শাহাদাত_আবিন
বিদ্যুৎ না থাকায় এই সন্ধ্যা রাত্রিতেই চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এসেছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাতিগুলো জ্বললেও গলিতে সে আলো পৌঁছায়নি । গলির মোড়ের শিল্পী স্টুডিওর পাশে একটা জটলা সৃষ্টি হয়েছে। একটা লাশকে কেন্দ্র করেই এই জটলার সৃষ্টি ,একজনকে খুন করা হয়েছে।
খবর শুনেই তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পুলিশ হাজির, লাশটা ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়ে দিয়ে, টাইপ রাইটারকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো । পুলিশ লাশের পরিচয় এবং খুনিদের সন্ধানে নামে ।
সোফাসেটে বসে টেলিভিশনে সংবাদ দেখছেন জামিল আহমেদ, তার পাশেই বসা তার স্ত্রী ।
—– জামিল আহমেদ , কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক । সবাই তাকে জামিল মাস্টার নামেই ডাকে । এলাকায় আদর্শ ও নীতির কারণে সবার সম্মানের পাত্র হিসেবে পরিচিত তিনি । স্ত্রী ও সন্তান জাহিদকে নিয়েই তার সংসার । ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে এখন মাধ্যমিক এ ভর্তি হয়েছে । পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী, ফলাফল ও ভালো। পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি আর প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী অবধি বরাবরই ক্লাসের ফার্স্ট বয় হিসেবেই নিজেকে দাপিয়ে রেখেছে । এবার মাধ্যমিকে ভর্তি হলো , মাধ্যমিকেও তার জ্ঞানের পরিধি সেই আগের মতই । জামিল মাস্টার ও ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ । ছেলেকে শিশু কাল থেকে এখন অবধি বিন্দুমাত্র শাসন করেননি , সবসময় ছেলের আবদার মেটাতে মরিয়া হয়ে উঠতেন । একমাত্র ছেলে বলে কথা । বছর পেরিয়ে বছর আসে আর আনন্দেই দিন কাটতে থাকে জামিল পরিবারের , কিন্তু হঠাৎ কোথায় যেনো ছন্দপতন ঘটলো ।
যখনই
—- দশম শ্রেণীর টেস্ট পরীক্ষায় ৫বিষয়ে অকৃতকার্য হলো জাহিদ , তখন যেনো জামিল মাস্টারের টনক ন নড়লো । যে কি না ক্লাসের ফার্স্ট বয় সে ৫ বিষয়ে ফেল! এ কি করে সম্ভব!! তাহলে কি, ছেলের প্রতি বেখেয়ালি থাকার কারণে এরকম অধঃপতন ? তার সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে জামিল মাস্টার শুনেন সব ঘটনা ।
জাহিদ এলাকার খারাপ কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া শুরু করে যখন সে ক্লাস নাইনে পড়ে তখন থেকেই । ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে উঠে । আস্তে আস্তে সে সিগারেটের প্রতি এতোটাই আক্রান্ত হয় যে, সিগারেট না হলে তার একদিন ও বাঁচা দায় মনে হয় । ক্রমশ নেশার প্রতি সে আকৃষ্ট হতে থাকে ,আর ধীরে ধীরে ক্লাসে ও পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যায় । নিত্যনতুন নেশায় মত্ত থাকাই যেনো এখন তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন যায় আর তার নেশার ধরন ও পাল্টাতে থাকে , সিগারেট,গাঁজা আর ইয়াবা তার নিত্যদিনের সঙ্গী । জামিল মাস্টার কথাগুলো শুনার পর তার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । তিনি বাড়ি এসে পড়েন , বুঝতে পারেন তার ছেলের গ্রুপ স্টাডির কারন । এতো দিন গ্রুপ স্টাডির কথা বলেই নেশায় মত্ত ছিলো তা তিনি বুঝতেই পারেননি । ছেলের প্রতি নিজের বেখেয়ালি থাকার কারণে নিজেকেই নিজে ধিক্কার দিচ্ছেন ।
-সন্ধ্যায় জাহিদ বাসায় আসলে জামিল মাস্টার তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেন , কিন্তু ছেলে তার অতি আদরে নষ্ট হওয়া একজন । যার মস্তিষ্কে নেশার বিচরণ তার মাথায় কি আর উপদেশ প্রবেশ করে? ছেলে এখন আর কাউকে পরোয়া করে না , একপর্যায়ে জামিল মাস্টার রেগে যান , তাকে গালাগাল দিতে থাকেন । ছেলেও রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে । পরে ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি ।
শীতের সকাল, ঠান্ডা আবহাওয়ায় গলায় মাফলার পেঁচিয়ে নন্দিতা পরিবহনে চড়ে ঢাকা আসে জাহিদ। তার বাবা যেনো তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, বাড়িতে থাকলে তার নেশার খোরাক হবে না তাই বাড়ি থেকে চলে আসে । বাস এসে ঢাকার একটি সিনেমা হলের সামনে থামলো । বাস থেকে নেমে পড়ে জাহিদ কিন্তু ঢাকা সে থাকবে কোথায়? ভাবতে থাকে , ভাবতেছে আর সিনেমা হলের গলির পথ ধরে হাঁটতেছে। হাঁটতে হাঁটতে সামনেই দেখতে পায় হোটেল বনলতা (আবাসিক) । রাতটা এখানেই কাটানোর বন্দোবস্ত করে সে।
হোটেল রুমে বসে নেইলকাটার দিয়ে নখ কাটতেছে জিহাদ । এমনি সময় হোটেল বয় রুমে ঢুকে তার সাথে কথাবার্তা বলে । কথাবার্তার মধ্যে তাদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া হয়ে যায়। কথায় আছে- ভালো মানুষ ভালোকে চিনে নেশাখোর চিনে নেশাখোরকে , তাদের ক্ষেত্রেও তাই। হোটেল বয়ের সাথে খুব সহজেই সখ্যতা হয়ে যায় তার । হোটেলে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় সে । এদিকে হোটেলে চাকরি করা অবস্থায় পরিচয় হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী রুকনের সাথে। এদিকে দিন যতো যেতে থাকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো মজবুত হতে থাকে । দুজনে একসাথে নেশা দ্রব্য বিক্রি করার পরিকল্পনা করে । ধীরে ধীরে নেশা আর খারাপ রাজ্যে বিচরণ বেশ ভালোই চলতে থাকে তার । হোটেল চাকরির পাশাপাশি নেশা দ্রব্য ও সাপ্লাই দিতে থাকে সে। ভালোই চলছে তার দিন , এদিকে ছেলের খোজের আশায় জামিল সাহেব দিশেহারা হয়ে উঠে । কিন্তু জাহিদ তো বদ্ধপরিকর , বাড়িতে সে আর ফিরে যাবে না।
নেশার ব্যবসা আর হোটেলের চাকরি বেশ রমরমা অবস্থা । কিছুদিন যেতে না যেতেই হঠাৎ রুকন ও জাহিদের ব্যবসার হিসেবে গড়মিল দেখা দেয় । দু’জনের মধ্যে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় । এ নিয়ে তাদের প্রায়ই ঝগড়া হয় । এই অবিশ্বাস থেকেই রুকন নিজেই একা ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু এক এলাকায় দু’জন ব্যবসা করলেও ব্যবসায় তেমন লাভ হবেনা। তাই সে জাহিদ কে খুন করার ফন্দি করে। এর জের ধরেই হোটেল বনলতা (আবাসিক) এর পাশেই জিহাদকে ডেকে আনে এবং ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় রুকন ও তার সঙ্গীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় জিহাদ । লাশ পড়ে থাকে শিল্পী স্টুডিওর মোড়ে, একজন দু’জন করে আস্তে আস্তে জটলার সৃষ্টি হয় । লোকে মুখে জানাজানি এক এক করে পুলিশের নিকট খবর পৌছায় । পুলিশ আসে , লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় । টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে হেডলাইন জুড়ে ভেসে উঠে
“মাদকব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে মাদকব্যবসায়ী খুন ”
সোফাসেটে বসে টেলিভিশনে সংবাদ দেখছেন জামিল মাস্টার ও তার স্ত্রী। পুলিশ যখন লাশের পরিচয় খুঁজে বের করতে পারছেন না তখন জিহাদের পকেট থেকে মোবাইল অনুসন্ধান করে বাবা সেভ করা নাম্বার দেখে তার বাবা জামিল মাস্টারকে কল করেন , খুন হওয়ার পুরো ঘটনা খুলে বলেন ।খবর শুনেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো জাহিদের মা । মাদকব্যবসায়ীর বাবা একজন আদর্শ শিক্ষক , এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি জামিল মাস্টার। তাই কান্নাভরা কন্ঠে পুলিশকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন- জাহিদ তার ছেলে না , তাকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করে দিতে পারে । পুলিশ কি করবে ভেবে না পেয়ে নিজেই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন , আটক হয় রুকন ও তার সঙ্গীরা।
টেলিভিশন বন্ধ করে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকেন জামিল মাস্টার । তিনি যেনো চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও কান্না করতে পারছেন না । তার স্ত্রীর কান্নার আওয়াজ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে , একসময় নিস্তেজ হয়ে একলা একা বসে বিড়বিড় করে বিলাপ করতে থাকে । চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরে পড়ে, ঝরে পড়া পাতার মতোই এভাবে সঙ্গদোষে ঝরে পড়ে হাজারো মেধাবী ছাত্র আর পাতাহীন শূন্য বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকে নেশার কবলে সন্তান হারানো মা-বাবারা ।
জাহিদ এবং জিহাদ, নামের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিলো।
ঝরা নয়, শব্দটা ঝড়া হবে।
গল্পটা অনেক ভালো লেগেছে।
শিক্ষামূলক এই গল্পের প্রথম ভূলের সূচনা করেন জাহিদের বাবা স্বয়ং।
ছেলের প্রতি উদাসীন না হলে আজ হয়তো তাকে এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হতে হতোনা।
বয়ঃসন্ধিকালের এই সময়টাতে প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত নিজের সন্তানদের সময় দেয়া।
নেশা – মাদকের ভয়াবহ পরিণাম লেখক খুব সুন্দর ভাবে গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন।
শুভকামনা রইলো।
আপু আসলে এটা জাহিদ হবে। ভুল টাইপিং এর কারণে জিহাদ হয়ে গেছে ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
আপু এটা আসলে জাহিদ হবে । জাহিদকে ভুল করে জিহাদ লেখা হয়েছে । সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
অনেক সুন্দর একটি গল্প। অনেক কিছু শিখার আছে আমাদের এই গল্প থেকে। চালিয়ে যাও শুভ কামনা রইল।
বর্তমান সমাজের কঠিন বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।বিষয় নিধারণ চমৎকার।বানানের দিক থেকে কোনো ভুল আমার অত্যন্ত চোখে পড়েনি।ভালো লেগেছে আমার।এভাবেই লিখে যান♥
ধন্যবাদ ভাই,,, ভালোবাসা রইলো
বাবা মায়ের উদাসীনতার ফলে সমাজের এমন অনেক সন্তান অকালে ঝরে পড়ে। বেশ সুন্দর একটা গল্প। কিছু ভুল অাছে গল্পের মধ্যে দেখে নিবেন।
টনক ন নড়লো – ন বাড়তি অাছে
সিগারেটের প্রতি এতোটাই অাক্রান্ত – সিগারেটের প্রতি এতটাই অাসক্ত
একদিন ও- একদিনও
ধরন ও – ধরনও
হোটেল চাকরির- হোটেলে চাকরির
খোজের- খোঁজের
পৌছায়- পৌঁছায়
ধন্যবাদ আপু ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য । আগামীতে আশা করি শুধরে নিবো
বাস্তবছবি অনেকটা প্রকাশ পেয়েছে, শিক্ষার ভাব বেশ সুন্দর, অনেক শুভকামনা রইল।
নেশা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। নিজের সন্তান যাতে খারাপ কাজে লিপ্ত না হয় তাই বাবা-মায়ের উচিৎ তাদের সন্তানের সবসময় খোঁজ-খবর রাখা। শিক্ষণীয় গল্প ছিল।
বানান ভুলগুলো আগের কমেন্টগুলোতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমি একটা ভুল শব্দের প্রয়োগ ধরিয়ে দেই।
‘টাইপ রাইটারকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।’
— টাইপ রাইটার একটা যন্ত্রের নাম। আপনার উক্ত বাক্যে ‘টাইপ রাইটার’ এর জায়গায়’ টাইপিস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।
এক্ষেত্রে গল্পের শুরুটা ভালো হলেও শেষটা তেমন জমেনি, আর শেখার মত কিছু জিনিস ছিল যেটা ভালো লেগেছে