লেখা: সুমন আহমদ
সকালে ঘুম থেকে জেগে চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানায় উঠে বসেছি। এমন সময় আমার ছোট বোন ছুটে এসে বলল, ভাইয়া! হাসি আপু আত্মহত্যা করেছেন। শুনেই আঁৎকে উঠলাম। আমার চাচাতো বোন হাসি। আমার থেকে দু’বছরের ছোট। কলেজের ছাত্রী। মনে প্রশ্ন জাগল, কেন আত্মহত্যা করবে সে?
ঘঠনা জানার জন্য তাদের বাড়িতে গেলাম। তখনও আঙ্গিনার বড় আম গাছটিতে হাসির লাশ ফাসির রশিতে ঝুলছে। সারা বাড়িতে কান্নার রোল পরে গেল। সবার মনে একই প্রশ্ন হাসি আত্মহত্যা করেছে কেন?
আমি লোকজনকে সরিয়ে বহু কষ্টে হাসির রুমে প্রবেশ করলাম। এক নজর সমস্ত ঘর দেখতে গিয়ে টেবিলের উপর চোখের দৃষ্টি আটকে গেল। বইগুলো এলোমেলো। মাঝখানে একটি ভাঁজ করা কাগজ দেখতে পেলাম।
কাগজটা হাতে তুলে নিলাম। ভাঁজ খুলতেই হাসির লেখা চোখে ভেসে এল- “সুমন ভাইয়া! যেহেতু আমাদের গ্রামের অধিকাংশ লোক মূর্খ তাই আপনার কাছে এই চিঠি যাবেই। এজন্য আপনাকেই ব্যাপারটা খুলে বলি। আমার আত্মহত্যার ফলে সকলেরই মনে প্রশ্ন জাগবে কেন আমি আত্মহত্যা করেছি? বাড়িতে কারও সাথে আমার ঝগড়া হয়নি। কারও উপর রাগও করিনি। তাই তাদের কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার নিজের। তাহলে শুনুন আমার আত্মহত্যার কাহিনি–
গত পরশু আমি কলেজে গেলাম। আমি ছাড়া আমার সকল বান্ধবি বোরকা পরে আসে, কিন্তু আমি বোরকা ছাড়া আধুনিক ষ্টাইলে আসি। সেদিনও আমার শরিরে ছিল খোলামেলা আধুনিক পোষাক।
দুপুর বেলা কিছু খাওয়ার জন্য শান্ত ও এপ্রু সহ প্রবেশ করলাম একটা হোটেলে। খাওয়ার মুহুর্তে আচানক আমার চোখ পরলো সামনের এক টেবিলে। দেখলাম আমাকে দেখে তিন বখাটে তাদের লালচে দাত বের করে হাসছে। লজ্জায় আমি লাল হয়ে গেলাম। শান্ত ও এপ্রুকে বললাম, তোরা খা আমি আসছি। একথা বলেই সেখান থেকে সরে কলেজে রওয়ানা হই।
তখন ভর দুপুর। তাই রাস্তায় তেমন লোকজনের চলাচল নেই। একাই হাঁটছি আর তিন বখাটে ছেলের কথা মন থেকে সরাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু যখনই বখাটে তিনটার লালচে পরা দাঁতগুলোর কথা মনে পরছে তখনই আমার গা জ্বলে পুরে যাচ্ছে।
প্রায় কলেজের গেটে চলে এসেছি, আকস্মাৎ ঘোলাটে গ্লাসের একটি মাইক্রো আমর পাশে এসে থামলো। মাইক্রোর দু’পাশের দরজা ধাক্কা মেরে বের হল দু’যুবক। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই মুখ চেপে ধরে মাইক্রোতে তুলে নিলো আমাকে। তাকিয়ে দেখলাম সেই তিন বখাটে। আমি চিৎকার দিলাম। কিন্তু তারা আমার মুখ তাৎক্ষনিক বেধে ফেলেছিল। তাই আওয়াজ বাইরে গেল না।
গাড়ি থামলো এক গুদাম ঘরের সামনে। তারা আমাকে পাজাকোলা করে নিয়ে গেল এক রুমে। তার পর শুরু করল আমার সাথে পাশবিকতা।আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, এই কুত্তার বাচ্ছারা! তোদের কি মা-বোন নেই? পারিসতো তোদের মা-বোনের সাথে এসব কর। কিন্তু তারা আমার কথার ব্যাঙ্গ উত্তর দিল।
প্রায় দু’ঘন্টা পর তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। তখন আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে গেছে। উঠে বসাবার মত শক্তি নেই। এমন পষান্ডতা কেউ কখনও করেছে কিনা আমার জানা নেই।
কিছুক্ষন পর একটা রিক্সা পেয়ে তাতে চড়ে বাসায় চলে এলাম। তার পর কোনো মতে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
মা আমার অস্বভাবিক অবস্থা দেখে কী হয়েছে জানতে চাইলেন। আমি অন্য কথা বলে কাটিয়ে দিলাম।
কিছুক্ষন পর শান্তর ছোট বোন কান্ত এসে আমার হাতে একটি কাগজ গুঁজে দিলো। তাতে লেখা–
হাসি,
তোকে যে বখাটে ছেলেগুলো মাইক্রোতে তুলে নিয়ে গেছে, সেটি রুকু আপুর কাছ থেকে জানলাম। রুকু আপু তা কলেজের ক্যাম্পাস থেকে লক্ষ করেছে। কিন্তু হাসি, আমাদের কিচ্ছু করার ছিলনা। ক্ষমা করিস। বোরকা পরলে হয়তো এমনটি হত না। আশা করি এবার থেকে বোরকা পরবি।
ইতি –
শান্ত।
এবার আপনিই বলুন ভাইয়া, কিভাবে আমি আমার এই লাঞ্চিতা আর ধর্ষিতা মুখ নিয়ে বান্ধবিদের সামনে দাঁড়াবো? আর বিশেষ করে, আমার বিয়ে হলে আমি আমার স্বামীকে কুমারী পরিচয় দিয়ে ঠকাতে চাই না। তাই আত্মহত্যা মহা পাপ জেনেও এই পথই বেছে নিলাম।
আর আমি জানি, সুমন ভাইয়া! আপনি এদেশের একজন আদর্শবান লেখক। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি, আমার এই কাহিটি বাংলার আনাচে-কানাচে পৌঁছে দিয়ে নারীজাতীকে সাবধান করে দিবেন- “হে বাংলার নারীগন! তোমরা পর্দা করো, বোরকা পরে বাইরে বের হও। নতুবা তোমাদের পরিনতিও এ হতভাগিনী হাসির মতই হবে। হাসি চায় না তার মত পরিনতি বাংলার অন্য কোনো নারীর হোক।”
ইতি
হতভাগিনী হাসি
পত্রটি পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। দু’চোখ বেয়ে দরদর করে অশ্রু নেমে এল। হায় হাসি, জীবন দিয়ে কেন এই শিক্ষা দিলে! জীবন থাকতে কেন এই শিক্ষা নিলেনা!
অসাধারণ ও শিক্ষামূলক একটি গল্প। বিশেষ করে শেষের দু’টো লাইন খুবই চমকপ্রদ। হাসি যদি শালীনতা বজায় রেখে পর্দার সাথে চলত, তাহলে অনেকটাই নরপশুদের কুদৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারত। তাকে দেখে শিক্ষা নিতে পারতো আরো অনেক মেয়ে।
খুবই ভালো লিখেছেন। বানানে বেশ ভুল আছে।
ফাসির- ফাঁসির।
শরিরে- শরীরে।
দাত- দাঁত।
আমর- আমার।
বেধে- বেঁধে।
বাচ্ছারা- বাচ্চারা।
বসাবার- বসবার।
পষান্ডতা- পাষাণ্ডতা।
কিছুক্ষন- কিছুক্ষণ।
কাহিটি- কাহিনীটি।
পরিনতি- পরিণতি।
শুভ কামনা রইল।
রোল পরে – পড়ে
শরিরে – শরীরে
চোখ পরলো – পড়লো
আমর – আমার
বাচ্ছারা – বাচ্চারা
বসাবার – বসবার
মত – মতো (তবে ভুল নয়)
অস্বভাবিক – অস্বাভাবিক
লক্ষ – লক্ষ্য
কাহিটি – কাহিনীটা
শিক্ষণীয় কাহিনী। বোরকা নারীদের সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখে। যে সৌন্দর্য স্বামী ব্যতীত অন্য কাউকে দেখানো উচিৎ নয়।
ইসলামী বিধানে পর্দা ফরয ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে অনেকেই সেই ফরযকে লঙ্ঘন করে চলছে।
আল্লাহ্, হাসির মতো তাদের তাওফিক দান করুন।
তবে মরার পরে নয়, বেঁচে থাকতে।
শুভ কামনা রইল।
অনেক ভালো লেগেছে
মুগ্ধকর লেখনী!কতো সুন্দর করেই না শিক্ষা প্রচার করলেন লেখক!?সত্যিই তো,শালীন পোষাক বা পর্দা নারীকে নিরাপত্তা দেয়।
হায়,একথা যদি সকলে বুঝতো!
বানানে কিছু ভূল রয়েছে,সংশোধন করে নেবেন।
আর শুভকামনা রইল আপনার জন্য