লেখা :- রাফসান সাইদুল
–আপনি কি ভালবাসতে জানেন ?
–“না” ভালবাসতে হলে একটা মনের দরকার হয় আর সেটা আমার নেই!
–তাহলে কেনো এমন করে তাকিয়ে থাকেন.? ওই অচেনা পথের দিকে.?
–আমি চেয়ে থাকি? নাহ্! আমি চেয়ে থাকিনা কোনো পথের দিকে, যে পথ শুধু কাঁদায় সে পথের দিকে চেয়ে থাকা আমার বোধগম্য নয়।
–তাহলে চলুন!
–কোথায়.?
–নিজ বাসায়, যেখানে রয়েছে আপনার এক পরিবার। পরিবারে রয়েছে আপনার আদরের ছোট ভাই, একমাত্র আদুরে বোন, যে সবসময় আপনার চোখের মণি হয়ে থাকতো, নিজেদের চেয়েও বেশি ভালবাসত যে মা-বাবা রয়েছে তারা সেই পরিবারে।
–আমার কি আদৌ কোনো বাসা রয়েছে.? বাসা তো তাদের হয় যাঁদের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ রয়েছে, রয়েছে পিছুটান। ভালবাসার মানুষের জন্য বাসা তৈরি করে আমিতো সেই বাসা নিজহাতে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেছি। এই দুহাত দিয়ে গলাটিপে মেরে ফেলেছি ভালবাসা,
–ভাইয়া দয়া করে এবার চলুন আমার সাথে!
–তুমি কে? আমার সাথে কথা বলছো কেনো? দূরহও আমার কাছ দিয়ে আমি একটা অমানুষ।
বলেই দৌড়ে পালিয়ে গেলো আমার আপন রক্তের বড় ভাই, মানুষিক চাপ এতটা গভীর পর্যায়ে চলে গেছিলো যে ভাইয়া আজ “মানুষিক” রুগী।
যাকে এক কথায় পাগল বলে। তাকে দেখে বা তারসাথে কথাবলে কেউ বুঝতে পারবেনা যে ভাইয়া একজন মানুষিক রুগী।
ডাক্তার বলেছে ভাইয়ার মানুষিক ভারসাম্য হারিয়েছে ঠিকি কিন্তু তার কথাবলার ধারন প্রকৃতি কিছুই বদলায়নি। যা খুব কমসংখ্যক মানুষের হয়ে থাকে, কিন্তু এমন অবস্থা যাঁদের ই হয়েছে তারা বেশিদিন এ পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি। ৯৯% মানুষ সবাই ই সুইসাইড করে জীবন দিয়েছে, তবে উন্নত চিকিৎসা হলে ভাইয়া ঠিক হতে পারে। তখন মনে হলো আমার জীবন থমকে দাঁড়িয়েছে। দুমুঠো খাবার খেতে যাদের সকাল সন্ধ্যা যুদ্ধ করতে হয় তারা কীভাবে উন্নত চিকিৎসা করাবে.?
ভাইয়া আমাদের সবাইকে খুব ভালবাসতো। ভালবাসতো রূপাকে! যার সাধ্য বিয়ে হয়ে আমার ভাইয়ার বন্ধুর ঘরের ই প্রদীপ জ্বালাচ্ছে।
তারও কিছু করার ছিলোনা, একজন বেকার ছেলের সাথে কারো মেয়ে দিবেনা, এবং এমনকি তারা এটা মনে করে বেকার ছেলেমানুষ একেকজন একটা অভিশাপ। ভাইয়া তখনো ভেঙে পড়েনি। ছোট থেকে আমাদের মানুষ করেছে ভাইয়া, নিজে পড়ালেখার পাশাপাশি যে দুটাকা ইনকাম করতো তা দিয়ে আমাদের জন্য টুকিটাকি খরচ করতো। আব্বু একজন দিনমজুর! তার রোজগার দিয়ে আমাদের দৈনিক দুমুঠো খাবার মুখে দেওয়া কষ্টকর হয়ে যেতো।
বেশিদিন হয়নি! সেদিনের কথা আমার অনার্স এর ফাইনাল পরীক্ষা! সারারাত কষ্টকরে বই কমপ্লিট করতে ব্যস্ত। অন্যদিকে ভাইয়া অনার্স কমপ্লিট করে বেকার হয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। “না” ঘুরে বেরাচ্ছিল না। একটা কাজের খোঁজে কত মানুষের দরজায় মাথা ঠুকরিয়েছে তার হিসেব নেই।
তবুও ভাইয়া রোজ সারাদিন একটা কাজ খুঁজে না পেলে। রাতোর অন্ধকারে রহিম চাচার সাথে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। যাতে আব্বুর কাছে হাত পেতে টাকা নিতে না হয় আমার সেমিস্টার ফিস ও ভাইয়া এমন করেই দিয়েছিল।
রাত তখন ছুঁইছুঁই বারটা ভাইয়া বাসার ভিতরে ঢুকতেই আম্মু
–কিরে এতরাতে কোথা দিয়ে আসলি.? একটু তারাতারি বাসায় আসতে পারিসনা।
–আসলে আম্মু
–দেখ আবির আমার বয়স হয়েছে কাজও করতে পারিনা তোর ভাইও পরীক্ষা দিবে ওকে বলেছিলাম পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটা কাজ শিখতে কিন্তু ও আমাদের মাথায় কতবড় একটা বোঝ সেটা বলে বুঝাতে পারবোনা।
পাশদিয়ে আব্বু কথাটা বললো।
–দেখো আব্বু আমিতা চেষ্টা করতেছি আজকালকার জমানায় ঘুষ ছাড়া তো চাকরি হয়না আর আমার সাধ্য নেই ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে।
–অন্যকিছু করতে পারিসনা.?
–এই তুমি কি শুরু করলে বলতো? ছেলেটা সারাদিন কষ্ট করে এখন বাসায় আসলো আর তুমি শুরু করে দিলে আসতে না আসতেই?
সেদিন কষ্ট পেয়েছি আব্বুর কথায় কিন্তু মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের কষ্ট পেতে নেই তারা জন্মায় ভাগ্যে কষ্ট নিয়ে।
আবির টেবিলে খাবার দিয়েছি খেয়ে নে।
বলেই আম্মু আব্বুকে চুপ করিয়ে দিলো, ভাইয়া হালকা ফ্রেশ হয়ে টেবিলে প্লেট দিয়ে ঢেকে রাখা খাবার খেতে বসলো। উপরের প্লোট সরাতেই দেখতে পেলো অল্পকিছু পান্তা ভাত আর দুটো কাঁচামরিচ,
মনের খুশিতেই ভাইয়া সেগুলো খেয়ে উঠলো একবার ও বললোনা
“মা এগুলো তো রোজকার খাবার অন্যকিছু কি হবেনা”?
প্রায় অনেকবছর ধরে দেখে আসছি এগুলো। ভাইয়া আমাদের জন্য কত কি ত্যাগ করতেছে, নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে আমাদের ভাই বোনের সুখের কথা ভাবছেন এমন “কটা” ভাই আছে যে তার ভাই বোনের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিবে.? হাজারে একটা পাওয়া যেতে পারে তাও খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।
সকালবেলা ভাইয়া যখন ঘুম দিয়ে উঠে, তখন আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
বাতরুম দিয়ে বাহির হয়ে ভাইয়া রান্নাঘরে গিয়ে কি যেনো দেখলো তারপর বাহির হয়ে গেলো বাসা দিয়ে। এসব নিজের চোখের সামনেই হতো, ছোট ঘরের মধ্যে থাকাতে যা হয় সবকিছু দেখা যায় কিছু খেয়াল না করলেও।
আমার প্রস্তুতি শেষ করে নিজেকে গুছিয়ে নাস্তা করতে বসে,
–আম্মু ভাইয়া নাস্তা করেছে.?
–না তোর ভাই কোথায় যেনো চলে গেলো বলে যায়নি।
–ওহ্
বলেই নিজের নাস্তা শেষ করে বাহির হয়ে গেলাম পরীক্ষা দিতে, কিন্তু বাসা থেকে বাহির হয়ে গলির মোড়ে চায়ের দোকানের এক কোণে ভাইয়া বসে চা খাচ্ছে আর তার বন্ধুর সাথে কথা বলছিল। চুপটি করে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার কথাগুলো শুনছি আমি,
–আবির আজকেও সকালের নাস্তা করিস নি তাই না.?
–আরে নাস্তা! সেতো এই এক কাপ চায়ে হয়ে যাবে।
–কেন বলতো আজও কি বাসায় নাস্তা তৈরি হয়নি.?
–হয়েছে তবে আমি খেলে আমার ভাই বোন পেটপুরে খেতে পারতোনা, আজ আবার রাফুর পরীক্ষা ওর খাবার দরকার আছে।
–তারজন্য তুই না খেয়ে থাকবি.?
–না খেয়ে থাকলাম কোথায়.? এইযে এক কাপ চা এতে কাজ চলে যাবে।
পিছনে থাকা আমার বুকের মাঝে এক কষ্টের পাহাড় সৃষ্টি হয়ে গেলো।
যে ভাইয়া আমাদের জন্য নিজে না খেয়ে কষ্ট করছে তাদের জন্য হলেও আমাকে কিছু একটা করতে হবে। শুনেছি ক্যাম্পাস টপার হলে ভালো চাকরি খুঁজে দিয়ে যাবে। সেই আক্ষেপ নিয়ে আর মনে একটা চাপা কষ্ট নিয়ে পরীক্ষা শেষ করি।
যেদিন শেষ পরীক্ষা সেদিন আমার বোনকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসছিলো সেখানে ভাইয়াকে দেখে তারা বাবা-মাকে অপমান করে চলে গেলো।
তার একটা কারন ছিল যে ভাইয়া সেই লোকটার বাসায় দিনমজুর হিসাবে দুদিন কাজ করেছিল। ভাইয়া মনে করে যে তার বোনের বিয়ে ভাঙা এবং আম্মু আব্বুর অপমানের কারন ভাইয়া নিজে।
সেই অপমান ভাইয়া সহ্য করতে পারেনি তখনি মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গেছিলো।
যখন জ্ঞান ফিরে তখন থেকেই ভাইয়ার এমন অবস্থা বাসা দিয়ে বাহির হয়ে গিয়েছে ভাইয়া জোর করেও বাসায় নিয়ে আসা যায়নি ভাইয়াকে।
ভাইয়ার একটা চিকিৎসা ছিল শুধু ওর সাথে ভালভাবে কথা বলা তার ভালবাসার কথা মনে করিয়ে দেওয়া এতে ঠিক হতেও পারে।
তার জন্যই প্রতিদান ভাইয়াকে তার ভালবাসার কথা মনে করিয়ে দেই। চাই ভাইয়া জেনো আবার আগের মত হয়ে যাক। ভাইয়া এই শহরের বাহিরে যায়না, কিছু নির্দিষ্ট জায়গা যেখানে সবসময় ভাইয়া বেশি থাকতো সেখানের আশেপাশে ই থাকে।
মাঝ দিয়ে কিছুদিন কেটে যায় ক্যাম্পাস টপার হয়ে ভার্সিটি থেকে পাশ করে বাহির হই আমি একটা ভালো চাকরির অফার ও পাই। আর সেই খুশির সংবাদ দিতে ভাইয়ার কাছে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা মিনিবাস আমার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখনি কে জেনো আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজে বাসের নিচে পড়ে গেলো। ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সে চারপাশে লোকজন ভীর জমে গেলো মুহূর্তেই আমিও নিজেকে সামলে ভীর উপেক্ষা করে লাশটার কাছে যেতেই আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মাথার উপরে। “ভাইয়া” বলে এক চিৎকার! দু’হাঁটু গেড়ে বসে ভাইয়ার রক্তমাখা শরীরটা নিজ বাহুডোরে নিয়ে বুক ফাঁটা কান্না। এক ভাই অন্য ভাইয়ের লাশ বুকে জড়িয়ে যে অর্থনাধ করে। সেটা পৃথিবীর অন্য কেউ দেখে সহ্য করতে পারবেনা।
“ভাই তুইতো আমার সব দুঃখ গুলো নিজের করে নিলি কিন্তু সুখের সময়ও তুই দুঃখটা নিয়েই চলে গেলি একবার নিজের সুখের কথা ভাবতে পরতি! ভাই তুই কীভাবে পারিস এমনটা বলনা আমাকে একটিবার বলনা ভাই”
কে বলবে এখন এসব কথা.? যে বলার ছিল সেতো চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে।
(সমাপ্ত)6আ
অসাধারণভাবে দুঃখগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গল্পের প্রত্যেকটা লাইনই অনেক সুন্দর। সত্যিই, একজন ভাই কতকিছুই না করে!
সবাই ই — সবাইই
ঘরের ই — ঘরেরই
তারাতারি — তাড়াতাড়ি
একবার ও — একবারও
বেশ আবেগে আপ্লুত হয়ে গল্পটা লিখা হয়েছে। আমার কোন ভাই নেই, তাই ভাইয়ের দুঃখ বুঝিনা। আর গল্পে কিছু ভুল আছে আমার মতে যেমন, কাঁচা মরিচ দিয়ে সবাই ভাত খায় আর সবসময়। একটু বেমানান। দ্বিতীয়, ভাই তার দুঃখগুলো বলে দিচ্ছে, তাহলে কি নিজ দুঃখ শেয়ার করছেনা? কোন ভাই সেটা করতে পারে? শব্দে রয়েছে অনেক ভুল। সর্বোপরি গল্পটা মোটামোটি ছিলো।
খুব চমতকারভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারের সীমাবদ্ধতা ফুটে উঠেছে, মনে ছাপ ফেলার মত গল্প কিন্তু অনেক বানান ভুল ছিল………………’দুরহও’ -‘দূর হও’/’মানুষিক’ -‘মানশিক’/’রুগী’ -‘রগি’/’তারাতারি’ -‘তাড়াতাড়ি’/’অনেকবছর’ -‘অনেক বছর’/’বাতরুম’ -‘বাথরুম’