লেখকঃ-
এইচ. আর. মোঃ মহিন উদ্দিন!
……………………..
পাড়ার ছেলে জিহান। দশটা ভালো ছেলে বাছাই করলে তাকে পাওয়া যাবে এমনই তার স্বভাব। বড়দের শ্রদ্ধা, ছোটদের স্নেহ আর পরিবার কে আগলে রাখাই তার ধর্ম হয়ে উঠেছিল। পরিবারে ছোট কিন্তু একমাত্র পুত্র সে। দুই বোন ছিল বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগে। পড়াশুনা করে জিহান। সখ ছিল ফুটবল খেলা। আর বলতে গেলে সব খেলাই যেন তার ছিল হাতের মোয়া। কিন্তু তার ফ্যামিলি চায় না সে খেলুক। তার ফ্যামিলি চায় সে পড়াশুনা করে চাকরি করবে। কিন্তু তার মা-বাবা দুজনেরই বয়স হচ্ছে! তারা পারছে না আর পড়াশুনার খরচ দিতে! বাবা যা রোজগার করে তাতে তাদের সংসার টাই চলে কোনো মতে কিন্তু আর পড়াশুনার খরচ নয়। জিহান ছিলো মা বাবার পাগলা ভক্ত। নিরবে কাঁদতো বলতে পারতো না নিজের মনের ও তাদের দুঃখের কথা। এক সময় জিহানকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তার বোনের বাড়িতে পড়াশুনা করতে। সেখানে জিহানের পড়াশুনা তো হচ্ছিলই না বরং খারাপ হচ্ছিলো.. আর প্রতিনিয়ত অপমানিত হচ্ছিলো সে আর তার বোন। বোন অপমানিত হওয়ার পর..
বোনঃ বেচে আছিস কেন.? মরতে পারিস না। যা মর গিয়ে. (ভাত দেওয়ার সময় কথা গুলো বলছিলো..)
জিহানের চোখ লাল হয়ে গেছে.. চোখে ঝাপসা দেখছিলো.. ভাত নামছিলো না গলা দিয়ে..!
আর মনে মনে বলছিলো: আপু তুমি ঠিকই বলছো..
কয়েক দিন পর,, কলেজের বেতন ফি,, এক্সাম ফি,, কোচিং ফি আসছে টাকা নাই তাই জিহান কলেজ না গিয়ে ইটের ভাটায় কাজ করে ২৫০০ টাকা পেলো এবং তা দিয়ে কালেজের খরচ দিলো। ১০০০টাকা ছিলো তা মা বাবাকে পাঠিয়ে দিলো দুলাভাইয়ের হাত দিয়ে..। মা-বাবা জানে জামাই পাঠাইছে। এবং জামাই নিজে জানিয়েছে জিহান টাকা চুরি করেছিলো এবং সেই টাকাই আমাকে দিয়ে আপনাদের কাছে পাঠাইছে! এভাবেই চলতে থাকে দিন জিহান আগে নিরবে কাঁদতো কিন্তু এখন প্রকাশ্যে কাঁদে কিন্তু মা বাবা বুঝতো না। জিহান লুকিয়ে লুকিয়ে ইটের বাটায় কাজ করতে করতে এক সময় তার ব্লাড-ক্যান্সার হয়ে যায়! কেউ জানতো না কি হয়েছে তার। জিহান সবার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতো। একাই চলতো কাউকে বলতো না। একদিন কাজ করতে করতে মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত পরতে লাগলো জিহানের। নিজের অজান্তেই দেখা মাত্র অজ্ঞান হয়ে গেলো জিহান!
আর এভাবেই চলতে লাগলো দিন। দিন যত যাচ্ছে জিহান তত দুর্বল হয়ে পরছে। কিন্তু বিষয় টা কারো চোখে পরেনি।
কয়েক মাস পর
একদিন রাতে জিহানের খুব কষ্ট হচ্ছিলো নিঃশ্বাস নিতে ও নড়াচড়া করতে! জিহান বুঝে গিয়েছিল এটা তার অন্তিম সময় তাই সে তার বাবা মার কাছে একটা চিঠি লিখে পকেটে রেখে দেয়। তার একদিন পর জিহান মারা যায়!
তারপর জিহানের সেই পকেটে তার ছোট বোন চিঠি টা পেলো এবং তার মধ্যে লিখা ছিলো..
মৃত্যু আমার পাওনা ছিল।
তাই আমি স্বেছায় মৃত্যু গ্রহন করলাম!!
তোমাদের অনেক কিছু দেওয়ার ছিল.. অনেক কিছু নিয়ে আশা ছিল,, দিতে পারিনি!!
দেওয়া যেতো যদি আমার প্রতি একটু বিশ্বাস রাখতে।
আমাকে ভুলে যেও। এখন পর্যন্ত তো কিছু করতে পারিনি। সব সময়ই কষ্ট দিয়েছি। মনে করো তোমাদের ছেলে সন্তান ছিলই না।
শুনেছি আল্লাহর কাছে অনেক চেয়েছো একটি পুত্র সন্তানের জন্য। হয়তো ঐ দিন না চাইলে আজ এই দিনটা আসতো না।
আমাকে নিয়ে তোমাদের খুব টেনশন তাই না? আর এখন টেনশন টাই আর পৃথিবীতে রইলো না।
এবার বুঝো তোমাদের যাতে টেনশন করতে না হয় তার জন্য আমি কতটা মরিয়া ছিলাম!! আমি এখন চোখে কিছু দেখছি না, সব কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে তাই আর কিছু লিখলাম না…
তোমরা ভালো থেকো।
আমি ভালোই থাকবো। একটু কষ্ট পাবো কিন্তু তোমরা এখানে ভালো থাকবে এটাতেই আমি সুখি হবো!!
জিহান চেয়েছিল একটু আদোর একটু ভালোবাসা আর ক্যায়ারনেস! কিন্তু হতভাগা আর তা পেলো না। আর প্রতিবেশির কাছে পরে সব জানতে পারলো জিহানের হতভাগ্যবান মা-বাবা!!
অনেক গুন আছে আপনার লিখায়,চোখে পানি চলে আসলো। শৈল্পিক গুন ফুটে উঠেছে আপনার লিখায়। দোয়া রইলো আপনার প্রতি।