গল্প লেখকঃ
Mehedi Hassan Tanvir
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
……………
বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে। উনার নাম ছিলো সুমু। বিয়ের আগে উনাকে শুধু ২টা কথাই জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আপনি কি নামাজ পড়েন? আর আপনার আমাকে বিয়ে করার মত আছে কি না?
উনি প্রথম উত্তরে হ্যাঁ বলেছিলেন এবং ২য় উত্তরে বলেছিলেন যে আমাদের বিয়ে হলে ভেবে নিবেন যে মত আছে, বলেই মনে হলো খুব লজ্জা পেলো তাই আমি আর কিছু না বলে চলে এসেছি।
এরপর দিনই আমাদের বিয়ে হয়েছিলো। সারাদিন রোবট এর মত যে যা যেভাবে বলেছিলো সেভাবে করেছিলাম আর স্ট্যাচু হয়েছিলাম দুজনই, যেন আমাদের জাদুঘরে রাখা হয়েছে আর সবাই আমাদের দেখছে। আমার মনে হলো আমি বোবা হয়ে গিয়েছি। কারো সাথেই কথা বলার পরিস্থিতি নেই, আর এতো মানুষের মধ্যে কারো সাথে হাসি ঠাট্টা করে কথা বলার অধিকার আজ আমার নেই কারন আজ আমি বর। উনারও একই অবস্থা।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলো, যাক বাবা এবার নিজের রুমে যাবার পালা। নিজের রুমের দরজা হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে খুলতে যেনো হাত কেপে উঠলো। দরজা হাল্কা খুলে, না ঢুকেই বললাম –
: আসবো?
: (মাথা নেড়ে আসার অনুমতি দিলো)
কি অবাক লাগছে আজ নিজের রুমে ঢুকার জন্য অনুমতি নিচ্ছি।
যাবার পর সুমু আমাকে সালাম করলো। পরে ঘোমটা উঠিয়ে দেখলাম মাশাল্লাহ বউ দেখতেও খুব সুন্দর শ্যামলা(এটা এজন্য বলছি কারন ওর শুধু একটা ফটো দেখেছিলাম আর উনাকে বিয়ে করেছি আমি উনার চরিত্রের কথা শুনে)। দেখি বিয়ের সব গয়না পড়ে আছে, পরে বললাম এসব পড়ে এখনো বসে আছেন যান চেঞ্জ করে নিন, ওয়াশরুম ওখানে আর শুনুন অযুটা করে আসবেন। হ্যাঁ সূচক সম্মতি দিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলেন।
আর এতক্ষন বসে বসে ভাবছি সব ঠিক ভাবে বলতে পারবো তো?
এই যে উনি বের হয়েছেন,যদিও খুব সুন্দর লাগছিলো কিন্তু প্রশংসা করলাম না।
লাজুক মুখে নিচে তাকিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে (হয়তো বুঝতে পেরেছে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম যে)।
বললাম, আসুন নফল নামাজ পড়ে নেই। উনি সম্মতি জানালেন। তারপর নামাজ শেষ করে বিছানায় বসলাম। উনিও বসলেন যদিও মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। তারপর শুরু করলাম
:দেখুন আমি কখনো প্রেম করিনি শুধু মাত্র একটা কথার ভিত্তিতে তা হলো “বিয়ের আগে প্রেম করা হারাম আর যে যেমন করবে আল্লাহ তাকে ওইরকম স্ত্রীই ভাগ্যে রাখবে” তাই আমার প্রথম থেকেই ইচ্ছা যে আমি যাকে বিয়ে করবো তার সাথেই প্রেম করবো এবং অনেক ভালোবাসবো তাকে,এতোদিনের জমানো সব প্রেম ভালোবাসা সব তাকে দিবো এবং আমার কিছু স্বপ্ন ও রয়েছে।
: … (চুপ হয়ে রইলেন)
তারপর আমি উঠে গিয়ে আমার ড্রয়ার থেকে একটা গিফট বক্স আর একটা প্লাস্টিক এর গোলাপ নিয়ে তার কাছে গেলাম এবং গিফট বক্সটা তার পাশেই রাখলাম। তখন উনি আমার দিকে চেয়ে ছিলেন,হয়তো ভয় পেয়েছিলেন যে উনি চুপ হয়ে ছিলেন তারজন্য আমি উল্টাপাল্টা কিছু করব নাকি আবার।
তার সামনে এসে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে গোলাপটা তার সামনে ধরে বললাম
:আপনাকে আজীবন ভালোবাসার,আগলে রাখার, ভালো রাখার,স্বপ্ন পূরন করার সুযোগ দিবেন?
:…(গোলাপটা নিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো)
:এই প্লাস্টিক এর গোলাপ দেওয়ার কারন কি জানো? কারন হলো আমি তোমাকে এই প্লাস্টিক এর গোলাপ এর মতই ভালোবাসবো, এর পাতা গুলো যেমন কখনো নষ্ট হবে না, এর সৌন্দর্য যেমন কখনো কমবে না আমার ভালোবাসা ও তোমার জন্য কখনো কমবে না।
আর এই নাও এটা আমার প্রথম ভালোবাসার প্রথম গিফট। এর ভিতরে পৃথিবীর সবচেয়ে মুল্যবান জিনিসটা রয়েছে। নাও খুলে দেখো। আর আমার স্ত্রীকে প্রোপোজ করার পর আমি তাকে তুমি করে বলবো এটাও আমার স্বপ্ন ছিলো।
সুমু গিফট বক্সটা হাতে নিলো সে খোলার আগেই আমি তাকে বলতে শুরু করলাম
:আমার এতোদিনের স্বপ্ন গুলো কি শুনবে না? আমার স্বপ্ন ছিলো আমি এমন একজনকে বিয়ে করবো যে নামাজ পড়ে প্রতি নিয়ত, আল্লাহ কে ভয় করে, জাহান্নাম কে ভয় করে। সে দেখতে যেমনই হোক না কেনো সেই আমার কাছে সব চেয়ে সুন্দর এবং আমি তা পেয়ে গিয়েছি। আমার স্বপ্ন ছিলো সে আমাকে নামাজের জন্য তাগিদ দিবে,কিভাবে জান্নাতে থাকতে পারবো একসাথে সে বিষয়ে বেশি আলোচনা করবে। আমার স্বপ্ন ছিলো সে আমাকে ইসলাম এর বিধি-বিধান সম্পর্কে জানাবে, একসাথে কোরআন পড়তে আবদার করবে। আমার স্বপ্ন ছিলো সে আমাকে আমার মতন করে বুঝবে এবং নিজের মতো করে ভালোবেসে নিজের করে রাখবে, যে কোন পরিস্থিতিতে সে আমার সাথে থেকে সাহস যোগাবে। আমার স্বপ্ন ছিলো বাবা মা তোমার আচরন দেখে মুগ্ধ হোক এবং তোমাকে খুব ভালোবাসুক। স্বপ্ন ছিলো আমার এই সব স্বপ্নের কাজগুলো তোমার সাথে মিলে করা। এটাও আমার স্বপ্ন যে তোমার সব স্বপ্ন আমি পূরন করার সর্বচ্চো চেষ্টা করবো এবং আমি সফল হবো পূরন করতে।
তার দিকে তাকিয়ে দেখি মাথা একদম নিচু কিছু দেখা যাচ্ছে না। তারপর নিজেই তার হাত থেকে গিফট বক্স নিয়ে খুলে তার হাতে রাখলাম বক্স সহ এবং দেখতে বললাম হাল্কা মাথা উঠিয়ে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো দেখলাম তার পুরো চোখে পানি, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, গিফট বক্সে থাকা কোরআন শরীফ কে হাত থেকে পাশে রেখেই আমার দিকে চোখ তুলে তাকালও। এতক্ষন নি:শব্দে কাঁদছিলো যে সেই শ্বাস নিচ্ছে এখন। তারপর বলে উঠলো আমার স্বপ্নগুলোও ঠিক আপনার মতোই ছিলো এবং আমি তা পেয়ে গিয়েছি।
ওর এই সুখের কান্নাটা আমি থামাতে চাইলাম না কারন সুখের কান্নাটা অনেক বেশি আনন্দদায়ক। এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর বুঝলাম যে কান্না থেমে গেছে। লজ্জায় আর কিছু বলতেও পারছেনা আর আমার মুখের দিকেও তাকাতে পারছেনা। তাই ওকে ধরে নিয়ে বালিসে শুইয়ে দিয়ে মুখে লেগে থাকা কান্নার পানি মুছে দিয়ে বললাম এতো ভালোবাসা নিতে পারবে তো? ও মুখ লুকিয়ে বলে উঠলো খুব পারবো।
তারপর বলে উঠলো আমিও প্রেম করিনি কখনো, বিয়ের পর করব বলেই স্বপ্ন বুনেছি, সবসময় আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলার চেষ্টা করতাম, আর প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর মোনাজাতে আল্লাহর কাছে চাইতাম যে আল্লাহ আমি যেনো আমার মনে মত কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাই এবং তাকে অনেক ভালোবাসতে পারি। জানেন এ পর্যন্ত আমাকে অনেক কষ্ট করে আসতে হয়েছে তাও সেটাকে আমি কিছু মনে করি না কারন আল্লাহ আজ আমাকে অনেক খুশি করেছে। আমি কখনো পরপুরুষের সামনে যেতাম না প্রয়োজন এবং নিকাব ছাড়া, একমাত্র আল্লাহর ভয়ে কারন আমি যা করব সে রকম স্বামী আমি পাবো সাথে তো জাহান্নাম আছেই।
আমি বললাম আমি তোমার খবর নিয়েই বিয়ে করেছি আর আল্লাহ আমার সাথে ছিলেন তাই তোমাকে পেয়েছি, হাজার শোকর আল্লাহর কাছে। আজ তো অনেক ঝড় গিয়েছে শরীরের উপর এখন ঘুমিয়ে যাও। সুমু বললো আমার একটা স্বপ্ন এখন পূরন করতে হবে বলেই আমার দিকে ফিরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনেক আকুতি নিয়ে কথাটা বলবে। আমি বললাম বলে ফেলো। ও বললো আজ আমি আপনার বুকে শুবো সে ঘুম আসুক আর না আসুক। বলতেই আমি তাকে জড়িয়ে আমার বুকে নিয়ে আসলাম আর বললাম খুশি? ও বললো খুব।
০ Comments