গল্প লেখকঃ
সুমাইয়া সারাহ মিষ্টি
(ফেব্রুয়ারী)
……………
আজ আমার প্রথম বিবাহবার্ষিকী। এবং আজই আমি আমার স্বামী কে খুন করব।
গত এক বছরে আমি আমার জীবনের সেরা সময় কাটিয়েছি এই মানুষটার সাথে৷ সে আমাকে তার দুনিয়া এবং দুনিয়া কে আমার পায়ের নিচে রেখেছিলো৷ সবকিছু চাওয়ার আগেই তা হাজির করে দিতো, যেন সে একটা জাদুকর! আমাকে দেবীর আসনে বসিয়েছে সে, নিজেকে সপে দিয়েছে আমার পদতলে৷ সেই আমিই আজ দেবী হয়ে তার বধ করবো! কারণ তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই!
কাল রাতে ও দেরি করে বাসায় ফেরে, আমি ততক্ষণে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম ভেঙে দেখি সে কিছু একটা লিখছে। আমার জেগে যাওয়া টের পেয়ে হুট করে কিছু আড়াল করার চেষ্টা করে৷ আমি উঠি, আমরা একসাথে খেতে বসি তারপর ওর বুকে মাথা রেখে রোজকার মতো ঘুমিয়ে যাই দুজনা৷ ও ঘুমিয়ে গেছে বুঝার পর উঠে ওর স্টাডি রুমে যেয়ে সব ড্রয়ার তন্নতন্ন করে খুঁজি এবং পেয়ে যাই ওর নোটখাতা। পড়তে শুরু করি। একদিকে পড়া এগোয় অন্যদিকে যেন আমার পায়ের মাটি সরতে থাকে! নোটখাতায় লেখা ছিলঃ
“কাজল শুধু আমার! ও নিজেও জানেনা প্রথম দেখার পর থেকে ওকে আমি ভালবাসি! ওর চলাফেরা, ওর হাসি, ওর ব্যথা সব আমি দূরে থেকে দেখেছি, ভেবেছি ওর সব আমার হবে, শুধুই আমিই ওর সবকিছুর মালিক হব! ও কারো না, ওকে কারো হতেও দিবো না আমি! ও সুন্দর তাই অম্বর দাদা ওকে ভালবাসে আমি জানি। ওর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেলে কেউ ওকে ভালবাসবে না, আমি বাসবো! তাইতো ওইদিন সন্ধ্যে বেলা ওর বাসার সামনের গলিতে ওর মুখে ক্ষুরের ফাস দিয়েছিলাম। ওই কাটায় সেলাইয়ের দাগ দেখেও কি না অম্বর দাদা ওকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছিলো! বাধ্য হয়ে অম্বরদা কে বিয়ের দিন খুন করতে হয়েছে, এছাড়া আর উপায় ছিল না৷ ওকে খুন না করলে তো কাজল লগ্নভ্রষ্টা হতো না, আর আমিও ওকে নিজের করে পেতাম না! কাজল আজ আমার, শুধুই আমার!”
অম্বর আমার ভালবাসা ছিল, জীবনের প্রথম ভালবাসা! ওর গুণ, ওর সততা, ওর সবকিছুই ছিল আমার মনমতো! আমাকে ভালবাসতো নিজের চেয়েও বেশি! পরিবারের সবাই সম্পর্ক টা সহজ ভাবে মেনে নিয়েছিলো, আমাদের বিয়ে ঠিক ছিল৷ আশীর্বাদ হয়ে গেছিলো। বিয়ের ২সপ্তাহ আগে বিয়ের বাজার করে অম্বর বাসার গলিতে আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। আর বাসার গলিতে ঢুকতেই মুখ বাধা কেউ একজন আমার গালে কিসের যেন আচড় দিয়ে পালিয়ে যায়! আমার চিল্লানোতে সবাই বেড়িয়ে আসলেও ওকে আর ধরতে পারেনি৷ ছ’টা সেলাই লেগেছিল গালে! আয়নায় নিজেকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠি! ভয় লাগছিলো নিজেরই! বিয়ে করব না বলে জানিয়ে দিই অম্বর কে! ও আসে, আমার হাত টা ধরে বলে “তোর কি মনে হয় তোর রুপে পাগল হয়ে ভালবাসি তোকে? পাগলি তোকে ভালবাসি, রুপ তো দুদিন পর নষ্ট হয়ে যাবে! আর আমার সাথে এমন হলে কি আমাকে বিয়ে করতি না!?”
আমাদের বিয়ের দিন ও বিষ খায়, কেন জানতাম না!
আজ জানলাম, ও বিষ খায়নি! ওকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিলো! ওর নিজের ভাই ওকে বিষ খাইয়েছিলো!
আজ কিশোর ছুটি নিয়েছে বিবাহবার্ষিকীর জন্যে৷ সকালবেলা স্নান সেরে লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরেছি। দুজনা মিলে সারাদিন খুব ঘু্রেছি, বাইরে খেয়েছি, অনেক বেশি ভালো সময় কাটিয়েছি!
রাতে চাঁদ দেখবো বলে ছাদে গেছি। দুজন মিলে চাঁদ দেখতে দেখতে কিশোর কে জিজ্ঞেস করলাম, “কিশোর এখন যদি আমি ছাদ থেকে ঝাপ দিই কি হবে!?”
এরকম কথা আর কখনো মুখে আনবে না! তুমি ঝাপ দিবে কেন? আমি থাকতে তোমাকে ঝাপ দিতে দিবো নাহহ!
আমি বললাম আচ্ছা, তাহলে তুমি ঝাপ দাও!
ও এবার চমকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল “এসব কি বলছ কাজল!?”
মুচকি হেসে বললাম, “আমি সবটা জেনে গেছি। যে একটা মেয়েকে পাওয়ার জন্যে নিজের ভাইকে খুন করতে পারে, তাকে আমি ভালবাসতে পারবো না! আর যে কি না আমার ভালবাসার মানুষ কে হত্যা করেছে, তাকে জীবিত দেখে নিজে জীবিত থাকতে পারবো না! এবার বলো তুমি ঝাপ দিবে না আমি দিবো!?”
কথা শেষ হতেই পাঁচতলার ছাদ থেকে নিচে একজন মানুষ পরার শব্দ পেলাম৷
নিঃশব্দে নিচে নেমে এসে শাখা জোড়া খুলে ঝড়নার নিচে দাঁড়ালাম৷
সিঁদুর মুছতে হবেনা, ও এমনিতেই গড়িয়ে পরছে৷
০ Comments