Writer: Jannatul Ferdous Rabina
………………………….
জান্নাত পরিবারের বড় মেয়। সকলের বড্ড আদরের মেয়। জান্নাত তার নানার বাড়ি এবং দাদার বাড়ির সকল খালাতো, মামাতো চাচাতো ভাই বোনদের মধ্যে বড়। মেয়েটির পরিবার নিম্ন বিত্তবান। তবে তার মা বাবার খুব আদরের সন্তান। তাই তার কোন চাওয়াকে অপূর্ণ রাখে না। শত কষ্ট হলেও পরিবার তার চাওয়াটাকে পুরন করে হয় একদিন আগে আর পরে। জান্নাত এবার ক্লাস টেন-এ পড়ে। দিন দিন যেন তার চাওয়াটা বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু সে এটা চিন্তা করে না যে, তারা গরিব। এতো চাওয়া কিভাবে পুরন করবে তার বাবা মা? তার একটি চোট বোন আছে। জান্নাতের বাবা মা দুজনেই কাজ করে। মেয়েদের লেখা পড়ায় যেন কোন ত্রূটি না হয় সেই চেষ্টাই প্রতিনিয়ত তার পরিবার করছে। এভাবেই অনেক দিন চলে গেলো। জান্নাত আল্লাহর রহমতে এসএসসি পাশ করল। এবার কলেজে ভর্তি হওয়ার পালা। কিন্তু জান্নাত দিন দিন কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। অনেক আবদার সে তার বাবা মার কাছে করছে কিন্তু তা দেওয়ার সামাথ্য হয় না বলে, মার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। মা খুব কান্না করে তার ব্যবহারে। মা বলে,” দেখ জান্নাত তুই এখন ছোট নস। তুই সব বুঝস। তোর বাবা কতো কষ্ট করে তোর জন্য তুই তো সব দেখছিস। কি করে সংসার চালাই সেটা কি কখনো তোদের বুঝতে দেই বল? ” মেয়েটি কোন কথা শোনার পাত্র নয়। সে তার মন মতোই চলবে। একদিন মেয়েটি তার বাবার কাছে ল্যাপটপ চেয়ে বসলো। বাবা বলল, “দেখ মা আমরা গরিব। গরিবের এতো আশা করা ভালো নয়।” এই কথা শুনে মেয়টি বলে, ” বাবা আমার সব ফ্রেন্ডরা ল্যাপটপ ব্যাবহার করে, দামি ফোন চালায় কিন্তু আমার তো একটা ফোনও নেই” এক কথা দুই কথায় জান্নাত খুব রাগ করে, চিল্লাচিল্লি করে তাই তার বাবা মেয়টিকে একটা থাপ্পর মারে। মেয়টিকে মেরে যেন বাবা নিজেই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। জান্নাত কান্না করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। জান্নাত কান্না করতে করতে এক নদীর ধারে গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর সে খেয়াল করলো কে যেন নদীর পাড়ে বড় গাছটার নিচে বসে কথা বলছে। চুপ করে জান্নাত তাদের আড়ালে গিয়ে দেখতে লাগলো। জান্নাত দেখলো, একটি মেয় এবং তার মা কান্না করতে করতে অনেক কথা বলছে। জান্নাত তাদের পাশে গিয়ে জিজ্ঞাস করলো সেই মেয়টিকে কি হয়েছে তোমার?
মেয়ঃ কিছু না। (আরো অনেক কান্না করছে)
জান্নাতঃ তাহলে এমন ভাবে কাঁদছ কেনো? আর এই মহিলাটা কে?
মেয়েঃ উনি আমার মা। আমরা খুব গরিব। আমাদের পরিবার টা ছিলো খুবি ছোট।
কিন্তু আমার অসিম চাহিদার জন্য বাবা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। বাবা আমাদের খুব ভালোবাসতো। আমার চাহিদা পুরন না করতে পেরে সে তার জীবন দিয়ে দিয়েছে।
মেয়েটির এমন কথা শুনে জান্নাতের চোখেও পানি এসে পরলো। তারপর জান্নাত সেখানে অনেক্ষণ বসে থেকে বাড়ি ফিরল।
বাড়ি ফিরেই দেখে বাবা নেই। মাকে জিজ্ঞাস করলো “মা বাবা কোথায়?
মাঃ তুই কোথায় গিয়েছিলি? তোকে খোঁজার জন্যি তো তোর বাবা না খেয়ে তোকে খুঁজতে বের হলো।
জান্নাতঃ (চোখে পানি টলমল করছে)
এর মধ্যেই বাবা বাসায় এসে হাজির। আর দেখল জান্নাত ওর মায়ের পাশে দাড়িয়ে আছে। এক দৌড় দিয়ে মেয়েকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো বাবা।
বাবাঃ কোথায় গিয়েছিলি? জানিস তোর জন্য আমি কতো চিন্তায় ছিলাম? ওই দেখ তোর জন্য আমি ল্যাপটপ কিনে এনেছি।
জান্নাতঃ (কোন কথা না বলেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল)
বাবাঃ এই পাগল মেয়ে কি হয়েছে তোর?
জান্নাতঃ বাবা, আমি কিচ্ছু চাই না। আমি শুধু চাই তুমি যেন, সারা জীবন আমাদের পাশে ছায়া হয়ে থাকো। বাবা তুমি আমাদের ছেড়ে কখনো যেও না। আমার ল্যাপটপ লাগবে না। তুমি যেমন আয় করবে এখন থেকেই তেমন চাহিদাই আমরা করবো।
বাবাঃ (চোখে পানি নিয়ে) তুই তো আমার আদর দেশের রাজকুমারী। তোর জন্য আমি সব করতে পারি।
ঠিক এই ভাবেই প্রত্যেকটা বাবা মার মধ্যে চিন্তা কাজ করে তার সন্তান্দের জন্য। প্রত্যেক বাবা মাই চায় তার সন্তান যেন সুখে থাকে।
০ Comments