শাপলা নয় যেন হৃদপিন্ড রেখে এলাম
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,849 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখকঃ
রোকসানা রশিদ লিলি
(এপ্রিল – ২০১৮)
………………

কোনো এক মুখপুড়ো আমায় বলেছিলো তুই শাপলা ভালোবাসিস। তাই ভোর-দুপুরে ধুতি গুটিয়ে গিয়েছিলাম শাপলা তুলতে।দেরিতে গেলে তো আর ভাগ্যে জোটে না। সে যাই হোক সেবার শাপলা তুলে রেখে এসেছিলাম তোর উঠোনে। ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম শাপলা নয় যেন হৃদপিন্ড রেখে এলাম। আর তুই কিনা সে শাপলা রেধে খেলি? পেটে তোর বিষফোড়া হবে দেখে নিস। বেণী দুটো দুলিয়ে দুলিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমার হাতে এক বাটি শাপলার ঝোল ধরিয়ে দিয়ে বললি
-“পটু দা, জানো আজ কি কান্ড হয়েছে? ভোরে দোর খুলে দেখি কে যেন উঠোনে এক পাঁজা শাপলা ফেলে গেছে। দুপুর গড়িয়ে গেলো তবু কেউ নিতে এলো নে। তাই মা ও দিয়ে আমায় শাপলার ঝোল রেধে দিয়েছে। আমি আবার শাপলার ঝোল খেতে বড্ড ভালোবাসি কিনা।”
-“শুধু শাপলার ঝোল খেতে ভালোবাসিস? ফুল ভালোবাসিস না?”
-“নাতো। পটু দা আমি বলি কি, যে অতগুলো শাপলা ফেলে গেলো সে শালুকগুলো সেদ্ধ করে নিজের পড়ার টেবিলের উপর না রেখে আমার উঠোনে ফেলে গেলেই তো পারতো বলো।”
-“না…. ইয়ে.. মা…মা…নে তুই কি বল..লতে চাইছিস?”
-“তোতলাচ্ছো কেন পটু দা? এমা এ কি কান্ড! তোমার পড়ার টেবিলেও দেখি শালুক সেদ্ধ। আচ্ছা এ শালুক আমার উঠোনে ফেলা শাপলার নয়তো?”
-“কি.. বা..জে বকছিস বল..লতো ত..খন থেকে!”
মালিনী সোজাসুজি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ দুটো আসামি ধরার আনন্দে চকচক করছে। অন্যদিকে আমার চোখে অপরাধের স্পষ্ট ছাপ। লজ্জা আর নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগে যেনো কুকড়ে যাচ্ছি। বন্ধুমহলে আমি লৌহমানব নামে খ্যাত। যে আবেগে মোচড়ায় না, ভাঙ্গে না। দূর্ভেদ্দ্য। কিন্তু মালিনী! ওতো চুম্বককন্যা। আমায় কেমন অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়ে টানছে। দুচোখ ভরা যেন রক্তিম আগুন। প্রতি মুহূর্তে আমায় গলিয়ে দিচ্ছে। ওর প্রতি দুর্বলতার কথা প্রথমে পিসিমণিকেই বলেছিলাম। তিনি অল্পকথায় উত্তর দিলেন
-“যা কইবার আমায় কয়েছো। এসব আর মুখেও এনো নে। বাহ্মম সন্তান হয়ে দুলে ঘরে মেয়েকে মনে ধরেচে। এই কথাখানা কোলকাতায় তোমার বাবা-মার কানে গেলে কি হবে জানো? তোমাকে কেটে গঙ্গা বিসর্জন দিয়ে শুদ্ধি পুজো দেবে। এখানে পড়তে এসেচো। পড়ার শেষ করে ফিরে যাও। অন্যদিকে মন দিও নে। বুঝলে?” পিসিমা অবাস্তব কিছু বলে নি। তিনি নেহাত আধুনিক বলেই জাত প্রথা মানে না। কিন্তু আমার মা? কট্টর হিন্দুবাদী বলতে যা বোঝায়। নিচুজাতের ছোঁয়া লাগলেও কয়েকবার গঙ্গাস্নান না করলে তার চলে না। কিন্তু সকলকে কি করে বোঝাই মালিনী ছাড়া যে আমার চলবে না। মালিনীকে আমি ঠিক বুঝতে পারি না। মুহূর্তেই মনে হয় ওর চোখ দুটো আমায় কিছু বলতে চায়। আবার মনে হয় না সেটা শুধুই আমার চোখে ভ্রম।এর মধ্যেই মালিনী একদিন ছুটতে ছুটতে এসে বলল ওকে বিকেলে নাকি পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। পচ্ছন্দ হলে আজই পাকা কথা বলে যাবে। বলতে বলতে ওর গলা জড়িয়ে যাচ্ছিলো বারবার।
-“আমায় জানাতে এলি যে?”
-“আমি বরং যাই।”
-“দাড়া। সত্যি করে বল, তোর কেন মনে হলো যে কথাটা আমার জানা দরকার?”
-“পথ আটকিও নে। আর আটকাবারই যদি হয়, তবে সাত জন্মের জন্যই আটকিও।”
সেদিন আমি আর দেরি করি নি,কোলকাতায় রওনা দিয়েছিলাম। তাজ্য হবার ভয় ছিলো না। শুধু তাদের জানানোটা আমার দায়িত্ব মনে হয়েছিলো। কিন্তু আমার আর ফেরা হয় নি। আমি পৌছে বাবাকে পেয়েছিলাম শয্যাশয়ী। শেষ মুহূর্ত যাকে বলে। ওমন সময় মালিনীর কথা তোলা তো দূরে থাক ভাবাটাও ছিলো অনাচার। আমি ফিরেছিলাম তিনমাস বাদে। ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য সংবাদটা আমি অনেক আগেই পিসিমার চিঠিতে জেনেছি। তাই গাঁয়ে ফিরে অবাক হয়নি। মালিনীর সাথে ওর স্বামীর বয়সের ব্যবধান অনেক। কিন্তু মানুষ ভালো শুনেছি। ওরা এগাঁয়েই আছে। এখন আর বাড়ি থেকে তেমন একটা বেরুই না। কিন্তু ইন্দ্রশ্বরের সাথে দেখা হওয়াটা যেন আমার ভাগ্যেই লেখা ছিলো। তিনি আসলেই লোক ভালো তবে কথা বেশী বলে। গল্প শুরু হলে আর থামতেই চায় না। তার প্রায় সব গল্পই মালিনী কেন্দ্রীক।
-“আরে মশাই আমার বউয়ের মতো বউ গাঁয়ে কটা আছে বলুন দেকি। এমন কোনো কাজ নেই যে পারে না। আমার ঘরটা এক্কেবারে আলোয় ভরে গেচে। কিন্তু জানেন ওকে নিয়ে আমার ভয় হয়। ওর বোধয় শাপলায় ফারা আচে। এইতো সেদিন শাপলা এনে বল্লুম ভালো করে ঝোল রেধে দিতে। স্নান শেষে বাড়ি ফিরে দেকি তরকারি পুড়ে ছাই। গিন্নি সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।আর প্রথম যেদিন শাপলা এনে দিয়েছিলাম সেদিন তো কুটতে গিয়ে হাত কেটে সেকি কান্ড। আরে মশাই….ও মশাই ….এই যে শুনছেন?…আপনি আবার কি ভাবতে বসে গেলেন?”

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *