লেখকঃ মৌমিতা সরকার নীলাভ
(মে – ২০১৮)
……………….
পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটাকে নিয়ে খুব চিন্তিত নীলা।
কে এই ছেলে, কিবা তার নাম, আর সে করেই বা কি। খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছে নীলা।
এখানে সে নতুন কিছুদিন হচ্ছে নতুন বাসায় উঠেছে তারা। কোনো কিছু সে ভালোমতো চিনে না। কিন্তুু এই ছেলের চলাফেরার মধ্যে রসহ্য জনক কিছু আছে। আর এই জন্যই নীলার এতো চিন্তা।
নীলা সুযোগে আছে কবে সে তার সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবে।
– বৌদি আমি যাচ্ছি সন্ধ্যায় চলে আসবো।
– আচ্ছা সাবধানে যেও।
– ঠিক আছে।
-নীলা তার দাদা বৌদির সাথে শহরে থাকে পড়াশোনার জন্য। আগে অন্যখানে ছিলো ওখানে জলের সমস্যা হওয়ার কারণে বাসা বদলিয়ে নতুন বাসায় উঠেছে।
এই খালি বড় বাজার যাবা?
নাহ যামু না।
কেনো?
উত্তর না দিয়ে চলে গেলো এ আবার কেমন রিক্সাওয়ালা।
হাঁটতে থাকি সামনে গেলে হয়তো কিছু একটা পাবো। এই ভেবে হাঁটতে থাকে নীলা।
একি! এইটা তো সেই পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটা।
এভাবে জোরে জোরে হেঁটে সে কোথায় যাচ্ছে? নাহ, দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা।
নীলা পিছু নিলো ছেলেটার। কোথায় যাচ্ছে সেটা দেখার জন্য।
কিছুদুর যেতেই ছেলেটাকে হারিয়ে ফেললো নীলা।
তারপর নীলা তার গন্তব্যের পথে চলে গেলো।
কাল তার কোচিং এ পরীক্ষা কিন্তুু তার সন্ধ্যা থেকে কিছু পড়া হয়নি। এখন বাজে রাত দুইটা। মধ্যরাত। তবুও তার পড়া শেষ হচ্ছেই না। এভাবে আরো একটা প্রহর কেটে গেলো। ঘুমে সে কাতর হয়ে পড়ছে।
কিছুর একটা আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ হাঁটছে। শব্দটা বাহির হতে আসছে। নীলা দেখার চেষ্টা করলো।
সেই ছেলেটা এতো রাতে ছাদে যাচ্ছে। এতো রাতে ছাদে যাওয়ার কি আছে? ছেলেটা মনে হয় কোনো নাশকতামূলক কাজ করে না হলে কেউ এখন ছাদে যাবে। না ….একটু সাবধানে থাকতে হবে।
সকালে ছাদে গেলাম গাছে জল দিতে। আশেপাশে অনেক সিগারেটের পোড়া অংশ পড়ে আছে। আমার আর বুঝতে বাকি নেই।
গাছে জল দিয়ে পেছন ফিরতেই দেখি সে দাড়িয়ে আছে। আমি তো রীতিমতো ভয় পেয়েছিলাম।
আপনি কি এখানে নতুন এসেছেন? আমি আপনার পাশের ফ্ল্যাটে এ থাকি। সেদিন দেখলাম আপনাকে। আমার নাম নিশাত।
আমি নীলা।
এই বলেই সে তাড়াতাড়ি চলে এসেছে নীচে। কারণ তার একদম বিশ্বাস হয়না তাকে। মনের অজান্তেই নামটা সে বলে ফেলেছে। এখন সে আফসোস করছে কেনো যে বললো এখন সে না জানি কি করে ফেলে। এ ছেলেকে একদম বিশ্বাস নেই।
সেদিন রাস্তায় আবারও দেখা নিশাতের সাথে, তাকে দেখলাম হাসপাতালে যেতে। নিশ্চয় গুন্ডামী করে কাউকে আহত করে এখন সে থ্রেট দিতে যাচ্ছে। মানুষের মনে একটুও কি দয়া-ময়া নেই।
নাহ আমার বুঝতে কিছু বাকি নেই এ ছেলে ভালো না। যতোটা পারি দূরে দূরে থাকতে হবে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই সামনে নিশাত। কেমন জানি চাহনি তার মনে হচ্ছে জীবনে মেয়ে দেখেনি।
নীলা ভালো আছেন? সেদিন ওইভাবে নেমে আসলেন যে কোনো সমস্যা ছিলো নাকি?
আসলে নীলার কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই। একদম গায়ে পড়া ছেলে। কি দরকার আছে একটা অচেনা মেয়ের সাথে কথা বলার। না কোনো সমস্যা ছিলো না। আমার তাড়া ছিলো তাই চলে এসেছি। আচ্ছা আমি যাই।
বল্লেন নাতো কেমন আছেন?
মোটামুটি।
মেয়েটা কেমন জানি পালাতে চায় শুধু। কিন্তুু কেনো? আমার চোখে কি সে কিছুই দেখে না?
নীলা নিশাত কে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে দেখেছে আর অন্যরকম ভেবেছে।
আচ্ছা, নিশাত কি এমনই যেমনটা নীলা কল্পনা করে। সেকি সত্যিই এমন কিছু করে যেটাতে মানুষের ক্ষতি হয়। কোনো অপরাধমূলক কাজের সাথে নিশাত যুক্ত।
এরপর অনেকবার নিশাত নীলার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। বারবার সে ব্যর্থ হয়েছে। মেয়েটা এমন কেনো?
পরে নীলার সব ভুল ভাঙ্গে। ছেলেটি খুব সহজ সরল। মাঝরাতে ছাদে যায় কারণ আকাশের তারাদের মাঝে সে তার বাবা, মা , ছোটো বোন কে খোঁজে। একটা দূর্ঘটনায় নিশাত তার পরিবার কে হারায় ভাগ্যক্রমে সে বেচেঁ যায়। আর সেদিন হাসপাতালে গিয়েছিলো একজন রোগীকে রক্ত দিতে। সে একটা সেবামূলক সংস্থার সাথে যুক্ত আছে। সেখানে তাকে সকাল হতে রাত পর্যন্ত সময় দিতে হয়। ঘুমের ঘাটতির কারণে তার চেহারার মধ্যে সন্ত্রাসী ভাব এসে গেছে। আর এখান হতেই নীলার মনে এতো সন্দেহ।
যাই হোক নীলার ভুল ভেঙ্গে যাওয়ার পর সে নিজেই নিজেকে বলছে, সবসময় উল্টো পাল্টা ভাবতে হবে কেনো? একজন মানুষের বাহ্যিক রূপ কি তার সবটা বলে দেয়? এমন নয় কি যেটা মানুষের বাহিরে দেখা যায় সেটা সে নয়। একটা খারাপ চেহারার মাঝে ভালো কেউ থাকতে পারে। আবার খুব ভালো চেহারার মাঝে নোংরা মানুষ পাওয়া যায়। আমাদের উচিত আগে মানুষটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা তারপর তাকে নিয়ে কথা বলা। তাহলে এমন কেনো আমি?
এখন আর নীলা নিশাত কে ভয় পায়না সে তাকে সঙ্গ দেয়। তাঁর কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছে। সেও অসহায় মানুষকে সাহায্য করে।
“আজ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষটাই হচ্ছে নিশাত।”
“পাশের ফ্ল্যাটের সেই ছেলেটা।”
০ Comments