ভূমিকা: ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রচুর শখ আমার। কিন্তু আম্মুর জন্য সেরকমভাবে বই পড়তে পারি না। সব ধরনের বই পড়া যাবে না, আম্মুর কড়া নিষেধাজ্ঞা । তাই অধিকাংশ গল্পের বই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে হয়। বেশ কয়েকদিন যাবত “ক্যানভাসের গল্প” বইটির প্রিভিউ পড়তে পড়তে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম কবে বইটা পড়তে পারব। তখন শেষ বিকেল, আমি রসায়ন বইটার ভিতর গল্পের বইটা ঢুকিয়ে ছাদে গেলাম । কখন যে মাগরিবের আযান হয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে টেরই পাইনি। আম্মুর কণ্ঠ শুনে ঘোর ভাঙ্গল আমার।
– নামাজের খবর নাই, ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে আর তুই…. দেখি দেখি এটা কী পড়ছিস?
– কই আম্মু আমি তো র র রসায়ন পড়েছি।
আম্মু ছো মেরে আমার হাত থেকে বইটা নিয়ে রুমে চলে গেল। আমি তো ভয়ে শেষ! আজ আর রক্ষা নাই।
নামায পড়ে ভালো মেয়ের মতো পড়তে বসে গেলাম। কিন্তু পড়ায় মন বসছে না। যে কয়টা গল্প পড়েছি তা আমার ভিতরটা নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। বাকিগুলো পড়ার জন্য মন ছটফট করছিল। কিছুক্ষণ পর বইটা হাতে করে আম্মু আসলো।
-মাশাআল্লাহ, এই বইটা তো খুব সুন্দর! একটা গল্প পড়লাম, খুব ভালো লাগল। এই রকম বই পড়লে তরুণ ছেলেমেয়েদের সুস্থ মানসিকতা সৃষ্টি হয়। এই বই লুকিয়ে পড়া লাগবে না। নে পড়ে আমাকে দিস, আমিও পড়ব।
আম্মুর হাত থেকে বইটা নিয়ে আবার পড়া শুরু করলাম। এক নিমিষেই যেন গল্পগুলো পড়া শেষ হয়ে গেল!
বইটা পড়ে আমার ভিতরে একধরণের শিহরন বয়ে গেল। জীবনে অনেক বই পড়েছি কিন্তু এরকম বই কমই পড়েছি। প্রতিটি গল্পে একেককটা শিক্ষা এমনভাবে দেয়া হয়েছে, চাইলে এর থেকে অনেক কিছুই শেখা যাবে। আমি নিজের কথাই বলছি , পর্দা সম্পর্কে আমি কিছুটা উদাসীনই ছিলাম বলতে গেলে । “মোহসিনা বেগম” Mohasina Begumএর “আক্ষেপ ” গল্পটা পড়ার পর আমার ভিতরে এক ধরণের পরিবর্তন এসে গেলো। আমি প্রতিক্ষা করলাম , পর্দা করব মন থেকে , লোক দেখানোর জন্য নয়।
রিভিউ:
বইয়ের নাম: ‘ক্যানভাসের গল্প’
প্রকাশনী : আওয়ার ক্যানভাস প্রকাশনী
সম্পাদক: আওয়ার ক্যানভাস সম্পাদনা গ্রুপ
প্রচ্ছদ : আবু তাহের
প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর, ২০১৮খ্রি.
ক্যাটাগরি: শিক্ষণীয় গল্পের যৌথ সংকলন।
মুদ্রিত মূল্য: ১৬০ টাকা মাত্র।
বিক্রয় মূল্য: ১২০টাকা মাত্র(২৫% ছাড়ে)।
পৃষ্ঠাসংখ্যা :৮০
ব্যাক্তিগত রেটিং :৯/১০
লেখক সংখ্যা: ২০জন।
বইয়ের প্রতিটি গল্পই এত ভালো লেগেছে লিখে শেষ করা যাবে না।
এতগুলি গল্প নিয়ে বললে অনেক লেখা হয়ে যাবে তাই খুবই সংক্ষেপে কয়েকটা গল্প নিয়ে একটু বলছি।
“স্ত্রীর কথা শুনে রফিকুল ইসলামেরও চোখ ভিজে ওঠে। ধরা গলায় তিনি বলেন, ‘বড্ড ভুল করে ফেলেছি এক মরীচিকা ধারণা নিয়ে। আমার মেজো জামাইটা বিচক্ষণ। সে ভুল করেনি”। কী এমন ভুল করেছিলেন রফিকুল ইসলাম, যা শেষ বয়সে তাকে অনুতপ্ত করছে? আর সেই ভুলটা বুঝলেন কীভাবে ? জানতে হলে পড়ুন “আয়েশা সিদ্দীকার ” লেখা গল্প “ভ্রান্তিবিনাশ”
,
“জিনিয়া আর দেরি না করে নিহানের রুম থেকে বের হয়ে গেছে। কেমন যেন দম আটকে আসছে জিনিয়ার” । জিনিয়া কোথায় গিয়েছিল? নিহান কে? আর নিহানের রুমে তার দম আটকে আসছিল কেন? জানতে হলে “উম্মে কূলসুম সূবর্ণা ” এর গল্প “জিপিএ ৫ ” পড়তে হবে আপনাকে।
,
‘আমার এই কাজ আমার ভাই ভাবিদের পছন্দ হলো না। আর তাই অল্প দিনেই আমি আর মা তাদের চোখের বিষ হয়ে গেলাম’ ।বেলাল কী এমন কাজ করেছিল যা ওদের পছন্দ হলো না? জানতে হলে “অনন্যা অনু” অনন্যা অনুএর লেখা গল্প “কর্মফল” পড়তে হবে।
,
“নিজেকে সবার কাছে স্মৃতি বানিয়ে আমি আমার জীবন শেষ করে দেবো। শেষবারের মতো চোখ বন্ধ করে নদীর পানিতে নিজেকে এক ধাক্কায় ফেলে দিলাম। কোনো চিৎকার নেই, শুধু পানিতে পড়ার সময় একটা শব্দ হলো, ‘ধপাস!” এরপর? এরপর কী হলো? আসলেই কি মরে গেল ছেলেটি? জানতে হলে পড়ুন “রেজওয়ানুল হক” এর লেখা গল্প “জীবন”
,
“‘তোর দাদাভাইকে একটা ফোন দে তো।’
অামি বেঁকে বসলাম। কিছুতেই ফোন দিব না বলে মনস্থ করলাম। মা অবাক হয়ে অামার কাছে বসে অামার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো,
‘কেন দিবি না বাবা?’ ” ছেলেটি কেন ভাইকে ফোন দিতে চায় না? কীসের ভয়ে? জানতে হলে পড়ুন “তানজিনা তানিয়া” Tanjina Taniaএর লেখা গল্প “জননী”
“সন্ধ্যাবেলা সে মাটির গায়ে কান পাতে। নতুন শার্ট বিছিয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে থাকে। মনার দু’চোখ ছাপিয়ে জল আসে”। মনা কে? সে কেন মাটির গায়ে কান পাতে? জানতে হলে পড়ুন
‘ পূলক মণ্ডল’ এর লেখা গল্প “শেষ বিকেলের আলো”
“দুইটা লাশ রেখে আছিয়া হাঁটছে। তার কান্না পাচ্ছে না, একদমই কাঁদছে না সে। তার আগে আগে তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে রহমত আর টুনি” আছিয়া কোথায় যাচ্ছে? কেনইবা যাচ্ছে? জানতে হলে “তাসনিম ইসলাম”Tasnim Islam এর গল্প ‘অপ্রাপ্তির সমাপ্তি’ পড়তে হবে।
,
মাত্র দু’ঘণ্টা আগেই মারা গেছে জামাল। র্যাবের ক্রসফায়ারে পড়ে ‘ফিনিশ’ সে। ভাগ্য ভালো ছিলো আমার, সময়মতো দৌঁড়ে পালিয়ে আমি বেঁচে গেছি।
জামালের লাশটা নিতে র্যাবের অফিসে আমি যাবো না। আমি জানি, কাল পেপারে নিউজ হবে জামালের রক্তমাখা লাশটা”। জামালকে কেন মরতে হলো? আর বন্ধু হয়েও বন্ধুর লাশ আনতে কেন যাবে না সে? জানতে হলে পড়ুন ‘নাফিম উল আবিরের’ Nafim Ul Abirলেখা গল্প ” পূর্ণদৈর্ঘ্য ট্রেণ ভ্রমণ”
,
“ক্যাথেরিন জোর করে হাতদুটো নিজের কাছে টেনে নিলো। ছেলেটা শেষমেশ হাতদুটো স্থির করেছে। সোয়েটার টেনে সরাতেই ব্যান্ডেজে বাঁধা হাত দুটি দেখা গেল। দুটি হাতই কব্জি থেকে বিচ্ছিন্ন”। ডাঃ ক্যাথেরিন কেন ছেলেটির হাত দু’টো জোর করে দেখতে চাইল? ছেলেটির হাত দুটি কব্জি থেকে বিচ্ছিন্ন কেন? জানতে হলে পড়ুন ‘তাহসিন আহমেদের’ Tahsin Ahmedগল্প “টুয়েলভ ফিঙ্গার” !
,আরো আছে মাহমুদা তাহিরা Farha Nur , M Emon Islam সহ আরো অনেকের অসারণ সব গল্প।
শেষকথা: আমি মনে করি এই বইটি কারো জীবনে কিছুটা হলেও পজেটিভ পরিবর্তন আনতে সক্ষম। অভিভাবকদেরও উচিত বইটি তাদের সন্তানদের উপহার হিসাবে দেয়া। প্রকাশনীর প্রথম বই হিসেবে বইটি চমৎকার ছিল। শুধু কয়েকটা বানান ভুল চোখে পড়েছে। বাঁধাই আরো মজবুত করা যেত।
,
অসাধারণ সব গল্পের সমন্বয়ে সাজানো এই বইটি পেতে পেজের ইনবক্সে যোগাযোগ করুন অথবা ফোন করুন 01783027911 এবং 01917824211 ।
সবুজ ঘাসে শিশির হাসে
'সবুজ ঘাসে শিশির হাসে' সবুজ- সতেজতা ও স্ফূর্তির প্রতীক। এই সবুজের অবিরাম ছড়াছড়ি ছড়াকার আনিস আরমানের ' সবুজ ঘাসে শিশির হাসে' শিরোনামের ছড়ার বইয়ের পরতে পরতে। নদীর কূলে, দিঘির পাড়ে, ফড়িংছানায়, সারি সারি গাছপালাতে, মায়ের শাড়ির আঁচলে কিম্বা জাতীয় পতাকার সবুজ দেখে ছড়াকার...
০ Comments