অক্টোপাস বাচ্চা
প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 3,287 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

গল্প লেখকঃ
ইসরাত জাহান ইক্তা
(Md Si Rana)
(মে – ২০১৮)
……………

এক শহরে এক দম্পতি থাকত। তাদের মধ্যে ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না। স্বামী সকাল ৯ টায় অফিসে যেত আবার রাত ৯ টায় আসত। স্ত্রী ঘরের কাজ করত। দিন শেষে আবার দুজন একসাথে খাওয়া দাওয়া করে, নামায পরে বারান্দায় যেত রাতের আকাশে তারা গণনার জন্য। সকালে যখন ফজরের আযান দিত স্ত্রী তার স্বামীকে মসজিদে পাঠাত নামাজ আদায়ের জন্য। আর এ ফাঁকে সেও নামাজ পরে নাস্তা বানাত। তারপর তার স্বামী আসলে একসাথে নাস্তা খেত। এভাবেই তাদের জীবন যাচ্ছিল সুখে, কিন্তু হঠাৎ একদিন তারা এক টেস্ট করে জানতে পারলেন তার সে মা হওয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু এতো দুঃখের মাঝেও তারা আল্লাহর উপর থেকে আস্থা হারায়নি। তারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তো আর আল্লাহর কাছে একটি সন্তানের জন্য ফরিয়াদ করত। আল্লাহ তায়ালা একদিন এই নিঃসন্তান দম্পতির ঘরে পৌছালেন সুখের সংবাদ। সেই স্ত্রী এখন গর্ভবতী। এখন তার স্বামী অফিস থেকে তাড়াতাড়ি এসে তার সাথে কাজে সাহায্য করেন। তাদের জীবনে সুখের কোন কমতি ছিল না তখন।

পাঁচ মাস যেতেই তারা আল্ট্রাসনোগ্রাফ করালেন কী হবে তা জানার জন্য। কিন্তু রিপোর্টে যা আসল তা শুনার জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। তার গর্ভে যে বাচ্চা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে তা নাকি এক অদ্ভুত বাচ্চা। বাচ্চাটার দেহ নাকি দেখতে অক্টোপাস এর মত। ডাক্তাররা বললেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাচ্চাকে নষ্ট করে দিতে। তার স্বামীরও এতে মত ছিল কিন্তু স্ত্রী এতে রাজি হলেন না, তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য যেরকম সন্তানই পৃথিবীতে পাঠাক না কেন আমি তা হাসিমুখে গ্রহণ করব। কিন্তু স্বামীর তাতে অমত ছিল এবং বলল, তুমি কি জান তোমার এই ভয়ংকর অক্টোপাস বাচ্চার জন্য সকলে আমাদের থেকে দূরে চলে যাবে? স্ত্রী বলল, না তোমার যা ইচ্ছে তাই বল কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে পিছুপা হব না, আমি আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবোই।
স্বামী:ঠিক আছে তাহলে তুমি তোমার বাবার বাড়িতে গিয়ে থাক আর এই সন্তান আমার পরিচয়ে বড় হবেনা।
স্ত্রী : ঠিক আছে আমার জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না।

তারপর স্ত্রী চলে গেল তার বাবার বাড়িতে। আশে পাশের লোকেরা তাকে অপয়া বলতে লাগল, কিন্তু এতে সে কিচ্ছু মনে করল না।

দিন যায়, মাস যায় একদিন সন্ধ্যায় সময় এল। তার প্রসব বেদনা শুরু হল। তার বাবা-মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। তার বাবা -মা শুধু দোওয়া করছিল।

তার স্বামীও খবরটা শুনেছিল কিন্তু সে আসেনি। কিছুক্ষণ পরই অপারেশন থিয়েটার থেকে ভেসে আসছিল নবজাতকের কান্নার আওয়াজ। ডাক্তার বের হয়ে যে খবরটি শুনালেন তাতে তাদের চোখ থেকে জল বের হচ্ছিল, যেন সুখের অশ্রুজল। তারা বিলম্ব না করে ফোন করল তাদের জামাই রাজাকে। স্বামী এলে শ্বশুর আর শাশুড়ি তাকে নিয়ে গেল কেবিনে আর বলতে লাগল, দেখ বাবা তোমার চারটা ফুটফুটে সন্তান হয়েছে। তার গাল বেয়ে জল নামল। তার তিন ছেলে আর এক মেয়েকে দেখে, পৃথিবীর সব সুখ যেন তার উপর নেমে এসেছে। তারপর ডাক্তার বাবু এলেন এবং বললেন আসলে ওরা মাতৃগর্ভে এমনভাবে একে অপরের সাথে জুড়ে ছিল যেন একটি অক্টোপাস।

বিজ্ঞানের এতসব যন্ত্রপাতি আল্লাহর এই রহমতকে বের করতে অপারগ, তাহলে কি করে আমরা আমাদের জীবনটাকে যান্ত্রিক করে রেখেছি? আমরা কি পারিনা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখতে? আল্লাহর দানে সন্তুষ্ট থাকতে? আল্লাহর উপর আস্থার প্রতিদান এমনি হয়। কোন লোকচক্ষুকে ভয় করলে চলবেনা বরং সে লোকসকল ও আল্লাহর সৃষ্টি যেমনটা তুমি আর আমি। অন্যের উপর আস্থা নয় বরং তার উপর আস্থা রাখ যে তাদেরও আস্থা, সকলের আস্থা।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *