কবি: আয়েশা সিদ্দিকা
আমার হৃদয়ে যে নদীটা বয়ে যাচ্ছে তাতে কারা যেন পাহাড়া বসিয়ে রেখেছিল,
আমি যেতে পারতাম না সেথায় তেমন।
খুব খরার সময় কোথা থেকে কারা যেন আসতো আজলা ভরা ভালোবাসার জল নিয়ে,
দুহাত ভরে তারা তা এনে মিশিয়ে দিতো আমার নিরবে বয়ে চলা নদীটির বুকে।
খুশি হতাম আমি শান্তি পেয়ে দুদণ্ড।
এমন করে দীর্ঘ একুশটি বসন্ত চলে যায়,
কত রঙ বেরঙের ভালোবাসার স্রোতধারা বয়ে চলেছে আমার নদীটির শরীর বেয়ে,
কী ভেবে আমি এবার খুব করে অনুমতি চাই সেই বয়ে চলা জল একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য,
বহু কষ্টে ফরমান জোগাড় হয়েছিল নিজস্ব স্রোতস্বিনীর কূল ঘেষে দু কদম হেঁটে যাবার।
কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পরে এ কী দেখলাম!
স্বচ্ছ পানির বদলে সেথায় এত রক্তিম বর্ণ কেন ভাসছে?
পাড়গুলো এমন ক্ষত বিক্ষত কেন?
কী হয়েছে আমার নদীটার?
প্রহরীদের গলা চেপে ধরি আমি।
‘কীভাবে হলো এগুলো? কীভাবে?
এত নির্মল নদীটার এমন হাল তোমরা কীভাবে করলে?’
তারা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো।
দূর থেকে ভেসে আসছিল শুধু তাদের হাসির শব্দ যারা আজলা ভরে ভালোবাসার নামে দিয়ে গেছে বিষাক্ত গরল!
আমি পাগলিনীর মতো ছুটলাম সেদিকে।
‘কেন? কোন অপরাধে আমার নিষ্পাপ নদীটার এমন নিষ্ঠুর শাস্তি দিলে তোমরা? বলো?
কেন এত বড় ধোকা? আমি তো কখনও চাইনি কিছু তোমাদের থেকে?’
কেঁদে, ভেঙে গুড়িয়ে পড়লাম তাদের সামনে।
‘এটাই আমাদের স্বভাব’ বলে বিজয়ী হাসি হাসতে হাসতে মিলিয়ে গেল তারা।
আমি পড়ে রইলাম ধু ধু মরুভূমির মতো একলা প্রান্তরে।
ঘোর অন্ধকার নামলো চারপাশে,
দমবন্ধ করার মতো আমি কেঁদেই চলছি,
কে বাঁচাবে আমায় এই অমানিশা থেকে?
আছে কি কেউ? কেউ কি নেই? আমার নদীটা বিশুদ্ধ করে দেবে যে?
মানুষগুলোর চলে যাওয়া পথের দিকে চেয়ে আছি।
কেন আসলো তারা? কেনই বা চলে গেল! আর কি কেউ ফিরবে না?
যে একটু প্রশান্তি দেবে?
সপ্তর্ষিমণ্ডলের
হঠাৎ আসমানে আলোর রেখা ভেসে উঠলো,
চাঁদের বুড়িটা আমায় মুখ ভেংচে গালি দিয়ে বলল, ‘বেহায়া! বারবার পথ ভুলিস!’
তখনই মনে পড়ে গেল আমার রবের ওয়াদা!
কেবলমাত্র তার ইবাদতেই তো হৃদয় নামক নদী প্রশান্ত হয়!
কেন আরোগ্য হতে মানবের ভালোবাসা নামক ভ্রমের পিছে মরছি মিছে?
আমি বিড়বিড় করে বললাম, ‘ইয়া রাহমানু!’
অদ্ভুত এক কষ্ট হলো ভেতরে,
হৃদয় নদীর কিছু জল গড়িয়ে পড়লো নয়নে অশ্রুরূপে!
এরপর চেয়ে দেখি এক নূরের রশ্মি, ঠিক নদীর দক্ষিণাকাশে।
সেদিকের পানির রক্তাভ আভা দূর হয়ে যাচ্ছে!
হয়ে উঠেছে স্ফটিক স্বচ্ছ!
অবাক অন্তরে শুকরিয়াতে সিজদাহরত হলাম,
জখম সারানোর সঠিক ওষুধ আমি পেয়ে গিয়েছি।
পুরো নদীকে ফের পবিত্র জলে বহমান করেই ফিরবো ইন শা আল্লাহ্।
মাশাআল্লাহ্! অসাধারণ একটি কবিতা। একরাশ মুগ্ধতা ছড়ানোর মতো। বেশ ভালো লিখেছেন আপু। শুভকামনা রইল আগামী দিনগুলোর জন্য।