রাকিব
খাগড়াছড়ি , চট্টগ্রাম।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ।
আজ কয়েক মাস ধরে পত্র পত্রিকা আর নিউজ চ্যানেলে যে খবর টি প্রচার হচ্ছে তা হল, মায়ানমারের রোহিঙ্গা ।
সেদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাজার থেকে আসছি। চেঙ্গি স্কোয়ার আসার সময় হঠাৎ করে একটা বাচ্চা ছেলে আামার পথ আটকে দাঁড়াল, চেহারা আর গায়ের পোশাক ছিল নোংরা। আমি ভেবেছিলাম হয়ত আমার কাছ থেকে টাকা চাইবে তাই পকেট থেকে টাকা বের করছিলাম। কিন্তু তারপর যা দেখলাম আার যা শুনলাম তাতে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এল।
ছেলেটা ওর পকেট থেকে ভাজ করা একটা দশ টাকার নোট বের করে আমার দিকে হাত বারিয়ে বলল, ভাইয়া আপনি আমার দশ টাকা নিয়ে নেন।
আমি বললাম কেন?
ও বলল, ভাই আমি এই দশ টাকা দিয়া রোহিঙ্গাদের সাহায্য করমু । জানি দশ টাকা দিয়া ওগো কিছু ওইবোনা। কি করমু আমি ছোট্ট মানুষ, গাড়ি ধুইয়া এই দশ টাকা পায়ছি ।
আমি ওকে বললাম, তুমি আমাকে কেন টাকা দিচ্ছ , তুমি কি আমাকে চিন ?
ছেলেটা বলল, হ ভাই আমি আপনেরে চিনি, আপনে অনেক ভালা ।
আমি বললাম কিভাবে চিন আমাকে?
ছেলেটা বলল, আপনি একদিন কলেজের সামনে আমার ছোট বোনেরে খাবার জন্য বিশ টাকা দিছিলেন । তারপর থাইক্কা আমি আপনাকে চিনি ।
তারপর আমি ছেলেটার নাম আর তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলাম?
ছেলেটা বলল, কালু।
আমি বললাম তোমার বাসায় কে কে আছে? ও বলতে লাগল, আব্বা, মা, ছোট এক বোন আর বুড়া দাদি।
আমি জিজ্ঞাস করলাম তোমার বাবা কি করে?
আমার আব্বায় কটকটি ( পুরোন ভাঙ্গা চুরা জিনিস ফেরি করা) বেঁচে । মায় মাইনষের বাড়িতে কাজ করে আর দাদি অসুস্থ।
আব্বায় রোহিঙ্গাদের ১০০ টাকা দিছে। মায়ে ১০০ টাকা জমাইছে আরও ৫০ টাকা হইলে রোহিংগাদের দিব। আর আমারে কইছে টাকা জমাইতে। আপনে ভালা মানুষ হের লাইগা আপনেরে টাকাটা দিলাম ।
এমন সময় ওর ছোট বোনটা এল।
এসে বলতে লাগল ভাই হেই ভাইডা না যে আমারে ২০ টাকা দিছিল।
ছেলেটা বলল হ হেই ভাই।
আমি মেয়েটাকে আদর করে নাম জিজ্ঞাসা করলাম।
মেয়েটা বলল আয়েশা।
কিছু খেয়েছ?
মেয়েটা বলল হ কিন্তু ছেলেটা কিছু বলল না।
তারপর আমি ওদের দুজনকে একটা ছোট দোকানে নিয়ে কিছু খাওয়ালাম।
ছেলেটা বলল সকালে একজনে পরটা খাওয়াইছে দুপুরবেলা কিছু খাই নাই।
ওদেরকে খাওয়ানোর পর আর ২০ টাকা করে দুজনকে ৪০ টাকা দিয়ে আমি রুমে চলে আসি।
তারপর শুক্রবার মসজিদে গিয়ে আমার একশ টাকা সহ ওর ১০ টাকা রোহিঙ্গাদের দান বাক্সে ফেলে দিলাম। আর দোয়া করলাম হে আল্লাহ অসহায় রোহিঙ্গাদের তুমি হেফাজত কর আর গরিব আঃ করিমকে তুমি কবুল করে নাও।
০ Comments