো কবিতাটি।
চমৎকার একটা কবিতা পড়লাম। পড়ছিলাম আর যেনো একেকটা দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে উঠছিল। পুরোটা কবিতা পড়ার সময় যেন এক বাস্তবতায় ডুবেছিলাম। বিশেষ করে “ওগো? তুমি বাবা হবে।” এই চরণটি পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল, পরক্ষণেই এক বিষাদের ছায়া ঘিরে ফেলল আমাকে।
আমাদের এই সুন্দর দেশটালে স্বাধীন করার জন্য কত মুক্তিসেনা প্রাণ দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে ছোট্ট শিশুরাও, নারী পুরুষ বৃদ্ধ কেউই রক্ষা পায় নি এই নরপশুদের হাত থেকে। সেই মুক্তিসেনা যখন দেশটাকে স্বাধীন করে বাড়ি ফিরে এমন অবস্থা দেখেছে, সত্যিই এ কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
অনেক সুন্দর লিখেছেন আপনি। শুভ কামনা রইল।
সুতীক্ষ্ম- সুতীক্ষ্ণ হবে।
এই একটি কবিতা স্মরন করিয়ে দেয় সেদিনের হাজারো বীরঙ্গনা দীপ্তির গল্প! তারা তো মরে নি! মরেও তারা বেঁচে থাকবে কোটি বাঙালীর হৃদয়ে।
এ দেশকে স্বাধীন করার জন্য কতো মা বোনের জীবন দিতে রয়েছে।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীন এ দেশ।
পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা।
চমৎকার লিখেছেন।ভালো লাগলো।
শুভ কামনা রইলো।
ওঠা-উঠা
শূণ্য-শূন্য(তিন জায়গাতে শূণ্য লেখা হয়েছে যা শূন্য হবে)
শূণ্যতা-শূন্যতা
বাহ্ অসাধারণ ছিল কবিতাটা। পড়েও অনেক অনেক ভালো লেগেছে। তবে এক লাইনেই একটা উক্তি সুন্দর দেখায়। কিন্তু কবি এক লাইনে শব্দ অনেক জায়গাতে একটা শব্দ নিচে দিয়ে দুই লাইনে করে ফেলেছে। আর ১-২জায়গাতে দাড়ি, কমা বসেনি। তবে কবিতার মাঝে ১৯৭১সালের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।