গল্প লেখকঃ
Maliha Tabassum Momo
(এপ্রিল – ২০১৮)
…………………
দ্বিতীয়বারের মতো কন্যা সন্তানের পিতা হওয়ায় খুশিতে ডগমগ কাশেম।
না, কাশেম কখনোই কন্যা-বান্ধব পিতা ছিলো না। তবে হ্যাঁ, তাকে “Sperm Donor” বলা যায়।
তবে?
আসল ব্যাপার হলো পারিবারিক রাজনীতি আর আসমা বেগমের প্রতি কাশেমের দুর্নিবার আকর্ষণ।
কাশেমের বউ হাজেরা যেদিন প্রথম বউ হয়ে আসে সেদিন থেকে কাশেমের বিধবা মা পেয়ারা বানুর ফর্সা মুখ কালো আর গম্ভীর হয়ে যায়।
বউ পছন্দ হলো না, বউ বাপের সংসার থেকে কিছুই আনেনি যে।
শরমের ব্যাপার না?
পেয়ারা বানু আর পাড়া বেড়ায় না, বেয়াইন বাড়ি থেকে তো কিছুই আদায় করা গেলো না, ভাবি-সমাজ কে মুখ দেখানো যায়?
হাজেরার বাপের সাথে দেখা হলে পেয়ারা বানুর মুখস্ত বুলি
“মাগনা গোছাইয়া দিলেন বেয়াইন?”
আজকাল পেয়ারা বানুর পেট টা কেমন “ফাটি ফাটি” করে। ফেটেই যাবে কোনো একদিন। পেট ভর্তি গ্রামের মেয়েদের কেচ্ছা-কাহিনী; পাড়াময় মসলাদার ঝাল ঝাল গোপন কথা যে বিলিয়ে আসবে তারও উপায় নেই পোড়ামুখী বউটার জন্য।
শরমের ব্যাপার না?
নিরুপায়, অসহায় পেয়ারা বানু ঠিক করলেন বউ তাড়াবেন, পরের বাচ্চা মেয়ে হলেই তাড়িয়ে দেবেন।
যে বউ ব্যাটা দেয় না সংসারে সে কি বউ? নাতো বউ না। যে বউই না তাকে তাড়াবো না কেন?
তাই তো এতো খুশি কাশেম। এক বউ যাবে আরেক বউ আসবে।
সৈয়দ বাড়ি, কাজী বাড়ি, পাল বাড়ি, সাহা বাড়ি, পুবের বাড়ি, পশ্চিমের বাড়ি কত বাড়িতেই তো বউদের যাওয়া-আসা লেগেই থাকে।
এইতো আগে কলতলায় রাণী বৌদি বাসন মাজতো, এখন বাসন মাজে শিউলি বৌদি।
মেয়েমানুষ তো Bus এর মতো, একটা যায় আরেকটা আসে, তাই না!!!
এবার ঘরে তুলবে পাশের বাড়ির আসমাকে। আশ পাশের গ্রামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী আসমা বেগম।
বাচ্চার দুধের টিনের পয়সা দিয়ে প্রায় সিনেমা দেখতে যায় কাশেম, মৌসুমির সিনেমা।
আসমাই হলো কাশেমের “নায়িকা মৌসুমি” কাশেমের “খাইরুল সুন্দরী”
থলথলে হাজেরা আর কত?
ছি ছি, বউ তার ড্রামের মতো।
শরমের ব্যাপার না??
শুরু হলো সাহসী নেত্রী পেয়ারা বানুর ব্যানারে “বউ তাড়াও আন্দোলন”।
বীর বাঙ্গালী বলে কথা, আন্দোলন সফল না হয়ে যায় কোথায়।
একদিন এ বাড়ির পাট উঠে গেলো হাজেরার।
কোন এক বসন্তের বিকেল, ঝিরি ঝিরি হাওয়া দিচ্ছে বেশ। দুটো ফুলের মতো কন্যাদের নিয়ে শ্বশুর বাড়ির চৌকাঠ পেড়িয়ে এলো হাজেরা। হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে পেয়ারা বানু। আর কাশেম কল্পনায় আসমার সাথে জলকেলি তে ব্যস্ত। এদিকে তার বিশেষ নজর নেই।
তবুও হাজেরার প্রস্থানে চোখ ভিজেছিলো একজনের।
কাশেমদের বাড়ির গাভী মেওয়ার।
অবলার প্রতি অবলার দরদ।
মেওয়ার করুণ হাম্বা রবে বিলাপের ধ্বনি। হাজেরা বুঝি মরেই গেলো।
বসন্তের মাতাল করা বাতাসে কোথা থেকে ভেসে আসে রাখালের বাঁশির সুর
“ভ্রমর কইও গিয়া
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে
অঙ্গ যায় জ্বলিয়ারে
ভ্রমর কইও গিয়া”
বাঁশির সুরে কাশেমের জন্য বুকের ভেতর কেমন মোচড় দেয় হাজেরার।
হাজেরার বুকে মোচড়!!! বউ মানুষের মনও থাকে??
শরমের ব্যাপার না??
০ Comments