গল্প লেখক: নীল
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
…………
প্রতিদিন আছরের নামাজে যাওয়ার সময় একটি মেয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। এই বিষয়টা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগে না। মেয়েটাকেও না। তবে ও যখন এভাবে তাকিয়ে থাকে তখন আমি খুব বিব্রত হই। মেয়েটা বোধহয় আমাকে বিব্রত করার জন্যেই এভাবে তাকিয়ে থাকে।
প্রতিদিনকার মত আজকে বিকালেও আমি নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের দিকে যাচ্ছি। আমার বাসা থেকে মসজিদ ৮মিনিটের রাস্তা। আর এই ৮মিনিটের রাস্তার ৫মিনিট হাঁটার পর মেয়েটার বাসার গলি। ও সবসময় এই গলির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। আজকে আরো কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। লক্ষ করছি, মেয়েটা উকিঝুকি দিয়ে দেখছে আমি আসি কিনা। আমি কাছে আসার পর ও বাসার ভিতরে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ করে আমি ডাক দিয়ে উঠলাম! “এই যে…!” মেয়েটা চমকে গিয়ে বললো, – কিছু বলবেন?
আমি বললাম, – হ্যা বলবো।
– জ্বি বলুন।
– তুমি প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে থাকো কেন?
– আপনাকে দেখার জন্য!
মেয়েটা সরাসরি এমন কথা বলবে প্রত্যাশা করিনি। আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, – কেন?
– ভালো লাগে তাই!
– মানে?
– আমি আপনাকে পছন্দ করি।
কথাগুলো বলে মেয়েটা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। কি ভয়ংকর ব্যাপার! একটা মেয়ে সরাসরি এসব কথা বলতে পারে; আমার ধারণা ছিলো না। কিন্তু মেয়েটাতো শুধু বলেছেই না বরং বলে আমার সামনে দাঁড়িয়েও আছে। এসব মেয়েদের ভয় পাওয়া উচিত। আমি পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম।
২দিন আমি আর এই মসজিদে যাইনি। তৃতীয় দিনের মাথায় মেয়েটি আমার বাসায় হাজির। আমাদের বাসায় শুধু আমি আর আম্মু থাকি! বাবা কিছুদিনের জন্য বাহিরে গেছেন।
মেয়েটা কলিংবেল চাপলো। মা দরজা খুলতেই মেয়েটি সালাম দিয়ে রুমে ডুকে পড়লো। আম্মু কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এ’কি কাকে চায়?”
মেয়েটা সরাসরি আমার নাম বলে দিলো। আম্মু বললো, “ইমরানকে কি দরকার?!”
– ওর কাছ থেকে কিছু নোটস নিতে আসছিলাম আন্টি।
– তুমি ইমরানের সাথে পড়?
– জ্বি।
– কিন্তু তোমাকে দেখে এমনটা মনেহয় না!
– কি যে বলেন আন্টি।
– আচ্ছা ঠিক আছে। ওই’যে ওই রুমে ইমরান আছে তুমি যাও। ( হাতের ইশারায়)
মেয়েটা হুট করে এসে আমার রুমে ডুকে পড়লো। আমি তখন ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে ডুকছি। রুমে ডুকেই চমকে গেলাম। এই মেয়েটি এখানে কেন!!!
কিছুটা অপ্রস্তুতভাবেই বললাম, – তুমি এখানে কি কর?
– আপনাকে দেখতে আসলাম।
– আমাকে দেখতে আসছো মানে?
মেয়েটা কিছু না বলে কিছুক্ষন সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, – আপনি এখন মসজিদে যান না কেন?
– কে বলছে যাই না?! যাইতো।
– ওই গলির রাস্তা দিয়ে যান না কেন?
– সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
– ওহ্!
বলেই মেয়েটা চলে যাচ্ছে। আমি পিছন থেকে ডাক দিলাম। বললাম, – তুমি কি চাও বলোতো?
– আপনাকে! মেয়েটা খুব স্বাভাবিকভাবেই বললো। বলেই চলে গেলো। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ভাবনার কোনো পথ খোঁজে পাচ্ছি না। ভীষণ বিব্রতকর অবস্থা।
যাইহোক আগের মতো ওই গলির রাস্তা ধরেই যাওয়া আসা শুরু করছি। মেয়েটিও হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর তাকিয়ে থাকার মধ্যে একধরণের মায়া আছে। আমি নিজের অজান্তেই সেই মায়ার বেড়াজ্বালে আটকা পড়ি। তবে কি আমিও মেয়েটিকে চাই? হয়তো চাই।
mota moti