অনেকক্ষন যাবৎ ফোন বেজেই চলছে। কেউ ফোন উঠাচ্ছে না। অথচ বাড়িতে মানুষের অভাব নেই। চারদিকে গিজ গিজ করছে মানুষ। কিন্তু ফোনটার দিকে কারোরই নজর পরছে না। বাড়ির পরিবেশটা কেমন থম থমে হয়ে আছে। সবাই নিশ্চুপ। সবার চেহারাই মলিন। মলিন হওয়ার মত কারনও আছে। কাল বাড়িতে বিয়ে অথচ আজ বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো। পাত্র পক্ষ হুট করেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিলো। হয়ত বা সেই কারনটিই জেনে ফেলেছে তারা। এই জগৎ সংসারে মানুষকে সহযোগীতা করার জন্য লোক না পাওয়া গেলোও মানুষের দোষ-গুণ বলে বেরানো লোকের অভাব হয় না।
আনু চুপচাপ বসে আছে। তার কাছেও খবরটি এসে পৌছেছে। যদিও খবরটি খুবই দুঃখজনক কিন্তু তার কাছে তেমন কষ্টদায়ক মনে হচ্ছে না। সে নিজেও বুঝতে পারছে না তার খারাপ লাগছে না কেনো। হয়ত বা সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এই প্রথম যে তার বিয়ে ভেঙ্গেছে তা নয়, এর আগেও এমন বেশ কয়েকটা বিয়ে ভেঙ্গেছে তার। তবে এবারের বিয়েটা খুবই নিকটে এসে ভেঙ্গেছে। সবাই মনে করেছিলো এবার হয়ত বিয়েটা হয়েই যাবে।
আনু যখন ৮ বছর তখন তার এই রোগটি প্রথম ধরা পরলো। প্রথমে ডাক্তার বলছিলো চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে উঠবে। কিন্তু যতই সময় গড়ালো ততই রোগটি ভয়াবহ হয়ে উঠলো। এখন ত রোগের তিব্রতা এতই বেড়েছে যে যখন তখন তার রোগের আবির্ভাব ঘটে।
আস্তে আস্তে সমস্ত বাড়ি খালি হতে শুরু করলো। ২ দিন যেতে না যেতেই বাড়িটি জনশূন্য হয়ে পরলো। চারদিক নিরব, নিস্তব্ধ।কে বলবে এই বাড়িটিতে কাল বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। রহমান সাহেব তার রকিং চেয়ারটায় বসে আছেন। বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে রহমান সাহেব কিছু বলছেন না। তার মনে এক বিষাদের ভার পরে গেছে। তিনি কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। বিধাতা তার সাথেই বা এমন করছেন কেনো। কি পাপ করেছিলো তিনি। তিনি তার জীবনে একটাকা ঘুষ খেয়েছেন এমন কখনো হয় নি। তাহলে কেনই বা এমন হচ্ছে। বিধাতা কেনই বা তার সাথে এমন করছে।
আনু অনেকক্ষন যাবৎ তার বাবার সামনে বসে আছে। কিন্তু রহমান সাহেব তাকে কিছুই বলছেন না। রহমান সাহেব চোখ দুটি বন্ধ করে এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন। বয়সের ভার থেকে চিন্তার ভারই আজ তাকে বেশি বুড়ো করে তুলেছে। রহমান সাহেব চোখ বন্ধ করেই বললেন, তর ঐ ছেলেটির নাম কি ছিলো? আনু হকচকিয়ে গেলো। তারপর নিজেকে সামলে বললো,ফরহাদ। কি করে সে এখন? তেমন কিছু করে না। একটা ছোট স্কুলে চাকরি করে। ঠিক আছে। ওকে বলিস আমার সাথে দেখা করতে। আনু সভ্য মেয়ের মত বললো ঠিক আছে।
ঘড়িতে ৩টা বেজে গেলো। বরপক্ষ এখনও আসছে না। রহমান সাহেব খুবই চিন্তায় পরে গেলেন। এত সময় ত লাগার কথা না। কথা ছিলো ১টার মধ্যেই তারা চলে আসবে। তিনি বরপক্ষকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। আনু অনবরত কল করেই যাচ্ছে কিন্তু ঐপাশ থেকে কেউই কল ধরছে না। সবার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। কি হলো তাদের। কোনো দূর্ঘটনা ঘটে নি ত। চারদিকে নানা রকমের কথাবার্তা বলা শুরু হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে সময় বয়েই চললো। কিন্তু কোনো খবর আসছে না। রহমান সাহেব আবার তার হুইল চেয়াটায় গিয়ে বসে পরলেন। সময়ের প্রবাহে রকিং চেয়ারটি আস্তে আস্তে দুলতে লাগলো…
০ Comments