আহা জীবন
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,676 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

বুনোহাঁসের গল্প: আহা জীবন।

“ওলো কালনাগিনী বল কার সাথে শুয়েছিস” একজন অসুস্থ সাবালিকা মেয়ের জন্য মায়ের মুখ থেকে ভেসে আসা কথাটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আমিও তিন বছরের বড় বোনটিকে জিজ্ঞেস করলাম, “বুবু তোকে কেউ জোর করে চুমু খেয়েছে?” জবাবে এক নাগাড়ে হো হো করে হেসেই যাচ্ছে আমাদের পরিবারের একমাত্র দুর্বল জায়গা, সবার আদরের মায়া। ও খানিক চন্দ্রাহত ব্যক্তি। কিন্তু মানুষ হিসেবে ওর মন অনেক ভালো এবং কোমল। পাশ থেকেই আমার ছোট বোন, সবে কৈশোর পেরিয়েছে। বললো, “দিদুন বল না, কে তোর শাড়ি খুলেছে?” এতসব উদ্ভট প্রশ্নের পরও মায়ার ভ্রুক্ষেপ নেই। এদিকে বাবা উদাস হয়ে বারান্দা দাঁড়িয়ে আছে। মনে তার হাজারো প্রশ্ন। কিভাবে ব্যাপারটি লোক চক্ষুর আড়াল করা যায়?

আমি নিলীন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিবিএ করছি। বাবা ছ’পয়সার কেরানী। সরকারি চাকরি হলেও মাইনে খুব কম। আমাদের পাঁচ জনের পরিবার চালাতে বেশ হিম-সিম খেতে হয় উনাকে। তার উপর চাচাতো বোন রোকেয়া আমাদের সাথে থাকে। এছাড়া মায়ার চিকিৎসা খরচ তো আছেই।  সবার ধারণা আমি পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরি করলে ঘুচে যাবে আমাদের অভাব অনটন। তখন মাসের মাঝখানে মা’কে আর হিসেব করে বাজার-খরচ করতে হবে না। মন খারাপ করে দক্ষিণের জানালা খুলে আনমনে আর উপন্যাসের পাতা উল্টাতে হবে না। পাড়ার চাচীদের সাথে রোজ বিকেলে তিনিও গল্প করতে বের হবেন।
কত সব আশা!
মাঝে মাঝে ঝড়ের গতিতে নিঃশ্বাস ওঠা-নামা করে আমার ভেতর। ঘোড়ার বেগে লাফিয়ে উঠে হৃৎপিন্ড। পারবো তো আমি? সবার মুখে হাসি ফোটাতে…
দোচালা ঘর আমাদের। তিন রুম। একটাতে মা-বাব থাকে। একটাতে দুটো খাট, এক খাটে আমি ঘুমাই পাশেই আমার পড়ার টেবিল। আরেকটাতে মায়া আর ছায়া ঘুমায়। একদম পশ্চিম রুমে আমার চাচাতো বোন রুকু থাকে। তিনি গ্রামের স্কুলটাতে  শিক্ষকতা করেন। ছনের বেড়া রুমগুলো আলাদা করে রেখেছে। পরীক্ষার সময় মাঝ রাতে যখন আমি পড়ি তখন পাশের রুমে থাকা মা-বাবার নানান কথা শোনা হয় আমার। কত দুঃখ তাদের! সব আমাদের ঘিরে। নতুন করে মায়ার চিন্তা। সব গ্লানি মুঠো ভরে এসেছে।
দিন যত যাচ্ছে সবার নাওয়া-খাওয়া উপরে উঠেছে। বাবার হ্যাংলা শরীরটায় পাঞ্জাবী এখন বড্ড বেমানান। তবুও মায়া পইপই করে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। তবে মা এখন আর মায়ার কাপড়ে সেফটিপিন লাগিয়ে দেয় না। ভয় যা ছিল তা তো ঘটেই গিয়েছে।

রোকেয়া আপু আমার চেয়ে চার বছরের বড়। একমাত্র আমিই তাকে রুকু বলে ডাকি। নাম ধরে ডাকতে সে আমাকে অনুরোধ করেছে। ছোট বেলায় ওলাবিবি এসে নিয়ে গিয়েছে তার মা-বাবা আর একমাত্র ছোট ভাইটিকে। ভাগ্যক্রমে সেবার বেঁচে গিয়েছিল রুকু। তার সাথে আমার সখ্যতা আছে বেশ। পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে যখন পাশের রুমে যাই তখন রুকুর কোলে মাথা পেতে শুতেই আমার চুলে বিলি কেটে দেয়। সাথে গুনগুনিয়ে গান গায়। কি সুন্দর মিহি তার গলা! সম্ভবত ওই মায়াবী কণ্ঠের বাগদত্তা আমি। আমাদের উঠোনের উত্তর দিকে একটি শিউলি গাছ আছে। কিন্তু অপয়া গাছে এখনো ফুল আসার নামগন্ধ নেই। রুকু আমাকে কথা দিয়েছে, গাছটিতে ফুল এলেই সবার আগে ফুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে আমার গলায় পরিয়ে দিবে। আমিও সে আশায় ধুপ ছিটিয়ে তার সুভাস ছড়ানো চুলে মুখ গুঁজে দিই। সিগারেট খাওয়াতে নাকি মেয়েদের ঘোর আপত্তি। কিন্তু রুকু তিন দিন পরপর স্কুল থেকে ফেরার সময় দয়াল কাকুর দোকান থেকে আমার জন্য এক প্যাকেট গোল্ডলিফ নিয়ে আসে। তবে শর্ত হলো, আমি কখনো দেশলাই নিজের কাছে রাখতে পারবো না। রুকু কোমরে দেশালাইয়ের বাক্স লুকিয়ে রাখে। সেখান থেকে নিয়েই আমার রক্তে প্রয়োজন মতো নিকোটিনের চাহিদা মেটাতে হয়। আমার অবশ্য ভালোই লাগে। সমাজ খানিক আড়চোখে দেখে আমাদের সম্পর্ক। আমার তাতে বয়েই গিয়েছে…

মায়ের চোখ ক্রমশ কোটরে ঢুকে যাচ্ছে। এসব খুঁটিনাটি বিষয় আমাকে খুব কাঁদায়।  মায়া রাতে প্রায়শই ঢুকরে কেঁদে উঠে ঘুমের ঘোরে। সে আওয়াজে ছায়া জেগে উঠে। ভয়ে কাঁপা কণ্ঠে আমাকে জাগিয়ে তুলে। আমি মিছে সান্ত্বনা দিয়ে তাকে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিই। মা পাশের রুম থেকে ডেকে উঠে। এরপর আমার আর ঘুম হয় না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই নিয়ে আমি চলে যাই রুকুর কাছে। কড়া নাড়তেই সে দরজা খুলে দেয়। যেন আমার অপেক্ষাতেই ছিল! আমি বিস্মিত চোখে কয়েক মুহূর্ত তার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকি। তার আঁখি যুগল অসম্ভব মায়া কাড়া। ভ্রু জোড়া যেন মুক্ত আকাশে উড়ন্ত পাখি। অপ্রস্তুত রুকু আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। চল্লিশ ওয়াটের বাল্ব না জ্বালিয়ে সে গোলাপি মোমবাতি জ্বালায়। আবছা আলোতে তাকে আরও অপরূপ লাগে। সেই সব মুহূর্তে আমি নিজেই অজানা এক ঘোরের মধ্যে থাকি। রুকু নিরবতা ভেঙে হাত থেকে বই নিয়ে আমার কাঁধে মাথা রাখে। তারপর আস্তে আস্তে তার উদ্দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় প্রতিটি লাইন। লেখাগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠে! কিছু কিছু লাইন যখন আসে তখন সাধারণত বই বন্ধ করে আমি হারিয়ে যাই কল্পনার জগতে। অথচ রুকু সঙ্কোচহীন পড়ে যায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। এক পর্যায় ঘুম নেমে আসে তার চোখে। তার চিবুক বেয়ে যেন ঝর্না পড়ে! কাঁধ থেকে তার মাথা নামিয়ে বালিশে শুইয়ে দিই। অতঃপর তার বিশাল কপালে ছোট্ট একটি চুমু দিয়ে আমি দরজা লাগিয়ে বের হয়ে আসি…

মায়া বোধহয় এখনো জানে না যে সে মা হতে চলেছে! সেদিন সকালে যখন মিনু দাদী এসেছিল, জীবনের বড় ধাক্কাটা মা খেয়েছিল দাদীর কথায়। “কি গো বউ, তোর মাইয়া দেখি পোয়াতির মতো হাঁটে”। সত্যিই মায়ের মাথায় বাজ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। ভাগ্যিস সময়মত আমি গিয়ে কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের পৃথিবীটা যেন ছোট হয়ে আসছে। বাবার কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ছায়াও এখন আগের মতো করে হেসে-খেলে দিনাতিপাত করে না। সবাই কেমন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি নিকৃষ্ট সমাজব্যবস্থার ভয়ে। তবে রুকু আলাদা। এ নিয়ে তার যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। আসলেই তো, তার কি? সব ভার তো আমাদের উপর। সমাজের অনেকে আমাদের দিকে আঙুল তুলবে। অজানা উত্তরটি জানতে চাইবে। তাকে তো কেউ…
দাদা, মায়ার ডাকে আমি বাস্তবে ফিরে এলাম। ও চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খানিক অভিমানের সুরে বললো, “আমার শরীর খারাপ।” কি এক আবেগ জড়িত কণ্ঠ! ঠিক তখন মায়াকে বুকে জড়িয়ে অনেক শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। নিজেকে সামাল দিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে মায়ার হাত ধরে টেনে এনে আমার পাশে বসালাম। তাকে একটু আদর করলেই সব ভুলে যাবে।
অভাবের সংসার হলেও এসব নিয়ে এই জীবনে মায়ের কখনো অভিযোগ ছিল না বাবার প্রতি। কিন্তু এখন প্রায়ই মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া হয়। বাবা উত্তেজিত হয়ে মাঝে মাঝে গালিগালাজও করেন। অনেক সময় বিরক্ত হয়ে আমি দুই কান হাত দিয়ে চেপে ধরি। নিজের মধ্যে থাকা নিরব জন্তুটি জেগে উঠতে চায়। অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখি।
মস্তিষ্কের ভেতর বারবার প্রতিধ্বনিত হয় “অবলা” শব্দটি। কবে যে নারীর পাশে লেগে থাকা প্রতিহিংসা মূলক শবটি চিরতরে উঠে যাবে!
ভরা পূর্ণিমায় এখন আর চাঁদের সাথে গল্প করা হয় না। শোনা হয় না বুড়ির আহাজারি। ভাবি, মায়াকে যদি বুড়ি তার কাছে নিয়ে যেত! দু’জনে মিলে এক সাথে সুতা কাটতো।
দিন দিন মায়ার শারীরিক ঘটনের পরিবর্তন হচ্ছে। মা-বাবা নিজেদের সাধ্যমতো তা ধামাচাপা দেয়ার মিথ্যে চেষ্টা করছে। আচ্ছা, মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মেয়ের পক্ষে গর্ভবতী হয়ে ওঠা কি আসলেই ন্যাক্কারজনক? তাতে তো তার কোনো দোষ ছিল না। সব দোষ ওই মানুষরূপী নরপশুর। একবার যদি তার পরিচয় জানতে পারি…

বাবা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শহরে গিয়েছেন। এর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমি নিজ কানে শুনেছি। বাবা যেন নিজ হাতেই মেরে ফেলতে চাইছেন মায়াকে। শুধুমাত্র সমাজের ভয়ে এতকিছু! আমি নির্বাক। বাবা একবার ভেবেছিলেন এই জায়গা থেকে বহু দূরে চলে যাবেন সবাইকে নিয়ে। কিন্তু আর্থিক অবস্থা সায় দিল না। এ যেন ঊষা লগ্নেই সূর্য অস্তমিত!  জীবন বড়ই বৈচিত্র্যময়। ঠিক এই মুহূর্তে যদি মিরাকল কিছু ঘটে যেত। কেউ একজন এসে তার দোষ স্বীকার করতো। আমরা ধুমধাম করে মায়ার সাথে তার বিয়ে দিতাম নির্দ্বিধায়। কিংবা সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কেউ এসে এই অবস্থায় মায়াকে বিয়ে করার সম্মতি জানাতো! নিজের পড়ার টেবিলে বসে আছি। এত গোছালো স্বভাবের আমি অথচ এই আমার পড়ার টেবিলে সবকিছু অগোছালো। হঠাৎ করে মায়া এসে আমার বইগুলো গোছাতে লাগলো। ওর চোখ দুটো অসম্ভব ফুলে গিয়েছে। সারা রাত ফুঁপিয়ে কেঁদেছে বোধহয়। আমি উৎসুকভাবে তার দিকে তাকালাম। এবার আর নিজেকে সামাল দিতে পারলো না। মেঝেতে বসেই শুরু করেই দিলো বিলাপ…
আমি উঠে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে রুকু আমার হাত টেনে তার পাশে মাটিতেই বসিয়ে দিলো। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, “নীলু, মায়ার সাথে ঘটে যাওয়া অঘটন আমার বেলায় হলে; তুই কি আমাকে নিয়ে সবার অগোচরে দূর দেশে পাড়ি দিতি?” এর উত্তর আমার কাছে নেই। একপ্রকার জোর করেই নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আমি বেরিয়ে গেলাম।

ইচ্ছে করেই বেশ রাত করে ফিরলাম, জীবনে এই প্রথম আমি রুকুর কাছ থেকে দেশলাই না নিয়ে ধুমপান করেছি। যখন বাসায় ফিরলাম রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টা। এতক্ষণে বাবাও ফিরে এসেছেন। কিন্তু পুরো বাড়িতে পিনপতন নিরবতা। এটা নিশ্চয় আমার দেখা অষ্টামাচার্য! কোনো রুমেই আলো নেই। শুধু মা-বাবার রুমে হারিকেন জ্বলছে। আর ভেতর থেকে গোঙানোর শব্দ ভেসে এসে পরিবেশ হিম শীতল করে দিচ্ছে। কেমন একটা অশরীরী অবস্থা। আমি ঘরের দিকে যেতে উদ্যত হলাম। নিজের রুমে গিয়ে লাইট জ্বালাতেই বাবা এসে উপস্থিত হলেন। উনার পুরো চেহারা তীব্র অপরাধ বোধের ছাপ আমি খেয়াল করলাম। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছে। কিছু না বলেই আমার হাত ধরে নিজেদের রুমে নিয়ে গেলেন। সেই রুমেই গিয়েই অপ্রস্তুতভাবে আমি ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলাম। পুরো ঘর লাল রক্তে ভেসে একাকার। যেন যুবতী কোনো মেয়ের আলতা রাঙানো পা! শত চেষ্টা করেও নিজের মুখ দিয়ে কোনো শব্দ করতে পারলাম না। রুকু এসে আমার পাশে বসলো। বাবা দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ার শরীর কাঁথা দিয়ে ঢাকা। তার বুকের উপর ছোট্ট একটি পুতুল পড়ে আছে। সে ওটা নিয়ে নড়াচড়া করছে। রক্ত দোড় দিয়ে খানিক বাইরেও গেল। বুঝতে পারলাম বাবা শহর থেকে ওষুধ এনে খাইয়ে দিয়েছেন মায়াকে। রাগে রক্ত উঠে গেল আমার মাথায়। নিজেকে শান্ত রেখে নিরবতা ভেঙে বাবাকে বললাম পাশের গ্রাম থেকে ডাক্তার ডেকে আনতে। এখন তো মায়াকে বাঁচাতে হবে।
আচমকা আকাশ গর্জন দিয়ে প্রবল বৃষ্টি ঝরাতে শুরু করলো। বাবার কু-কর্মে আকাশও প্রতিবাদ জানাচ্ছে…
ডাক্তার এলো মাঝ রাতে। ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণে মায়া আমাদের ছেড়ে ওপারে যাবার পাল তোলা বৈঠা বিহীন নৌকায় উঠে গিয়েছে। ডাক্তার কাকু শুধু মুখ দিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করলেন, আহা!
খুব সম্ভবত মায়ার বাবুটার বয়স চারমাস হবে। ঠিক তার বুকের উপর থাকা ছোট্ট পুতুলটির অবয়ব। একবার ছুঁয়ে দেখলাম। অজান্তেই চোখের অশ্রুধারা…
কোদাল দিয়ে রক্তের দাগ উঠিয়ে ফেললাম যদিও আমাদের সবার বুকে তা গভীর ক্ষত করেছে। জীবনেও সেই ঘা শুকাবে না। মা কাঁদতে ভুলে গিয়েছেন, ছায়াও যেন একটি মূর্তিতে পরিণত হলো। তাড়াতাড়ি ঘরটি মা লেপে দিয়েছে। বাবা সবাইকে খবর দিয়ে মায়ার দাফনের ব্যবস্থা করতে লাগলো। এক মুহূর্তের জন্যও রুকুকে দেখলাম না।
কিছুক্ষণ পর পাশের বাড়ি থেকে চিৎকার আসা করলো আগুন, আগুন। রহিম চাচার ঘর! আমি খুব ধীরে বাইরে এসে দেখলাম রুকুকে একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। সে-ই নাকি আগুন লাগিয়ে রহিম চাচাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে।
পুলিশ এসে রুকুকে নিয়ে গেল। এক সাথে দুটো লাশ দাফন হলো। পুরো গ্রামে ছড়িয়ে গিয়েছে মৃত্যু শোক।

মাস খানেক পর আমার চাকরি ঠিক হলো রাজশাহীতে। মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি, সাতাশ হাজার টাকা মাইনে। তবুও যেন আমার পরিবারে হারিয়ে যাওয়া সুখ খুঁজে আনতে আমি ব্যর্থ। আদালতে রায় হলো রুকুর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। বিধির কি লীলাখেলা! অপয়া শিউলি গাছটিতে ফুল এসেছে। অথচ রুকু নেই। আমাকে আর শিউলি ফুলের মালা পরিয়ে দেয়া হলো না তার। খুব ভোরে উঠে আমি সাত কেজি লবণ ঢেলে দিয়েছি শিউলি গাছের গোড়ায়। তারপর ব্যাগ নিয়ে মা’কে সালাম করে ষ্টেশনে এসে রাজশাহীগামী বাসে চড়ে বসলাম এক নতুন জীবনের প্রত্যাশায়!

আহা জীবন,
কচু পাতার জল যেমন!

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৪ Comments

  1. Md Rahim Miah

    হিম-সিম – হিমশীম
    মিরাকল -মিনাক্কেল
    দোড়-দৌড়
    পড়ে ভালোই লেগেছে, তবে মেয়ে মানুষের সিগারেট খাওয়ার নেশাটা গল্পের মাঝে ঠিক মানায়নি। যদিও সিগারেট কি কারণে সে খায় সেটা উল্লেখ করে দিল মানাত। সমাজে এইরকম ঘটনা প্রায় ঘটছে বাস্তবে। মেয়ে মানুষের শুধু শুধু সিগারেট খাওয়া লেখার জন্য গল্পটাতে সাধ পেলাম না আর নিলীন এর সাথে যে ঘটনা প্রথমে ঘটেছে সেটার উল্লেখ বা কোথায়? । তবে আপনার জন্য শুভ কামনা

    Reply
  2. Tanjina Tania

    হিমশিম, মে বি এভাবে হবে বানানটা। দৌড়টা টাইপিং মিস্টেইক বুঝতে পেরেছি। গল্প ভালো। আনকমন থিম। তবে কিছু বিষয় খাপছাড়া লেগেছে। শুভকামনা।

    Reply
  3. অচেনা আমি

    আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রসঙ্গে কিছু কথা :
    গল্পটা মোটামুটি লেগেছে। তবে কিছু বিষয় বেমানান লেগেছে। যেমন –
    চার বছরের বড় বোনের সাথে প্রেম করা। গল্পের শেষে রুকু কেনই বা আগুন লাগিয়ে দিলো সেটা স্পষ্ট না করা। তাছাড়াও বেশ কিছু ভুল রয়েছে। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো :
    দিদুন বল না কে তোর শাড়ি খুলেছে – ছোট বোন কেন বড় বোনকে দিদুন বলতে যাবে? লাইনটা আমি বারবার পড়েও বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি।
    এদিকে বাবা উদাস হয়ে বারান্দা দাৃঁড়িয়ে আছে – এদিকে বাবা উদাস হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন
    কিভাবে – কীভাবে
    হিম- সিম – হিমশিম
    একটাতে মা-বাব থাকে – একটাতে মা-বাবা থাকে (টাইপিং মিসটেক)
    সেবার – সেইবার
    ঘটনের – গঠনের
    সময়মতো – সময় মতো
    সমাজব্যবস্থা – সমাজ ব্যবস্থা
    মাথাব্যথা – মাথা ব্যথা
    আসলেই তো, তার কি? – আসলেই তো, তার কী?
    কি সুন্দর মিহি তার গলা! – কী সুন্দর…

    চিহ্ন ব্যবহারেও কিছুটা ভুল রয়েছে।

    আগামীর জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।

    Reply
  4. Halima tus sadia

    ভালো লিখেছেন।
    আনকমন থিম।বর্ণনাভঙ্গি ভালো ছিলো।
    তবে মেয়ে মানুষ সিগারেট খায় এটা কেমন যেনো শুনায়।
    গল্পে মানায় না।
    বানানে অনেক ভুল আছে।কমেন্টে বলেছে,আমি আর বলতে চাই না।শুধরে নিবেন।
    এগিয়ে যান।শুভ কামনা রইলো।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *