#বাবা
#অর্না খান
বাহিরের শোঁ শোঁ বাতাসে দরজার পর্দাটা নড়েই চলেছে।নীরা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে এই এক্ষুনি ওপাশ থেকে বাবা পর্দাটা সরিয়েই তার পাশে এসে আলতো করে কপালে চুমু খেয়ে বলবে,”মারে,অনেক রাত হলো এবার চোখ দুটো বোঝ,এই দেখ বাবা চলে এসেছি।”
নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।নীরার ভাবনাগুলো ভাবনাই থাকে।বাবা আর আসে না।পাশেই নীরার মা ঘুমুচ্ছে।নীরা সেদিকে তাকাতেই তার চোখ ছলছল করে উঠলো,বুক কেঁপে ওঠে।কি মায়াবী মায়ের মুখ,কিন্তু ক্লান্তিটা যেন নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ধরা পড়ছে।মুখে চিন্তার ছাপ।ঘুমের মাঝেও চিন্তারা ছাড় দিচ্ছে না।বয়সের ভারে শরীরের জোরটুকু কমে আসছে তবুও যে জীবনযুদ্ধে তাকে থামলে চলবে না।
নীরা চোখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকায়।জানালাটা খোলাই থাকে রাতে।ঘরের ফ্যানটা নষ্ট হয়েছে সেই গতমাসে।ঠিক করাবো,ঠিক করাবো বলে নীরার মা তনিমা বেগম আর ঠিক করাতে পারেন না।নীরা বোঝে তার পিছনে এতো টাকা খরচ করে টাকায় আর কুলোচ্ছে না।নীরার মা জানালাটা খুলেই রাখে পাছে একটু বাতাস যদি আসে সেই আশায়।নীরা ভাবে,”আচ্ছা আজ যদি বাবা থাকতেন?তাহলেও কি এমন করে চলতো তাদের সংসার?”কেবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়া নীরা আর কোনো উত্তর পায় না।
নীরা জানালা দিয়ে আকাশের চাঁদটার দিকে তাকায়,পাশেই একটা ছোট তারা জ্বলজ্বল করছে।নীরা ভাবে দুদিন পর ছোট তারার পাশে আরেকটি তারা দেখা যাবে।নীরা হবে সেই ছোট তারা।
জীবনযুদ্ধে নীরা পারেনি তার মায়ের মতো লড়াই করে যেতে।সে হেরে গেছে।ক্যান্সারের কাছে জীবন পরাজিত স্বীকার করেছে।লাষ্ট স্টেজে এসেও নীরা কেন এখনো মৃত্যুর দেখা পায় না সে ভেবেই পাচ্ছে না।”তবে কি বাবার সাথে শেষ দেখাটা তার হবেই?”
নীরার আজকাল বড্ড আকাশ ছুঁতে ইচ্ছে করে।আবার পরক্ষনেই মনে হয়,”আমি না থাকলে মা একা কি করে থাকবে?”
নানা প্রশ্নে,চিন্তায় নীরার মাথা ঘুরে আসে।সে আর কিছুই ভাবে না মাকে শক্ত করে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে।মাও তাকে জড়িয়ে ধরে যেন ছাড়লেই নীরা পালিয়ে যাবে কিংবা হারিয়ে যাবে!
আজ সকাল সকাল নীরার ঘুম ভেঙে গেল।নীরার মা তনিমা বেগম বলেন,”কিরে মা শরীর খারাপ লাগছে?এত সকাল সকাল উঠলি যে?”
নীরা বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,”না মা ঠিক আছি,কি একটা স্বপ্ন দেখলাম তাই ঘুম ভেঙে গেল।”
তনিমা বেগম জগ থেকে পানি ঢেলে নীরার হাতে দিয়ে বলে,”ঘুম থেকে উঠে পানি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।নাও খেয়ে নাও।”
নীরা মনে মনে ভাবে, “যে শরীরে পচন ধরেছে সে শরীরে আর পানি কতটাই বা ভালো করবে?” নীরা কিছু না বলে পানিটা ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।
নীরা নিচুস্বরে বলে,”মা ওষুধ নেই।মাথাটা বড্ড ঝিমঝিম করছে।”
তার মা কিছুই বলতে পারে না।”কি করে বলবে সে?হাতে যে দুটো পয়সা নেই কি দিয়ে করাবে সে মেয়ের চিকিৎসা?”ীরা বোঝে তার মায়ের অবস্থা।সে আর কিছুই জিজ্ঞেস করে না।নীরার মা প্রসঙ্গ বদলে বলেন,”তা বাবাকে স্বপ্ন দেখলে বুঝি?”
নীরা কিছু বলে না কেবল তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে।
তনিমা বেগম নীরার কাছে এসে বসে তার হাত দিয়ে নীরার হাত স্পর্শ করে বলে,”চিন্তা করোনা,বাবা আসবেন।”
তনিমা বেগম কিন্তু শত চেষ্টা করেও নীরা বাবার মুখ দেখতে পায় নি।তবুও সে জানে ওটাই বাবা।
নীরা ক্লান্ত,অসুস্থ শরীর নিয়ে সে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।সে দেখতে পায় নিচে একটা ছোট্ট মেয়ে তার বাবার কোলে চড়ে যাচ্ছে।নীরার চোখে জল ছলছল করলেও তা আর নিচে পড়ে না।সে মনে মনে ভাবে,”আজ যদি বাবা থাকতো তাহলেও সব এমন থাকতো?বিনা চিকিৎসায় আমাকে ঘরে বসে থাকতে হতো?”
নীরা জানে বাবা নামক বটগাছের ছায়াটা তার মাথার ওপর থাকলে এতোবড় রোগ তার শরীরে বাঁধতেও সাহস পেতো না।তারও ওই বাচ্চা মেয়েটার মতো বাবার হাত ধরে হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
নীরা তখন কেবল পাঁচ বছরের ছোট্ট খুকি যখন তার বাবা বিদেশে পাড়ি জমায়।তার খুব মনে আছে যাওয়ার আগের দিন বাবা তাকে কোলে নিয়ে সারা ঘর ঘুরে খাইয়ে দিয়েছিল।নীরা ভাবে,”কেন তার এসব এখনো মনে আছে?সব কেন ভুলছে না সে?”
নীরার বাবা বিদেশ যাওয়ার পর প্রথম প্রথম সব ঠিক ছিল কিন্তু পরবর্তীতে কেউ আর বাবার খোঁজ দিতে পারলো না।১০ বছরে নীরা তার বাবার কন্ঠস্বর আর শোনেনি।নীরার মা অনেক চেষ্টা করেছিলো তার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে কিন্তু পারেনি।
যে মানুষ হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু যে ইচ্ছা করে লুকিয়ে থাকে তাকে যে আর পাওয়া না।এরপর নীরার মা নীরাকে নিয়ে এই অজানা অচেনা শহরে চলে আসেন।কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই আর।শকুনের চোখ থেকে বাঁচতেই নীরাকে নিয়ে চলে এসেছেন তনিমা বেগম।
নীরার আজকাল বড্ড বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করে।কিন্তু নীরা ভেবে পায় না কেন তার বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করে?হয়তো মৃত্যু কাছে আশায় সকল না পাওয়াগুলো খুব করে পেতে ইচ্ছে করে নয়তো অন্যকিছু।
সেদিন তো নীরা তার মাকে মুখ ফুঁটে বলেই দিয়েছিলো,”মা,বাবাকে একবার খুঁজে এনে দিবে?বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে।”
সেদিন নীরার মা কিছুই বলেনি।নীরা দেখেছিলো,”স্বামীহারা এক স্ত্রীর বুকে ঠিক কতটা কষ্ট জমা থাকলে সে সারারাত কাঁদতে পারে?”
নীরা অবশ্য নিজেও সেদিন খুব কেঁদেছে।কিন্তু পরেরদিন মাকে দেখে মোটেই মনে হয় নি এই মহিলা গতকাল সারারাত কেঁদেছিলো।সবকিছু যেন খুব স্বাভাবিক।কোথাও কিছু হয় নি।নীরা তার মায়ের ধৈর্য্য দেখে অবাক হয় রীতিমত।
সেদিন দুপুরে নীরার মা এসে দেখে নীরা মাটিতে পরে আছে।নীরার শরীর দিন দিন যেন নেই হয়ে যাচ্ছে।নীরার জ্ঞান ফিরলেও সে রক্তবমি করে আরো ক্লান্ত হয়ে পরে যেন এক্ষুনি সে সব ছেড়ে চলে যাবে।তার কন্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে আসছে,সে বলে,”মা,বাবা কি আসবে না?”
এই প্রথম তনিমা বেগম তার সকল ধৈর্য্য ত্যাগ করে মেয়ের হাত ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন।মেয়ের এমন অবস্থা দেখে তার মাতৃমন আর চুপ থাকতে পারে না।কান্নাকন্ঠে সে খোদার কাছে আকুতি করে,”হে খোদা,এ কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছো?এতো কষ্ট দিও না আমার মেয়েটাকে।”
নীরার শ্বাসক্রিয়া ক্রমাগত বাড়ছে,কমছে।সে মনে মনে ধরেই নেয় তার আর বাবাকে দেখা হবে না।নীরা যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার ছোটবেলার দৃশ্যপট।”ওইতো বাবার হাত ধরে নীরা হাঁটছে।”
নীরার খুব করে ইচ্ছে করছে শেষ একবার বাবাকে দেখতে,বাবার হাত ধরতে,বাবাকে জড়িয়ে বলতে ইচ্ছে করছে”বাবা আমি আরেকটু সময় বাঁচতে চাই,তোমার হাত ধরে আরেকবার হাঁটতে চাই।”
বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে নীরা।তনিমা বেগম জলভরা চোখে তা দেখছে।তিনিও মেনে নিয়েছেন”নাহ,নীরার বাবার এতো খোঁজ করেও লাভ হলো না।সে পারেনি মেয়ের শেষ ইচ্ছাটা পুরোন করতে।”
হঠাৎ নীরাদের দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ,”নীরু মা আছিস?আমি তোর বাবা বলছি।”
চারপাশ বড্ড নিরব।নীরার সবকিছু আবছা লাগছে যেন সে শুন্যে ভেসে যাচ্ছে।নীরা আবছা দেখতে পাচ্ছে কেউ একজন বাতাসে নড়া পর্দাটা সরিয়ে তার ঘরে ঢুকেছে।পড়নে সাদা পাঞ্জাবি,কিন্তু মুখ দেখতে পারছে না নীরা।কিন্তু সে জানে বাবা এসেছে।সে ক্ষীণ শব্দে বললো,”বাবা” সে টের পেলো তার বাবা তার কপালে চুমু এঁকে বলছে”ঘুমোও মা,একটু ঘুমোও।এই দেখো বাবা এসেছি।”
শত সহস্র বছরের ঘুম যেন নেমে এসেছে নীরার চোখে।নীরা শান্তিতে দু চোখ বুঝলো।
ঘুমুচ্ছে- ঘুমাচ্ছে
এতো -এত(তো হয়তো, নয়তো শব্দের সাথে ব্যবহার হয়)
পাছে-পাশে
চলতো-চলত
পরক্ষনেই-পরক্ষণেই
ীরা-নীরা
পায় নি-পায়নি
থাকতো-থাকত
হতো-হত
এতোবড় -এতবড়
পেতো-পেত
হয় নি-হয়নি
এক্ষুনি-এখনি
ধৈর্য্য- ধৈর্য
এই কেমন গল্প শেষ হয়েও হয়নি মনে হচ্ছে। তবে গল্পের নামটা বাবা না দিয়ে ক্যান্সার দিলে ভালো হত। যাইহোক ভালো ছিল গল্পটা, তবে ভুলের মাত্রা একটু বেশি বলা যাই। শুভ কামনা রইল।
হয়নি’র মাঝে স্পেস হবে না। ধৈর্য বানানটা এভাবে হবে। দাঁড়ি কমা’র পর স্পেস ব্যবহার না করায় লেখার কিছুটা সৌন্দর্যহানি ঘটেছে। গল্পটা ভালো। শুভকামনা।
ভালো লিখেছেন।
খুব সুন্দরভাবেই শুরু হইছিলো।তবে তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলেন।আরেকটু বড় করতে পারতেন।
বানানে প্রচুর ভুল।শুধরে নিবেন।
বানানের প্রতি যত্নশীল হবেন।
শুভ কামনা রইলো।
আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রসঙ্গে কিছু কথা :
গল্পটা মোটামুটি ভালো লেগেছে। তেমন একটা আকর্ষণ করতে পারেনি। বেশ কিছু ভুল রয়েছে। নিচে তা লক্ষণীয় :
গল্পের নামটা বাবা না হয়ে অন্য কোনো নাম হলে বেশি ভালো লাগতো।
কি/কী এর ব্যবহারে সমস্যা রয়েছে।
সম্বোধনে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তনিমা বেগমকে একবার তুমি একবার আপনি করে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু গল্পে একই ব্যক্তিকে একইভাবে সম্বোধন করাটাই শ্রেয়।
এক লাইন শেষ হলে আর এক লাইন শুরুর আগে (।) এর পর স্পেস দিতে হয়। কিন্তু স্পেস ব্যবহার করা হয়নি।
চোখ দুটো বোঝ – চোখ দুটো বোজ
জীবনযুদ্ধে – জীবন যুদ্ধে
গতমাসে – গত মাসে
এত – এতো
করোনা – করো না
পায় নি – পায়নি
মাথার ওপর – মাথার উপর
এতোবড় – এতো বড়
রোগ তার শরীরে বাঁধতেও – রোগ তার শরীরে বাসা বাঁধতেও
কন্ঠস্বর – কণ্ঠস্বর
যে মানুষ হারিয়ে যায়…তাকে যে আর পাওয়া না – যে মানুষ হারিয়ে যায়… তাকে যে আর পাওয়া যায় না।
মৃত্যু কাছে আশায় – মৃত্যু কাছে আসায়
হয় নি – হয়নি
মুখ ফুঁটে – মুখ ফুটে
পুরোন – পূরণ
দু চোখ – দু’চোখ
বুঝলো – বুজলো
কান্নাকন্ঠে – কান্না কণ্ঠে
আগামীতে সবকিছুর দিকে খেয়াল রেখে লিখবেন, নিশ্চয়ই ভালো হবে। আপনার জন্য শুভ কামনা।