লেখা: Akram Hussain Tahosin
……………………..
সকাল সকাল আম্মু ফোন দিলো। আম্মু কখনো সকালে কিংবা দুপুরে আমাকে ফোন দেয় না। আম্মুর ফোন দেওয়ার সময় হচ্ছে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা সময় ফোন দিয়ে বলবে, কেমন আছিস?
– ভালো আছি আম্মু।
– পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে নাকি এখনো আগের মত মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকিস!
– না আম্মু সব ঠিকঠাক।
এরপর কথা বলার মত কিছু না পেয়ে খট করে ফোন কেটে দিবে। আম্মুর সাথে আমার ফোনালাপ সর্বোচ্চ ২মিনিট কিংবা ৩মিনিট আর আব্বুর সাথে ২০সেকেন্ড। একদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ২০সেকেন্ডের বেশী কল হিস্ট্রি আমি পাইনি।
.
ফোন রিসিভ করতেই আম্মু বলে উঠলো, আগামীকাল তুই একটু বাড়িতে আসতে পারবি?
– কেন আম্মু?
– দরকার আছে। আগামীকাল সকাল সকাল চলে আয়। ভোরের ট্রেনে আসবি দেরী যেন নাহয়।
– কিন্তু আগামীকাল তো আমার ক্লাস আছে!
– থাক। একদিন ক্লাস না করলে কিচ্ছু হবে না।
– আচ্ছা আম্মু আসবো।
আমি ফোন রাখতে যাব এমন সময় আম্মু বলে উঠলো, – তোর জন্য কি রান্না করবো বল?
– সকালে একটা হাস জবাই করবা। মধ্যবয়সী হাস। মধ্যবয়সী কেন বলছি বুঝছো তো? হাসের বয়স যাতে বেশী না হয় আবার একদম কমও না। তারপর বেশী করে রসুন দিয়ে নতুন আলু ছোট ছোট করে কেটে জ্বাল সামান্য বাড়িয়ে দিয়ে রান্না করবা। আমি এসে আরাম করে খাব।
আম্মু শব্দ করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো, “তুই আমাকে রেসিপিও শিখিয়ে দিলি। আচ্ছা আয়; রান্না করবো।”
.
পরদিন সকাল ১০টার দিকে বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখি অনেক মেহমান। আলেয়া খালা, সাবিনা আন্টি, জুয়েল মামা সহ আরো অনেকেই। বাড়িতে যেতেই ভাবী আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললো, একটা সুখবর আছে।
– কি সুখবর ভাবী?
– আজকে তোমার আঙ্গুলে রিং পরানো হবে।
আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে?!
ভাবী বললো, আলেয়া খালার মেয়ে সুমাইয়ার সাথে তোমার…. বলেই ভাবী মুচকি হাসলো।
.
কথাটা শুনেই আমার মাথার মধ্যে গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে। কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না। ঘন্টাখানেক পর সুমাইয়ার রুমে গেলাম। মেয়েটা আমাকে দেখে চমকে উঠলো। যার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে তাকে দেখে চমকে উঠার কিছু নেই। কাছে এসে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে। আমি সুমাইয়ার সামনে বসলাম। সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আস্তে করে বললাম, – তুই আমাকে পছন্দ করিস? সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। আমি আবার বললাম, তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস? সে আবার মাথা নাড়লো।
– কিন্তু আমি তোকে বিয়ে করতে পারবো না। জাস্ট ইমপসিভল।
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসতেছি। দরজার কাছে এসে ইচ্ছে করেই পিছন ফিরে তাকালাম। মেয়েটা কান্না করছে। দুচোখের জল গড়িয়ে বিছানায় পড়ছে। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে বলতে, সুমাইয়া কাঁদিস না। কাঁদলে চোখের কাজল নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার আয়নার সামনে বসে কাজল দিতে হবে। চোখে কাজল দেওয়া চাট্টিখানি কথা না।
কথাগুলো বলা হলো না। আমি আম্মুর কাছে চলে আসলাম। আম্মু খুব আগ্রহ নিয়ে বললো, ঘটনা কি হয়েছে জানিস? গত সপ্তাহে সুমাইয়ার বিয়ের কথা চলছিলো। ছেলে আমেরিকা থাকে। ওখানেই স্যাটেল হওয়ার কথা। সবকিছু ঠিকঠাক। হঠাৎ সুমাইয়া বলে উঠলো সে নাকি তোকে পছন্দ করে। সেই ছোটবেলা থেকে পছন্দ করে! কি সংঘাতিক ব্যাপার একবার ভাব!
–
কেন জানি মেয়েটার জন্য খুব ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে একটা সংসার জীবন শুরু হলে খারাপ কি! সামান্য খুনসুটি, একটুআধটু ঝগড়া আর সময় অসময়ে ভালোবাসাবাসি… খারাপ হয় না।
ঘন্টাখানেক পর সুমাইয়ার রুমে গিয়ে দেখি সে ঘুমিয়ে আছে। কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় শুয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি তার কাছে গিয়ে মুখের কাছে মুখ রেখে আস্তে করে ডাক দিলাম, তানজু….!
তানজিলা চমকে উঠে বললো, – হু!
– তুমি কি বিয়ের পরেও এভাবে ঘুমাবে? আমি কিন্তু তোমাকে ঘুমোতে দিব না। চিন্তা করে দেখ বিয়ে করবা কিনা….!
আমার কথা শুনে সুমাইয়া হকচিয়ে গেছে। তার মুখে চাপা হাসি; চোখের মধ্যে অভিভূত ভাব।
Khub sundor story. Thnx for share it…..
Golpo ta valo chilo…..