কবিতা: “একটি গল্পের আসর”
লেখা: আখলাকুর রহমান
(১)
বেশ করে ভাব ধরে বসলাম দাদুর পাশে,
মস্ত ভালো গল্প কহে, মোদের ধরা আশে।
নড়েচড়ে বসলেন তিনি, হাঁক ছাড়লেন ঘরে,
“কইগো গিন্নি, চা দাও জলদি। মুড়ি দিও ওদের তরে”।
দিদার বাণী ভেসে এলো মোদের কর্ণগর্ভে,
“এলাম বলে” ধ্বনিতে খুশি ছোট্ট আসর মর্মে।
গোটা দশেক পিচ্চি মোরা, বায়না করে সেরা পাজি,
ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি! দাদু বলবে গল্প, হয়েছে আজ রাজি।
(২)
চা হাতে দিদা হাজির সঙ্গী বেতের ধামায় মুড়ি,
কুপির আলোয় চকচকিয়ে সোনালি রঙের চুড়ি।
মুড়ি মুঠিয়ে ছোট্ট পুটু বলল নীরব সুরে,
“দাদু, গপ্প বলো গপ্প”।
তোতলামিতে হয়ে উঠল আসরময় রম্য।
চায়ের কাপে ছল্যাৎ চুমুক, “শোনো তবে সবে”,
দাদু বললেন মিষ্টি হেসে তাকিয়ে মোদের পানে।
(৩)
দাদুর কণ্ঠে শুরু হলো শিক্ষায় ভরা গল্প,
দুষ্টুমি আর হাসাহাসি থাকবে তাতে অল্প।
“পুরোনকালে এক দেশেতে ছিল ছোট্ট একটা খুকি,
এই ধরাতে তার চেয়ে হবে না অন্য কেউ দুঃখী।
পথের ধারের ডাস্টবিনটা সকাল বেলার সাথী,
খুঁজে খুঁজে পেয়ে যেত খাবার কিছু বাসি।”
“কেন দাদু? রুটি-জেলীর স্বাদটা তার খারাপ লাগে বুঝি?”
গল্পের মাঝে বাঁধ আটলো মোদের বন্ধু টুশি।
“ওসব তার ব্যাপক চাওয়া, কিন্তু কে দেবে এই পাওয়া?
দেশ জুড়ে সবাই ব্যস্ত, আপন আপন স্বার্থের ধাওয়া।”
“তাই বলে কি বাসি খাদ্য খাওয়া হবে শোভা?”
আস্তে করে বলে উঠল মিষ্টি খুকি নোভা।
“বাসি খাবার রোগ ছড়াবে, বলেছে স্কুলের আপা”,
নোভার কথায় সায় জুটালো পুচকি মেয়ে সাফা।
“ঠিক বলেছ, বাসি খাদ্য অতি নিচ! খেলে রোগ হয়,
কিন্তু খুকির পেটে ক্ষুধা, না খেলে কি শরীর রয়!”
(৪)
পুটু বলল, তারপরেতে কী হলো বলো দাদু বলো,
গপ্প শুনতে বেশ লাগে, তুমি বলেই চলো।
“শোনো তবে, রাতের বেলা রেললাইনের কিনারা হতো ঘর,
এটাই তার প্রাণের জায়গা, যতই আসুক বৃষ্টি-ঝড়।”
“বাবা-মা কোথায় থাকে? কেউ কি নেই খুকির?”
প্রশ্ন জাগল মুখের কোণে পরিচিত রকির।
“ছোট্টকালে সব হারিয়ে এখন একা খুকি,
তাই তো বলি এই ধরাতে সেই সবচেয়ে দুঃখী।
এক রাতে খুকি ছিল গভীর ঘুমের দেশে,
রেল গাড়িতে লাইনচ্যুত! এল দানবের বেশে।
খুকির দেহ পিষে গেছে, নেই আর বেঁচে,
ডাস্টবিনটা এখনো দাড়িয়ে খুকির পথে চেয়ে।”
(৫)
চোখ দিয়ে জল ঝরে আসরে বসে সবার,
দাদুও চুপ! একটু থেমে বলতে শুরু আবার।
“খুকির মতো বহু শিশু মরছে আজও পিষে,
মরণ যাদের পরিণতি হয় অবশেষে।”
কান্নাস্বরে বলে সাফা, “ওদের কি বাঁচানোর কেউ নেই?”
“বাঁচালে বাঁচবে! যদি মোরা ওদের সন্তানতুল্য ঠাঁই দেয়।”
(৬)
আসর শেষে পণ করলাম সবাই হাতে হাত,
“ওদেরকে বাঁচাতে চাই, কাটাবে ওরা নিশ্চিন্তে রাত।
দিন শেষে মানুষ মানুষেরই হোক! এটাই কামনা,
জীবন গেলে ফিরবে না, বরং জীবন আনুক নিত্য মোহনা।
________
বাপরে..!
অসাধারণ লেখনী। শব্দের জাল বুনন দারুণ ছিল। প্রত্যেক লাইন এ যেনো খুঁজে পোয়েছি নতুনত্ব..! ভাল লাগলো খুব। শুভ কামনা রইলো
কবিতায় সুন্দর একটা সময় তুলে এনেছেন। যেটা আমার ছেলেবেলার স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দিয়েছে।
কবিতায় গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মিলে সন্ধ্যা বেলায় দাদুকে ঘিরে ধরে গল্প শোনার বায়না ধরার দৃশ্য ফুটে উঠেছে।
এই সময় টা এখন আর নাই। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে গ্রামের এই ঐতিহ্য।
একটা কথা আছে, ওল্ড ইজ গোল্ড। কবিতায় দাদু যে গল্পটা শোনা, তাতেই বুঝা যাচ্ছে ওল্ড রা গোল্ড। দাদুর গল্পটা হার্টটাচিং এবং বাস্তব। এখানেও একটা দায়িত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আসলেই আমাদের সচেতনতা কাম্য। নইলে এমন হাজারো খুকি হারিয়ে যাবে আমাদের থেকে।
আমার মার্কিং অনুযায়ী ৭.৫+ পাবেন
দিন শেষে মানুষ মানুষেরই হোক! এটাই কামনা,
জীবন গেলে ফিরবে না, বরং জীবন আনুক নিত্য মোহনা।
সুন্দর কথামালা।ভালো লেগেছে কবিতাটি।শুভকামনা
অসাধারণ লিখেছেন।
মনোমুগ্ধকর লেখা।শব্দচয়নেও খুব সুন্দর।
বেশ বড় কবিতা।
ছোট্ট বেলায় আমরাও দাদুকে নিয়ে আসর বসাতাম।
গল্প গুজব করতাম।
খুবই ভালো লাগতো।মজার মজার রাক্ষসের,বনের গল্প বলতো।সেই দিনগুলো মিস করি।
কবিতায় তা ফুটে উঠেছে।
শুভ কামনা রইলো।
কবিতাটা পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। তবে আপসোস আমার দাদু কখনো গল্প শোনাননি। শুধু নানী শুনিয়েছেন।এখন সেইদিনগুলো মিস করছি। ছন্দের অনেক মিল ছিল। বানান একটা ভুল চোখে পড়েছে
দাড়িয়ে-দাঁড়িয়ে
সব মিলিয়ে বলা যাই ভালোই ছিল কবিতাটা , শুভ কামনা রইল।
গল্পের ছলে বাস্তবতা।
দারুণ কবিতা
আসসালামু আলাইকুম। কবিতাটা বেশ ভালো ছিল। কবিতার মাধ্যমে বাস্তবতা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাটা দারুণ ছিল। আগামীর জন্য রইলো অনেক অনেক শুভ কামনা।
চমৎকার। পরিধিও যেমন পর্যাপ্ত, তেমনি শব্দবুননও মারাত্নক। বিজয়ী হবেন বলে আশা করা যায়। কবিতাটা পড়ে আমি অভিভূত।