গল্প লেখকঃ
মোঃ রোবেল পারভেজ
(মার্চ – ২০১৮)
………………
সূর্য প্রায় অস্তমিত। হনহন করে হেঁটে আসছে রফিক। পড়নে লুঙ্গি, গলায় গামছা,গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। হাঁটু সমান কাঁদা। এখনো অনেক কাজ বাকি। বাড়িতে আবার শুধু বউ আর মা। বউ সন্তান সম্ভবা। রফিকের মা রফিকের সাথে ক্ষেতেই ছিলো। বন্যার পানি নেমে গেছে। ক্ষেত ধান লাগানোর জন্য উপযুক্ত। তাড়াতাড়ি জমিতে ধানের চারা লাগানো দরকার। এতো কাজের ফাঁকে বাড়ি যাওয়ার মতো অবসর পায়নি সে। দুপুর গড়িয়ে গেলে রফিকের মা খাবার নিয়ে আসে তার জন্য।খাবার আর কি শুধু শুকনো ভাত, আর ছোট মাছ ভাজি। এছাড়া আর কিছু জোটানোও সম্ভব না। পরপর দুইবারের বন্যায় সব ফসলই নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে চালের দাম আকাশ ছোঁয়া। মোটা চালও প্রায় ৫২ টাকা কেজি। দিনমজুর রফিকের পক্ষে প্রতিদিন চাল কেনাও সম্ভব হয়না। তাই মাঝে মাঝে না খেয়েও থাকতে হয়।আজ তবু খাবার জুটছে। বন্যা হওয়াতে মাছটা পাওয়া যায়। তাই তরকারি বলতে শুধুই মাছ। রফিকের প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আসছে। কতশত স্বপ্ন সে দেখেছে সন্তানকে ঘিরে। বউকে কোন কাজ করতে দিবেনা। পুষ্টিকর খাবার নিজে বসে থেকে খাওয়াবে। মাঝে মাঝে আপেল, কমলা এনে নিজে মুখে তুলে খাইয়ে দিবে।সে স্বপ্ন ভেসে গেছে বানের জলে। পুষ্টিকর খাবার ত দূরে থাক দুবেলা বউকে খাবারই দিতে পারেনা সে।
মাঝে মাঝে তীব্র ক্ষোভ জমা হয় রফিকের বুকে। যখন তার ঘরে ধান ছিলো ধানের ন্যায্য দাম সে পায়নি। এখন তার ঘরে ধান নেই, চালের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। দুর্ভিক্ষের কথা সে শুনেছে তার দাদির কাছে। এবার মনে হয় দেখতেও হবে। তার নিজের জন্য কোন কষ্ট হয় না। কষ্ট তার পোয়াতি বউটার জন্য। কষ্ট হয় তার অনাগত সন্তানটার জন্য। যে সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই অনুভব করতে পারছে তার পিতার দারিদ্র্যতা। হয়তো অসহায় মুখটাও দেখতে পাচ্ছে। তার মায়ের কষ্টটাও টের পাচ্ছে। এদেশের ক্ষমতায় আসীনদের প্রতি ঘৃণাও কি আর তার মধ্যে বাসা বাঁধছে? তার বাবার মনে যেমন বাঁধছে। সব দলের নেতারাই চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখবে বলে কথা দেয় কিন্তু এখন ৫২ টাকা কেজি মোটাচাল। ভাত পাওয়া, ভাত খাওয়া দুটাই দায়।
তার সন্তান কী সব বুঝতে পারছে? পৃথিবীর প্রথম শ্বাসে কী অনুভূতি হবে তার? দারিদ্র্যের হাহাকার কী তার কান্নায় প্রকাশিত হবে? এদেশের রাজনীতিবীদদের প্রতি কী তার অবিশ্বাস কান্নার মাধ্যমেই প্রকাশ করবে? সে কী পৃথবীতে তার অগ্রজদের জানাবে-
“বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা যায়
রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ।”
এসব কথা ভাবতেই রফিকের বুকটা ভারী হয়ে আসে। ভিজে আসে চোখটা তার অনাগত সন্তানে কথা ভেবে।
০ Comments