বন্ধুর হাত ধরে
সাইয়িদ রফিকুল হক
এইচএসসি পরীক্ষার পরে সায়মা ঢাকায় তার বড়খালার বাসায় কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এসেছিল। এসেই তার ঢাকা-শহর ভালো লেগে যায়। আর তখনই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল ঢাকায় পড়বে। তার এই সিদ্ধান্তে আর কোনো নড়চড় হয়নি।
সে ঢাকার একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। এটার ক্যাম্পাস মোহাম্মদপুরে। প্রতিদিন সে তার খালার বাসা মিরপুর থেকে ভার্সিটিতে যায়। কখনও রিক্সায় আবার কখনও বাসে সে যাতায়াত করে থাকে।
সে গ্রামের মেয়ে। এর আগে অল্পবয়সে ঢাকায় এসেছিল কয়েকবার। তখন সে অনেককিছু বুঝতো না। এখন সে সবকিছু বোঝে আর রাস্তাঘাটও চেনে। আর সে একাই চলাফেরা করে।
একদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে সে দেখলো, ভার্সিটির মূলভবনের ছাদে কয়েকটি ছেলে-মেয়ে খুব আপত্তিকর অবস্থায় পাশাপাশি বসে রয়েছে। একটা মেয়ে সায়মাকে একটু দূর থেকে হাত তুলে কাছে ডাকলো। সে ওদের ডিপার্টমেন্টে পড়ে। সেও একটা ছেলের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে ছিল।
সায়মার এসব ভালো লাগলো না। সে ঘুরে দাঁড়ালো।
ওই মেয়েটি তবুও সায়মাকে ডাকছিল। কিন্তু সায়মা ওর কথা শুনে আরও দ্রুত সিঁড়ি মাড়িয়ে নিচে নেমে এলো। তার মনে হলো—এসব প্রেমের নামে সস্তা আড্ডাবাজি। আর এসব খুবই মূল্যহীন।
ক্লাসে ঢুকে সায়মা দেখলো, এখনও প্রফেসর আসেননি। সে ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে আপনমনে পড়তে লাগলো।
একসময় সে অনুভব করলো, কেউ-একজন তার পাশে বসেছে। সে তাকে দেখেও না দেখার ভান করে পড়তে থাকে। আর-একটু পরে সে বুঝলো, এই ছেলেটি তার পাশে আরও ঘনিষ্ঠ হতে চাচ্ছে।
সায়মা কিছু না বলে আস্তে উঠে পড়লো। আর-এক জায়গায় গিয়ে বসলো।
এবার সে তাকিয়ে দেখলো, এই ছেলেটি তাদের ডিপার্টমেন্টে পড়ে না। অথচ, তাদের ক্লাসে ঢুকেছে। এর আগেও সে লক্ষ্য করেছে, এই ছেলেটি তাকে বেশ ফলো করে। সায়মা কেমন যেন ভয় পেয়ে গেল। তবে সে কাউকে তা বুঝতে দিলো না।
সে আবার নিজের মনে বই পড়ছে। এবার ছেলেটি আর কাছে যাওয়ার সাহস পেল না।
ক্লাস শুরুর আগে তড়িঘড়ি করে রুমে ঢুকলো সায়মার সেই বান্ধবী—যে দীর্ঘসময় যাবৎ ছাদে একটা ছেলের সঙ্গে গা-ঘেঁষে বসে ছিল।
ওর নাম লাভলী। ওরা সমবয়সী।
সে সায়মার পাশে বসে বললো, “তোমাকে তখন ডাকলাম অথচ কাছে এলে না। এতো ভয় পাও কেন?”
সায়মা একটু হেসে বললো, “ভয় না। আমি কিছু হারাতে চাই না। সেজন্য একটু সাবধানে থাকি।”
লাভলী বললো, “কথাটা কোন প্রসঙ্গে বলেছো?”
সায়মা আগের মতো একটু হেসে আবার বলে, “শরীরের পবিত্রতা-বিষয়ে। আমি কারও দ্বারা এটা হারাতে চাই না।”
কথাটা শোনামাত্র লাভলী উঠে অন্য আসনে বসলো। তার চেহারা দেখে সায়মা বুঝলো, সে খুব রাগান্বিত হয়েছে। সায়মা কিন্তু নিজেকে দোষী ভাবতে পারলো না। তার আরও মনে হলো—এরকম শক্ত-কথা বলাটা দোষের নয়।
ক্লাস-শেষে সায়মা লাইব্রেরির দিকে হাঁটছিল। এমন সময় তাকে পিছন থেকে ডাকলো লাভলী।
সায়মা দেখলো, এবার তার মুখে হাসি আছে। সে বুঝলো, ওর রাগটা তাহলে পড়ে গেছে।
লাভলী কাছে এসে সায়মার হাত ধরে বললো, “সে-সময় তোমার ওপর রাগ করে অভদ্রের মতো উঠে গিয়েছিলাম। কাজটি আমার ঠিক হয়নি। এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। স্যরি, তুমি কিছু মনে করোনি তো?”
সায়মা আগের চেয়ে আরও সুন্দর করে হেসে বললো, “না-না, রাগ করিনি। তবে একটু মনখারাপ করেছিলাম। এখন আর সেটুকুও নাই। তোমার ব্যবহারে আমি আনন্দিত।”
তারপর সায়মা একটু সময় নিয়ে বললো, “আমি সে-সময় তোমাকে আঘাত করার জন্য কথাগুলো বলিনি। এগুলো আমার নিজের জন্য। আমার আমিকে বা নিজেকে বাঁচানোর জন্য কথাগুলো বলেছি। আর আমি কাউকে আঘাত করে কখনও কোনো কথা বলি না।”
লাভলী ওর হাত ধরে আরও কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়ে আমতা-আমতা করে বললো, “আমি আসলে এরকম ছিলাম না। এখানে, ভর্তি হওয়ার পর শুভ’র সঙ্গে হঠাৎ পরিচয়। তারপর প্রেম। এখন দিনে-দিনে আমাদের ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ছে। আর শুভ খুব ঘনিষ্ঠ হতে চায়।”
সায়মা এসব শুনে লাভলীর দিকে চেয়ে বললো, “কিন্তু ওর সঙ্গে তোমার এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে বসা ঠিক নয়। বিয়ের আগে কোনো ছেলের সঙ্গে শারীরিকসম্পর্ক তো দূরের কথা তাকে সামান্যতম শরীর-স্পর্শ করতে দেওয়াও ঠিক নয়। তোমার ওই প্রেমিক হয়তো তোমাকে কিছুটা ভালোবাসে। কিন্তু আজ আমি ওর যে আচরণ দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে, তোমার ওই শুভ-নামের ছেলেটা ভীষণ শরীরলোভী।”
লাভলী এবার মাথানিচু করে আস্তে-আস্তে বলতে লাগলো, “তোমার কথা সঠিক। কিন্তু আমি তো ওর জালে আটকা পড়ে গিয়েছি।”
এতে সায়মা খুব জোর দিয়ে বললো, “না-না, লাভলী, তুমি এখনও নিজেকে নিরাপদে রাখতে পারো। এইরকম শরীরলোভীদের হাত থেকে তোমাকে বাঁচতে হবে। ওর যদি তোমার সঙ্গে এতোই ঘনিষ্ঠ হতে ইচ্ছা করে তাহলে ও-কে বলো তোমাকে বিয়ে করতে।”
লাভলী এবার চোখ ছলছল করে বললো, “সে-কথা ও-কে আমি অনেকবার বলেছি। কিন্তু ও বলে পড়ালেখা শেষ করে তারপর বিয়ের কথা ভাববে।”
সায়মা ভীষণ বাস্তববাদী। সে খুব সুন্দর করে হেসে বললো, “পড়ালেখা শেষ করে এইসব ঘুঘুপাখি উড়াল দিবে। মাঝখানে সে তোমার কাছ থেকে বিরাট সুযোগ নিতে চাচ্ছে। তুমি এই অযাচিত সুযোগ দিয়ো না।”
লাভলী বলে, “এখনকার ছেলেরা মৌখিক ভালোবাসার চেয়ে আরও বেশি কিছু চায়।”
সায়মা বলে, “এখানেই তো সমস্যা। আমাদের বুঝতে হবে, এরা কখনও প্রেমিক নয়। এরা শরীরলোভী। এদের থেকে সাবধানে থাকা উচিত। মনে রাখবে, প্রেম কখনও শরীর দিয়ে হয় না। আর বিয়ের আগে কাউকে কখনও শরীর দিতে হয় না। এতে নারীর সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়।”
লাভলী হয়তো আবার শুভকে খুঁজতে যাচ্ছে। তাই, সায়মা ও-কে বিদায় জানিয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকলো। এখানেও অরাজকতা দেখে সে কুণ্ঠিত ও লজ্জিত হয়। এই পাঠকক্ষেও কতকগুলো ছেলে-মেয়ে অহেতুক নির্লজ্জের মতো জুটি বেঁধে বসে আছে। এদের পড়ার কোনো আগ্রহ নাই। এরা অন্যের পড়া বিনষ্ট করে হাসি-ঠাট্টায় রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে।
তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে ছিটকে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলো।
সে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামবে তখন তাকে অনুসরণকারী সেই ছেলেটা সামনে এসে বললো, “আপনার নামটা জানতে পারি?”
সায়মার মনটা আগে থেকেই খুব খারাপ হয়ে আছে। আচমকা এর কথা শুনে সে মনে মনে খুব ক্ষুব্ধ হয়ে বললো, “আমার কোনো নাম নাই। আমি এতিম তো, তাই কেউ আমার নাম রাখেনি।”
তারপর সে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে তাদের ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়ালো।
সেই ছেলেটি তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। সে কেমন যেন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে।
সায়মা আবার ক্লাসরুমে ফিরে এসে একজায়গায় বসে চুপচাপ ভাবতে লাগলো। সবজায়গায় শরীরলোভীদের উৎপাত। সে বুঝতে পারে, এরা কখনও প্রেমিক নয়। আর কারও প্রেমিক হওয়ার যোগ্যতা এদের নাই। এরা প্রেমের নামে শুধু উৎপাতকারী।
এসময় তার বাড়ি কথা মনে পড়লো। তার ছোট দুটি ভাইবোন রয়েছে। ছোট ভাইটি পড়ে ক্লাস টেনে। আর বোনটি ক্লাস এইটে। প্রেমের নামে পদস্খলনের কোনো সুযোগ তার নাই। সে পারিবারিক সম্মান ও ছোট ভাইবোনের ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে লাগলো।
কয়েকদিন পরে ভার্সিটিতে গিয়ে সায়মা দেখলো, লাভলীর বেশ পরিবর্তন হয়েছে। সে আগের মতো শুভ’র কাছে ধরা দিচ্ছে না। এসব দেখে তার খুব ভালো লাগলো। তার কেবলই মনে হতে লাগলো, মেয়েদের এতো সস্তা হলে চলে না। তাছাড়া, দেশ-কাল-সমাজ-রাষ্ট্র ইত্যাদির কথাও ভাবতে হবে। আমাদের সমাজে বিয়ের আগে দেহদান কোনোভাবেই চলতে পারে না। এগুলো অসভ্যতা, আর পাপ। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-কালচারকে কোনোভাবেই আমরা অবজ্ঞা করতে পারি না। তাই, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক শুধু হাত ধরাধরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। আমাদের দেশাচার এর বাইরে আর-কিছুকে সমর্থন ও প্রশ্রয় দেয় না।
লাভলীর সঙ্গে ওর দিনে-দিনে সম্পর্ক আরও ভালো হতে থাকে। দু’জনের বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হয়। ক্লাসে প্রতিদিন দু’জন এখন একসঙ্গেই বসে। একসঙ্গে ক্যান্টিনে খাবার খেতে যায়। প্রায় প্রতিদিন একসঙ্গেই লাইব্রেরি-ওয়ার্ক করে। লাভলী এখন শুভ’র চেয়ে লাইব্রেরি-ওয়ার্কের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। সায়মা তাকে বলেছে, বর্তমান-যুগে মেয়েদের পড়ালেখা শেখাটাই সবচেয়ে বড় শক্তি-অর্জন। এটি সব মেয়েরই ভবিষ্যতের পাথেয়। তাই, সে এখন পড়ালেখায় ভীষণ মনোযোগী।
সেদিন দুপুরে সায়মা ও লাভলী নিজেদের ক্যান্টিনে বসে খাচ্ছিলো।
লাভলী হঠাৎ বলতে লাগলো, “আমি এখন তোমার কথামতো কাজ করছি। শুভকে এখন আর খুব-একটা পাত্তা দিচ্ছি না। গতকাল বিকালে আমি ও-কে বলে দিয়েছি, বেশি ঘনিষ্ঠতা চাইলে আমাকে বিয়ে করতে হবে। আর নয়তো বন্ধুর মতো দূরে থাকো। ভাগ্যে থাকলে পরে আমাদের বিয়ে হতে পারে।”
সায়মা বললো, “একথা শুনে শুভ কী বললো?”—সে খুব আগ্রহভরে ওর কাছে জানতে চাইলো।
লাভলী এবার চিন্তামগ্ন হয়ে বললো, “এতে মনে হয় সে খুব নাখোশ হয়েছে। সে আমার সঙ্গে আগের মতো মিশতে চায়। আমি তাকে বিয়ের কথা বলায় সে আরও বেশি নাখোশ হয়েছে। গতকালের পর আজ তাকে একবারের জন্যও আমার আশেপাশে দেখিনি।”
সায়মা বললো, “তুমি খুব ভালো একটা কাজ করেছো। এতো সহজে ছেলেদের ভোগের সামগ্রী হতে নেই। তুমি কেন ওর লালসার শিকার হতে যাবে! এইসব ছেলেকে একদম পাত্তা দিবে না। প্রয়োজনে ওর সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবে। আবার নতুন করে কোনো একজন ভালোমানুষকে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখবে। আর মনে রেখো, ভুল মানুষ একবারই করে।”
লাভলী সলজ্জভঙ্গিতে বলে, “এখন সব বুঝতে পারছি। আমি কতবড় একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম। তুমি যদি আমার দিকে বন্ধুর হাত না বাড়াতে তাহলে আমি হয়তো পাপ ও পঙ্কিলতায় ডুবে যেতাম। তুমি আমাকে বড়সড় একটা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছো।”
সায়মা হেসে বলে, “বন্ধুর কাজই হলো বন্ধুকে ভালো পথ দেখানো। তার বিপদে পাশে থাকা। আর সবসময় বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য বন্ধুর দিকে হাত বাড়ানো। আমরা সবাই যদি এরকম করি তাহলে আমাদের সমাজটা দেখতে-দেখতে আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।”
লাভলী খেতে-খেতে বলতে থাকে, “আমি এখন বুঝি শুভটা খুব লোভী। ও আমার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে সুযোগ নিতে চেয়েছিলো। নইলে, আমি বিয়ের কথা বলার সঙ্গে-সঙ্গে ও কেন এমন করে গুটিয়ে যাবে? ওর তো কোনো সমস্যা নাই। সে পিতামাতার একমাত্র ছেলে। অবশ্য তার একটা ছোটবোনও আছে। কিন্তু তাই কী? আমি দেখেছি, ওদের বড় একটা বিল্ডিং আছে। আরও নাকি কত জায়গায় জমিজমা আছে। ওর কীসের অভাব? ওর তো বিয়ের বয়স কবে হয়েছে। তবুও সে কেন আমাকে এখন বিয়ে করতে গড়িমসি আর টালবাহানা করছে। তোমার কথাই ঠিক। আসলে, সে সুযোগ নিতে চেয়েছিলো।”
তারপর সে সায়মার দিকে তাকিয়ে বললো, “তোমার মতো একজন বন্ধু আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বলে আজ আমি বেঁচে গিয়েছি। তোমার অসিলায় আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন।”
সায়মা একসময় জানতে চাইলো, “সে কি তোমাকে কখনও ওদের বাসায় নিতে চেয়েছিলো?”
লাভলী খুব দ্রুত উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, আমি যাইনি। আমার ভয় করেছিলো। আর সে গতকালও তা বলেছিলো। এতে আমি কিছুটা নিমরাজীও ছিলাম। কিন্তু কেন?”
সায়মা মিষ্টি করে হেসে বললো, “তুমি বড় বাঁচা বেঁচে গেছো। অল্পের জন্য ওর ভোগের শিকার হওনি। শরীরলোভী-ছেলেরা এরকমই করে। ওরা নিজেদের সবার সঙ্গে প্রেমিকাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ওদের বাসায় নিয়ে যায়। তারপর মেয়েটি সেখানে গিয়ে দেখতে পায়, বাসাটা খালি। আর তারপর যা ঘটার তা-ই ঘটে। মেয়েদের সবসময় খুব সতর্ক ও সাবধানে থাকা উচিত। আর কারও মিষ্টিকথায় কখনও ভুলে যাওয়া ঠিক নয়।”
খাওয়া শেষ করে ওরা উঠে পড়লো। আজকের বিলটা সায়মা কিছুতেই দিতে পারলো না।
লাভলী হাসিমুখে বিল পরিশোধ করলো। আগেও সে অনেকবার বিল পরিশোধ করেছে। কিন্তু এখন সে সায়মাকে আরও বেশি ভালোবাসে। তাকে আরও বেশি ভালো বন্ধু মনে করে।”
বিকালে ক্লাস-শেষে বাসায় ফেরার জন্য সায়মা বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলো। এমন সময় তাকে পিছন থেকে ডাকলো লাভলী। বললো, “আজ আমি তোমার বাসায় যাবো। কোনো সমস্যা হবে?”
সায়মা খুব স্বাভাবিকভাবে বলে, “না। কোনো সমস্যা নাই—যদিও এটা আমার খালার বাসা। তবুও খালা আমাকে নিজের মেয়েই মনে করেন। আমার খালাতো ভাইবোনেরাও খুব ভালো। আর ওরা আমাকে আপন-বোন ভাবে। বাসায় আমার জন্য একটা রুমও বরাদ্দ আছে। সুতরাং, কোনো সমস্যা হবে না। বরং আরও ভালো লাগবে।”
লাভলী তারপর বললো, “চলো, বাসে না গিয়ে আজ আমরা রিক্সায় যাই। কোনো আপত্তি আছে?”
সায়মা হেসে বলে, “না।”
দরদাম ঠিক করে ওরা একটা রিক্সায় উঠে পড়লো।
অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পরে লাভলী বললো, “আজ বিকালে শুভর সঙ্গে আমার একবার দেখা হয়েছিলো। কিন্তু সে আমার সঙ্গে কোনো কথা বললো না। সে আমাকে এড়িয়ে গেল। আমিও কোনো কথা বলিনি।”
একথা শোনামাত্র সায়মা প্রতিবাদীভঙ্গিতে বলতে থাকে, “তাই কী হয়েছে? তোমার কিচ্ছু হবে না। সে যদি ভালোমানুষ হয়ে কোনোদিন তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে পারে তাহলে তুমি তাকে আবার ভালোবাসবে। আর যদি দেখো যে, সে আগের মতো শরীরলোভী। তাহলে, তার থেকে চিরতরে দূরে সরে যাবে। এরকম অমানুষকে একদম পাত্তা দিবে না। নিজেকে আর কখনও সস্তা ভাববে না তুমি। মেয়েরা কারও কাছে খেলনা কিংবা সস্তা হলে ভয়ানক বিপদ। আর তুমি এটা নিয়ে একদম মাথা ঘামাবে না। পৃথিবীটা অনেক বড়। এসব ভুলে যাও। মনের সকল ব্যাধি দূর করে পরিশুদ্ধ হও। দেখবে, মহান প্রভু তোমাকে খুব ভালো একজন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেন। তাই, তুমি নিজে থেকে ওর সঙ্গে কোনো কথা না বলে ভালোই করেছো। এজন্য তোমাকে ধন্যবাদ।”
সায়মার কথাগুলো শুনে লাভলীর চোখে জল চলে এলো। আর কয়েক ফোঁট জল তার দু’চোখের কোণা বেয়ে টপটপ করে পড়তেও লাগলো।
সায়মা ওর মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দিতে লাগলো। ওর ডান-হাতটা নিজের হাতে নিয়ে সমবেদনা জানাতে থাকে।
কিছুক্ষণ পরে লাভলী নিজেকে একটুখানি সামলে নিয়ে বললো, “আমার জীবনে তোমার কথাই যেন সত্য হয়। শুভটা হারিয়ে গেলে আমি যেন এই জীবনে একজন ভালোমানুষের দেখা পাই।”
সায়মা ওর কাঁধে হাত রেখে বললো, “পাবে। নিশ্চয়ই পাবে। তুমি শুধু বিশ্বাস রেখো।”
লাভলী দারুণ বিশ্বাসে তাকিয়ে থাকে সায়মার অনিন্দ্য সুন্দর মুখের দিকে। সেখানে যেন স্বর্গের জ্যোতি বিরাজ করছে। সেও তো এমনই হতে চায়।
লাভলী এখন সায়মার মতো সুন্দর মনের বন্ধুর হাত ধরে অনেক দূরে যেতে চায়। আর সে তার দু’চোখ ভরে দেখতে চায় আগামীদিনের সুন্দর ও পবিত্র স্বপ্ন। পিছনে ফেলে আসা ভুলে ভরা জীবনের দিকে সে আর তাকাবে না।
সায়মা যেন লাভলীর মনোভাব বুঝতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। ওদের চোখেমুখে এখন শুধুই সুন্দর-আগামীর স্বপ্ন।
সাইয়িদ রফিকুল হক
০৫/১১/২০১৮
শুনে-শোনে
স্যরি-সরি
কিচ্ছু-কিছু
পড়ে ভালোই লেগেছে, কোনো এক বন্ধবীর কথা শোনে আরেক বান্ধবী নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে আর সঠিক পথে চলতে শুরু করে দিয়েছে। তবে শেষের দিকটা শেষ হয়েও হয়নি মনে হচ্ছে, আরেকটু লিখলে ভালো হত। শুভ কামনা আপনার জন্য
আপনার দেখানো তিনটি বানানই ভুল।
ছোটগল্প এমনই হয়। শেষ হয়েও হবে না শেষ।
ধন্যবাদ আপনাকে।
অন্যের কথা বা চাল-চলন দেখে আমরা আসলে শোধরাই না। শোধরাতে পারলে ভালো হত। আরোটু পরিষ্কার করলে ভালো হত শেষের দিকে। শুনে-শোনে। শুভকামনা রইলো।
আপা, ছোটগল্প এমনই হয়। হঠাৎ শেষ হয়ে যাবে।
আর বানান এখানে ‘শুনে’ শুদ্ধ।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
অন্যের কথা বা চাল-চলন দেখে আমরা আসলে শোধরাই না। শোধরাতে পারলে খুব ভালো হত। আরেকটু পরিষ্কার করলে ভালো হত শেষের দিকে। শুনে-শোনে।অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
আপা, ছোটগল্প এমনই হয়। হঠাৎ শেষ হয়ে যাবে।
আর বানান এখানে ‘শুনে’ শুদ্ধ।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রসঙ্গে কিছু কথা :
সত্যি কথা বলতে গল্পের কাহিনী সুন্দর হলেও লেখনী খুব বেশি একটা আকর্ষণ করতে পারেনি। লেখাটা আমার কাছে খুব কাঁচা হাতের লেখা বলেই মনে হয়েছে। লেখক সাহেব হয়তো জানেন না এক শব্দ লেখার পর স্পেস দিয়ে আর একটা শব্দ লিখতে হয়। পুরো গল্প জুড়েই ভুলে ভরা।
বড়খালার – বড় খালার
অল্পবয়সে – অল্প বয়সে
অনেককিছু – অনেক কিছু
মূলভবনের – মূল ভবনের
আপনমনে – আপন মনে
দীর্ঘসময় – দীর্ঘ সময়
ক্লাসরুমে – ক্লাস রুমে
একজায়গায় – এক জায়গায়
ঘুঘুপাখি – ঘুঘু পাখি
সবজায়গায় – সব জায়গায়
মনখারাপ – মন খারাপ
দেহদান – দেহ দান
শারীরিকসম্পর্ক – শারীরিক সম্পর্ক
শরীরলোভী – শরীর লোভী
মাথানিচু – মাথা নিচু
মিষ্টিকথায় – মিষ্টি কথায়
ভালোমানুষকে – ভালো মানুষকে
কতবড় – কতো বড়
তোমার কথাই – তোমার কথায়
ছোটবোনও – ছোট বোনও
অসিলায় – উসিলায়
এরকম আরও অনেক ভুলই আছে। যা গল্পের মান নষ্ট করেছে। আগামীতে খেয়াল রেখে লিখবেন আশা করি। শুভ কামনা।
ওয়া আলাইকুম আসসালাম।
আপনি যে-সব বানান শুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন তা হাস্যকর।
মনে হয়, আপনি গল্প না পড়ে বানান-এর ভুল ধরার কাজে নিয়োজিত হয়েছিলেন।
লেখকের একটা ভাষা-স্টাইল থাকে। আপনার হয়তো সেটি জানা নাই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
অসাধারণ লিখেছেন।
ভালো লাগলো পড়ে।
আজকাল আমাদের সমাজে কিছু মেয়ে আছে সঙ্গের কারণেই নষ্ট হয়ে যায়।
বান্ধুবীর কথা শুনে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে।
সঠিক পথে এসেছে এতেই স্বার্থকতা রয়েছে।
বানানে কিছু ভুল আছে।শুধরে নিবেন।
লেখার হাত ভালো।এগিয়ে যান।
শুভ কামনা রইলো।
গল্প পড়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা আর শুভকামনাও।
শেষ টা একটু কেমন হয়ে গেলো। আরেক্টু স্পষ্টকরার দরকার ছিলো।
মানুষ ভুল করে, শোধরানোর কেউ থাকে না, অথবা থাকলেও কারো কথায় কান দেয় না। সেটাই সবচেয়ে বড় ভুল।
সুন্দর হয়েছে। বানানের ভুল যে আছে, সেটা তো অনেকেই বলেই দিয়েছে।
ছোটগল্প এমনই হয়।
বানানে কোনো ভুল নাই। ওগুলো লেখার স্টাইল।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা আপনাকে।